হোমপেজ স্লাইড ছবি
সুন্দরের গল্প

আবু জাফর সাদিক: চশমা পরা রোগাপাতলা এই মানুষটির নাম সুন্দর পিচাই। টাইম ম্যাগাজিনের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজন। সুন্দর পিচাই শুধু একটা নাম নয়, এখন একটা ব্র্যান্ড। এমন প্রতিভাবান একজন ব্যক্তির নানান সেবা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। পড়াশোনা ছাড়াও কর্পোরেট লাইফের জন্য অন্যতম এক আইডল হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁর অভুতপূর্ব কিছু পরিবর্তন আর সেবা প্রদানের মাধ্যমে। সুন্দর পিচাই নামটি অপরিচিত মনে হলেও গুগলের এই প্রধান নির্বাহীর তৈরি কয়েকটি সেবা আপনার খুব পরিচিত। গুগলের ক্রোম ব্রাউজার ও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে তাঁর। তো এই তারকার পরিচয় ছাড়া আজকের এই লেখা অসম্পূর্ণই রয়ে যাবে মনে হচ্ছে।
কে এই সুন্দর পিচাই?
পিচাই ১৯৭২ সালের ১২ জুলাই ভারতের চেন্নাইয়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম পিচাই সুন্দররাজন হলেও সংক্ষেপিত ‘সুন্দর পিচাই’ নামেই তিনি অধিক পরিচিত। তাঁর পিতা রঘুনাথ পিচাই একটি ব্রিটিশ সংস্থায় ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর মা হলেন লক্ষ্মী পিচাই। সন্তান জন্মানোর পূর্বে তিনি শ্রুতিলেখক হিসেবে কাজ করতেন। শিক্ষা-দীক্ষায় সবাই অগ্রসর হলেও পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না তেমন।
স্কুলের পড়া শেষ করে খড়্গপুর আইআইটি থেকে মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বি-টেক করেন তিনি। উচ্চশিক্ষার জন্য এরপর মার্কিন মুলুকে পাড়ি দেন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএস করে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ার্টন স্কুল থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ডিগ্রিও হাসিল করেন পিচাই। সেখানে তিনি সিবেল স্কলার–সহ পামার স্কলারও হন।
যেভাবে হলেন তিনি গুগলের CEO
২০০৪ সালে গুগলে যোগ দেওয়ার আগে তিনি বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করতেন। এরই মধ্যে ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানিতে পরমার্শদাতা হিসেবে ছিলেন তিনি। বিল গেটস বা স্টিভ জবসের মত হয়ত একডাকে তাঁকে চেনেন না সকলে। কিন্তু, গুগলের CEO হিসেবে তাঁর নাম সামনে আসতেই আজ আমাদের অনেকেরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন ৪৬ বছর বয়সী সুন্দর পিচাই। গুগলে ইন্টারভিউ দিতে এলেন যেদিন, কাকতালীয়ভাবে দিনটি ছিল গুগলের ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় একটি মুহূর্ত- ২০০৪ সালের সেই দিনটিতেই জিমেইল চালু করে গুগল! ইন্টারভিউতে নিজের জাত চেনাতে সময় নেননি পিচাই, প্রথম দফাতেই চাকরি পেয়ে গেলেন। জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে গুগলের সার্চ টুলবারকে উন্নত করার জন্য নিয়োজিত ছোট একটি দলে কাজ শুরু করার মাধ্যমে। তবে গুগলে যোগ দেওয়ার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি পিচাইকে।
গুগলের সার্চ টুলবারে দারুণ কিছু আইডিয়া যোগ করে গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সার্গেই ব্রিনের নজরে চলে আসেন তিনি। সুযোগটি কাজে লাগাতে দেরি করেননি পিচাই, তাঁদের অনুমতি আদায় করে গুগলের নিজস্ব ব্রাউজার তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন কাজে।
ফলাফলটাও সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার মত। মাইক্রোসফটের ইন্টারনেট ইক্সপ্লোরার আর মজিলা ফায়ারফক্স এর মত অন্যতম জনপ্রিয় ব্রাউজারকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যান তিনি। তাঁর অন্যতম বড় অবদান; সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই গুগল ক্রোম। ২০০৮ সালে তাঁর নেতৃত্বেই বাজারে আসে এটা। ঠিক একই ধারাবাহিকতায় তিনি বাজারে ক্রোমের সিরিজ হিসেবে আরও আনেন, ক্রোম ওএস, ক্রোমবুকস ও ক্রোমকাস্ট। ক্রোমের কৃতিত্বের পুরস্কারস্বরূপ সে বছরই পণ্য উন্নয়ন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন সুন্দর। চার বছরের মাথায় ক্রোম ও অ্যাপ বিভাগের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট বনে যান তিনি।
২০১৩ এর শুরুর দিকে অ্যান্ড্রয়েডের জনক ও প্রধান অ্যান্ডি রুবিন কর্মস্থল ছাড়লে ল্যারি পেজ সুন্দর পিচাইকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন। তাঁর কাছে গুগলের অবস্থান সবকিছুর ঊর্ধ্বে আর, গুগলের প্রতি দায়িত্বে তিনি এতটাই আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান ছিলেন যে, টুইটার, মাইক্রোসফট ইত্যাদি কোম্পানি থেকে অনেকবার লোভনীয় বেতনের চাকরির প্রস্তাব পেয়েও সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সফলতা ও সততার প্রতিদানস্বরূপ ২০১৪ সালের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে ল্যারি পেজের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড, অর্থাৎ গুগলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ ‘প্রোডাক্ট চিফ’ ঘোষিত হন সুন্দর।
তাঁর প্রোমোশনের দিন ঘোষণাপত্রে সুন্দরকে ল্যারি পেজ উল্লেখ করেন ‘পারফেক্ট ফিট ফর দিস রোল’ (ওর চেয়ে ভাল আর কেউ হতে পারতো না এই পদে’)।
অনুমিতভাবেই ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট গুগলের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)-ঘোষিত হন সুন্দর।