জাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: বাঙালির মুক্তির দিশারী

শারফিন শাহ: যখন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম হয় তখন তার দাদাঠাকুুর বললেন : এই রে আমাদের একখানা ‘এঁড়ে বাছুর’ হলো! ঈশ্বরের পিতা গোয়াল ঘরে খোঁজ নিয়ে দেখলেন এঁড়ে বাছুর বলতে কিছুর জন্ম হয়নি। তখন দাদাঠাকুর হেসে বললেন: ওহে পুত্র ওই এঁড়ে বাছুরটা তোর পুত্র। তোর একখানা পুত্রের জন্ম হয়েছে! সত্যিকার অর্থেই দাদাঠাকুর ঠিকই বলেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন খুবই একগুঁয়ে, গোঁয়ার ও ডানপিটে স্বভাবের। সারাজীবন তিনি নিজের মতো চলেছেন। আত্মমর্যাদা কখনো বিসর্জন দেননি।
তিনি দরিদ্র ঘরেই জন্মেছিলেন। কিন্তু নিজের প্রতিভা ও মনুষ্যত্বের ওপর ভর করে বাঙালির মুক্তির দিশারী হয়ে ওঠেছেন। তিনি শিক্ষক, লেখক, সমাজ সংস্কারক, মানবতাবাদী, দরদী, নীতিবান, পরিশ্রমী, প্রতিবাদী, আত্মমর্যাদাবান, নির্মোহ, নির্লোভ, উদারপন্থীসহ অশেষ গুণের আধার। সমাজের কল্যাণচিন্তা করতে গিয়ে নানাভাবে গোঁড়া ধর্মবাজদের আক্রমণের স্বীকার হয়েছেন কিন্তু পিছু হটেন নি। তার চিন্তা ও কর্মের ফসল আজ বাঙালি ভোগ করছে। ঈশ্বরচন্দ্র কোথাও কখনো কোন ধর্ম নিয়ে টু শব্দ করেনি।
তিনি ধর্মকে কর্মে রূপান্তরিত করেছিলেন। তাই আজ তার জন্মের দুশো বছর পূর্তিতেও তিনি প্রাসঙ্গিক ও আলোচিত। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাকে ‘একজন সেরা বাঙালি’রূপে আখ্যায়িত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ তো তাকে নিয়ে পুরো একটি বই লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন : ‘প্রতিভা মানুষের সমস্তটা নহে, তাহা মানুষের একাংশমাত্র। প্রতিভা মেঘের মধ্যে বিদ্যুতের মতো; আর, মনুষ্যত্ব চরিত্রের দিবালোক, তাহা সর্বত্রব্যাপী ও স্থির।
প্রতিভা মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ অংশ; আর, মনুষ্যত্ব জীবনের সকল মুহূর্তেই সকল কার্যেই আপনাকে ব্যক্ত করিতে থাকে। প্রতিভা অনেক সময়ে বিদ্যুতের ন্যায় আপনার আংশিকতাবশতই লোকচক্ষে তীব্রতররূপে আঘাত করে এবং চরিত্রমহত্ত্ব আপনার ব্যাপকতাগুণেই প্রতিভা অপেক্ষা ম্লানতর বলিয়া প্রতীয়মান হয়। কিন্তু চরিত্রের শ্রেষ্ঠতাই যে যথার্থ শ্রেষ্ঠতা, ভাবিয়া দেখিলে সে বিষয়ে কাহারো সংশয় থাকিতে পারে না।’ [বিদ্যাসাগরচরিত/রবীন্দ্রনাথ ]
রবীন্দ্রনাথের বিদ্যাসাগর মূল্যায়নের ওপর আর কিছু হতে পারেনা। সেক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়, বিদ্যাসাগর প্রকৃত অর্থে প্রতিভাবান যেমন ছিলেন, তেমন মানুষও ছিলেন। বিদ্যাসাগরের কর্ম ও সাধনা বাঙালির ওপর ছড়িয়ে পড়ুক। তার দ্বিশত জন্মদিনে এটাই প্রত্যাশা।