চলতি হাওয়াজাতীয়
অন্যরকম এক প্রধানমন্ত্রীর গল্প

আরিফুল আলম জুয়েল: ডা: লোটে শেরিং, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী! লোটে শেরিংয়ের সাথে বাংলাদেশের খুব গভীর একটি যোগাযোগ রয়েছে। কেননা, তিনি ডাক্তারি পড়েছেন বাংলাদেশেরই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। ১৯৯১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের এই চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হয়ে আসেন তিনি। অন্যান্য সহপাঠী, এবং ভুটানের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী টান্ডি দর্জির সাথে তার নিবাস ছিল ময়মনসিংহ জেলা শহরের বাঘমারা কলেজ হোস্টেলের ২০ নম্বর রুমে। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ ৮ বছর ময়মনসিংহেই কাটান শেরিং।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে জেনারেল সার্জারি নিয়ে শেরিং এফসিপিএস করেছিলেনও বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেই। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি কিছুদিন তিনি হাতে-কলমে কাজ করেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। মাদার তেরেসার বিশাল বড় ভক্ত শেরিং ২০১৯ এর এপ্রিলেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে আসেন এক বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সেখানে তিনি নিজের সহপাঠী, ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্দেশে বাংলায় এক অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি নিজের শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন স্মৃতিচারণা করেন।
এতক্ষণ লোটে শেরিং এর কথা বললাম, কারন এবার বলবো লোটে শেরিং এর দেশ ভুটানের করোনায় কি অবস্থা সেটা নিয়ে! আসুন দেখি আর উজ্জীবিত হই। করোনার জীবানুবাহী ব্যক্তি সনাক্ত হয়েছে ভুটানে- এই খবর আসামাত্রই মাস্ক জীবাণুনাশক কিনতে ফার্মেসিগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। ইতিমধ্যে দেশটির রাজধানী থিম্পুর বেশিরভাগ ফার্মেসিতেই মাস্ক ও জীবাণুনাশকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবেলায় শহরটির অনেক জায়গায় বিনামূল্যে জীবাণুনাশক বিতরণ করছে ভুটান সরকার। গত শুক্রবার দেশটিতে ভারত থেকে যাওয়া এক মার্কিন পর্যটকের শরীরে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এর পর পরই আতঙ্কিত মানুষ থিম্পুর ফার্মেসিতে ভিড় করতে থাকেন।
অতিরিক্ত চাহিদার কারণে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অনেক ফার্মেসি বা দোকানের মাস্ক ও জীবাণুনাশক ফুরিয়ে যায়। এ কারণে শনিবার শহরটিতে বিনামূল্যে জীবাণুনাশক বিতরণ করা হয়। আর এ কাজে যোগ দেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং নিজেই। রাস্তায় দাড়িয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিলি করছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনি একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ভুটানের রাজধানী থিম্পুর রাস্তায় নেমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিলি করছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং। নিজে হাত ধুয়ে এ কর্মসূচি পালন করছেন এবং সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে আহ্বান করছেন। করোনা প্রতিরোধে এ জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে চর্চা হচ্ছে। লোটে শেরিং তো সবাই হয় না, সবাই হতে ও পারে না।
কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংকটময় সময়টাতে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী ঠিকই রাস্তায় নেমে এসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিলি করছেন- ভাবা যায়! আমরা ও চাই রাজনীতিবিদরা রাস্তায় না নেমে আসুক, অন্তত: দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সচেতনতা কিংবা সাবধানতার কথাগুলো যেন বলুক নিজ নিজ দায়িত্বের জায়গা থেকে। মানবতার জয়গান গাওয়া লোটে শেরিং সরকার প্রধানের গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রোগী দেখতে ঠিকই ভুলেন না! প্রধানমন্ত্রী ডা: লোটে শেরিং, যার কোন ছুটি নেই!