বিনোদন
ইতি তোমারই ঢাকা : অপরাধ, যন্ত্রণা আর অবিশ্বাসের রোজনামচা

হাসান মাহবুব: বাংলাদেশের প্রথম এ্যান্থোলজি ফিল্ম “ইতি তোমারই ঢাকা’তে মোট ১১টি গল্প আছে ১১ জন পরিচালকের। প্রায় প্রতিটাতেই আপনি জানতে পারবেন ঢাকা শহরের বসবাসের যাতনা, অবিশ্বাসের রোজনামচা, আর অপরাধপ্রবণতা।
শুরুতে নুহাশ হুমায়ূনের গল্পটি আপনাকে বেশ গতির অনুভূতি দেবে। তার পরিচালনায় সিনেমাটিক কমার্শিয়াল এলিমেন্ট যথেষ্ট আছে, যা অত্যন্ত উপভোগ্য। সিনেমা জগতের একজন এক্সট্রার গল্পটি আনন্দ এবং বিষাদ দুটোই উপহার দেবে। পরের গল্পটি যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত মনে হয়নি। তবে অর্চিতা স্পর্শিয়ার দূর্দান্ত পারফরমেন্স মনে থাকবে। কাহিনীতে চাইলে খুঁত ধরা যাবে, কিন্তু বান্ধবীকে নিয়ে প্রেমিকের বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ নিতে এ্যাডভেঞ্চারটায় মজা পাবেন।
সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিলো ButtFiXx ওরফে রাহাত রহমানের গল্পটি নিয়ে। সেটা একেবারে সুদে আসলে উশুল হয়েছে। অপরাধ জগতের তারকা হতে চাওয়া এক কিশোরের কর্মকান্ড হাস্যরসের খোরাক যোগাবে, সিনিয়র মাস্তানরা যথেষ্ট ভীতিকর, আর শেষের দৃশ্যটায় কমেডির সাথে মেটাফরের সংযোগ চমৎকার! যে র্যাপ গানটি ছিলো সেটা পুরাই রকিং! সিনেমার মূল আকর্ষণ এই প্রথম তিনটিই।
“সাউন্ডস গুড” নামে যে গল্পটি আছে, সেটাতে সিনেমার একজন শব্দ প্রকৌশলীর বাড়তি সব শব্দ শুনতে পারার ক্ষমতা, এই কনসেপ্ট ভালো লাগলেও এক্সিকিউশন প্রচণ্ড ক্লিশে। মূল চরিত্রের অভিনয় বাজে। শেষ গল্প যুঁথি খুবই হতাশ করেছে। সেই হোটেল ডেট, প্রেমিকের প্রতারণা, এসব নিয়ে আর কত?
মিশ্র প্রতিক্রিয়া “জিন্নাহ ইজ ডেড” নিয়ে। বিহারী কলোনির বাঙালি হতে চাওয়া এক লোকের মানসিক দোলাচল নিয়ে দূর্দান্ত এক গল্প ছিলো এটা। প্রচুর ডিটেইলস আছে, কলোনির পরিবেশ দারুণভাবে এসেছে। কিন্তু গ্রস এলিমেন্ট অনেক বেশি। বিহারী মেথরের মল বিষয়ক কথাবার্তা এত বেশি কেন বুঝলাম না। ক্লোজআপে মেথরের সন্তানের মল এবং লো কমোডের ভেসে থাকা বস্তু দেখিয়ে মূল থিমটি হালকা করে ফেলা হয়েছে। দর্শক অবশ্য হেসেছে প্রচুর!
এম ফর মানি এন্ড মার্ডার নিয়ে কথা বলা যায়। এটি সাদাকালোতে নির্মিত একমাত্র ছবি পুরো সিনেমাতে। সাসপেন্স চমৎকার, তবে গল্পটা নিরেট না। ১১টি গল্পের চারটিতেই প্রেমিক প্রেমিকার অবিশ্বাস, তিনটিতে গোপন ভিডিও টেপের বিষয়গুলি বোরিং। বারবার হাতিরঝিল লোকেশনে শুট করারই বা কী দরকার ছিলো এত!
তবে ভালো মন্দ সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলা সিনেমার নতুন দিন শুরু হবে এই নবীন পরিচালকদের হাত ধরে। বাংলা সিনেমার এই নবীন কান্ডারীদের উৎসাহ দিতে হলেও দেখতে পারেন বাংলাদেশের প্রথম এ্যান্থোলজি ফিল্ম “ইতি তোমারই ঢাকা’