বিদেশ
আবুধাবিঃ মরুভূমির বুকে স্বর্গ!

মঞ্জুর দেওয়ান: বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের চোখ এখন আবুধাবিতে ! কিন্তু কেন? কারন টা ও সবার জানা! এশিয়া কাপের অলিখিত সেমিফাইনালে বাংলাদেশ মুখোমূখি পাকিস্তানের আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে। এশিয়া কাপের বেশির ভাগ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আবুধাবীতে। ক্রিকেটীয় কারণ ছাড়া ও ইতিমধ্যেই আবুধাবি পরিণত হয়েছে বিলাসী পর্যটকদের স্বর্গে।
চলুন জেনে নেই আবুধাবির সাতকাহন । আরবী শব্দটির অর্থ নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও ’ফাদার অব দ্য গ্যাজেল’ বা হরিণের পিতা নামে চিনে থাকেন সবাই। আবু ধাবি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী। আমিরাতের ৭ টি শহরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আবুধাবি। ১২০০ কিলোমিটার আয়তনের শহরটিতে বাস প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মানুষের। ১৯৬০ এর দশকে যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার!
সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশটি একসময় ছিল দরিদ্র জনবসতি। কালের পরিক্রমায় আবুধাবি এখন পৃথীবির বিলাসবহুল শহরগুলোর মধ্যে একটি।অথচ মাত্র ১০০ বছর আগেও আবুধাবির চিত্র ছিল ভিন্ন। মরুর দেশটি তার ভাগ্য পরিবর্তনের জাদুর কাঠি খুঁজে পায় সাগরের বুকে। ১৯ শতকের শুরুতে আমিরাতের সাগরে পাওয়া যেত পৃথিবীর সবচেয়ে দামী মুক্তো। তখনকার সময়ে মুক্তোই ছিল অর্থনীতির মূল শক্তি। তবে এই বাণিজ্য খুব বেশি সময় ধরে রাখতে পারেনি আবুধাবি। প্রযুক্তির মারপ্যাচে পড়ে বন্ধ করতে হয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে উজ্জ্বলতম মুক্তোর ব্যাবসা। জাপানের কৃত্রিম মুক্তোর কাছে পেরে উঠেনি আরব দেশটি। প্রয়োজনের তাগিদে আবুধাবিকে নতুন করে ঠিকই আবিষ্কার করে নিয়েছিল আমিরাতের জনগোষ্ঠি। সাগরে পাওয়া মুক্তোর চেয়েও অনেক দামী জিনিসের সন্ধ্যান পায় মাটির নীচে। খুঁজে পায় মহামূল্যবান খনিজ তেল। আবুধাবির মূল চালিকাশক্তি এখন এই খনিজ তেল। যা এখন আলাদিনের জাদুর চেরাগের মতো ইচ্ছা পূরণ করছে! আর এই আধুনিক আবুধাবির রূপকার জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। জায়েদ বিন সুলতানের হাত ধরেই রাতারাতি ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে আবুধাবির। আরব উপদ্বীপের ছোট রাষ্ট্রগুলোকে এক করে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন জায়েদ বিন সুলতান।
খনিজ তেলে টইটুম্বর আবুধাবি নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি তো নেই-ই বরং তা বেড়ে চলেছে দিনকে দিন। মরুর বুকে গড়ে উঠা শহরটিতে প্রতিদিনই ঘুরতে আসেন হাজারো মানুষ। চাহিদার কথা মাথায় রেখে নিয়মিতভাবে তৈরি হচ্ছে ভিন্ন জিনিস। ’আবুধাবি ২০৩০’ প্রকল্পকে সামনে রেখে বিলাসবহুল হোটেল, আকাশচুম্বি ভবন, মসজিদ এমনকি স্টেডিয়াম নির্মাণে নজরকাড়া ভূমিকা রেখেছে শহরটি।
আবুধাবির অন্যতম সেরা স্থাপনা এমিরেটস প্যালেস হোটেল। প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হোটেলটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাত প্রধান নেতা সাক্ষাতের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এছাড়া পৃথীবির সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফার অবস্থান এই আবুধাবিতে। ধুরতে আসা ধনকুবেরদের জন্য ক্যাপিটাল গেট হোটেলের কদরও বেশ চোখে পড়ার মতো।
সম্প্রতি খেলাধুলা বিষয়ক স্থাপনা দিয়ে নতুন করে পরিচিতি লাভ করছে আবুধাবি। যার মধ্যে গলফ, কার রেসিং, ক্রিকেট অন্যতম।
ফর্মূলা ওয়ান রেসিংযের জন্য বিশ্বের বুকে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে আবুধাবি। ২০০৯ সালে নির্মিত রেস কোর্সটির কারণে সুনাম কুড়িয়েছে মরুর শহরটি। ইয়েস দ্বীপে অবস্থিত রেসকোর্সটি ধনকুবেরদের জন্য নির্মিত হয়েছে বললে ভুল হবেনা। ইয়েস দ্বীপে আগত অতিথিরা রেসকোর্সে আসতে পারেন ব্যক্তিগত প্রমোত তরীতে করে। এছাড়া হোটেল রুমে বসে রেসিং দেখার সুবিধা রেখেছেন কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বমানের গলফ কোর্সের মাধ্যমেও পরিচিতি আছে আবুধাবির। ইউরোপিয়ান গলফ চ্যাম্পিয়নশিপের সফল আয়োজন করে এরইমধ্যে সামর্থের প্রমাণ দিয়েছে আবুধাবি।
ক্রিকেট বিশ্বের কাছেও এখন পরিচিত নাম আবুধাবি। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ থেকে শুরু করে প্রিমিয়ার আয়োজেনের স্বাদ নিয়েছে আবুধাবি। অষ্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বাঘা বাঘা দল সিরিজ খেলেছেন এখানে। সম্প্রতি এশিয়া কাপ ২০১৮ এর আয়োজন দিয়ে বাংলাদেশিদের কাছেও বেশ পরিচিত নাম তপ্ত শহরটি!