বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
আজম খান: যার গিটার বাজতো বন্দুকের মত!

মিজানুর রহমান টিপু: স্টেনগান হাতে ছেলেটাকে কী চেনা যায়? এই সেই ছেলে যিনি মুক্তিযুদ্ধের পরে হাতে গীটার তুলে গেয়েছিলেন, ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ গানটা। যে মানুষটা ‘গুরু’ নামেই বেশি পরিচিত। যে মানুষটা অসাধারণ হয়েও সাধারণ থাকতে ভালোবাসতেন।
একজন গায়ক, মুক্তিযোদ্ধা, জীবন সংগ্রামের এক নির্লোভ সৈনিক। তিনি ভক্তদের কাছে পরিচিত ছিলেন পপগুরু নামে। তার হাত ধরেই বাংলা গানে পাশ্চাত্যের ঢং লেগেছিল, বিশ্ব সংগীতে বাংলা গান খুঁজে পেয়েছিল নতুন মাত্রার আশ্রয়। তাই তাকে বাংলাদেশের পপ সংগীতের অগ্রদূত হিসেবে ‘পপগুরু’ বলা হয়। তিনি আজম খান।
দেশীয় ফোক ফিউশনের সাথে পাশ্চাত্যের যন্ত্রপাতির ব্যবহার করে বাংলা গানের এক নতুন ধারা তৈরি করেছিলেন তিনি। সেই ধারায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এ দেশীয় ব্যান্ড সংগীত।
আজম খানের পরিচয় এখানেই থেমে থাকেনি। রক্তে বারুদের উত্তাপ নিয়েই হয়তো জন্মেছিলেন। জন্মভূমিকে মুক্ত করে জুটে গেলেন স্বাধীনতা পরবর্তী আরেক মুক্তির আন্দোলনে। বাংলা গানের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের আরেক সংগ্রাম। । তিনি আমাদের প্রথম সত্যিকারের রকস্টার। তাঁর সাবলীল বোহেমিয়ান কণ্ঠে ধ্বনিত হয় হার্ড, মেলো, ক্ল্যাসিক রক আর পপ ঘরানার সংগীত। তাঁর কণ্ঠেই সূচিত হয় বাংলা সঙ্গীতের প্রথা ভাঙ্গার সোনালি দিন। তিনি ছালেকা মালেকা, বাংলাদেশ, পাপড়ি, আলাল দুলাল, হাইকোর্টের মাজারে, আসি আসি বলে, আমি যারে চাইরে, আর দেখা হবে না, অনামিকার মত অজস্র কালজয়ী জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছিলেন
বাংলাদেশের জন্ম যাদের ত্যাগের বিনিময়ে হয়েছে আদতে তাঁরা কিছুটা ক্ষ্যাপাটেই ছিলেন। তা না হলে তো পৃথিবীর বুকে নতুন মানচিত্র, পতাকা আর নিজস্ব ভাষা প্রতিষ্ঠা কোন সহজ বিষয় ছিল না। এই ক্ষ্যাপাদের মাঝে একজনকে আমাদের চিনতে হয়েছে ভিন্ন গভীরতায়। এই উপমহাদেশে তাঁর পরিচয় আজম খান নামে। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঘর ছেড়েছিলেন। সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন সেক্টর দুইয়ের অধীনে। এই অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যু উপত্যাকা থেকে ঘরে ফিরেছেন আমাদের জন্য একটা স্বাধীন মানচিত্র নিয়ে।
তারই উত্তরসূরি আরেক কিংবদন্তী শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন “একাত্তরে তাঁর বন্দুক বেজেছিল গিটারের মত আর তারপর তাঁর গিটার বেজেছে বন্দুকের মত”।
দেরিতে হলেও এবারের একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন বাঙালি সংগীতপ্রেমীদের গুরু প্রয়াত পপ শিল্পী আজম খান। সংগীতে সামগ্রিক অবদানের জন্য এই পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি। মৃত্যুর প্রায় আট বছর পর পপ সংগীতের এ গুরুকে দেওয়া হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা পদক। গুরু ভালো থাকুক বাঙালির ভালোবাসায়, প্রার্থনায়।