প্রযুক্তিহোমপেজ স্লাইড ছবি
উইকিপিডিয়া কিংবা তথ্যের মহাসুমদ্র

মঞ্জুর দেওয়ান: আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, মাদাগাস্কারের রাজধানীর নাম কি? কিংবা যদি জিজ্ঞেস করা হয় ঘানার মুদ্রার নাম কি? সম্রাট আকবরের দাদার নাম-ই বা কি? এই প্রশ্নের উত্তরগুলো না জানা থাকলে কি করবেন? তিনটি ভিন্নধর্মী প্রশ্নের উত্তর বই খুঁজে পাওয়া কিছুটা দিগদারি ব্যাপার বৈকি! কিন্তু যদি উইকিপিডিয়া থাকে! বিশেষ কিছু না ভেবে তথ্যগুলোর নির্ভরযোগ্য উত্তর পেতে ঢুকে যাবেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্ঞানকোষে!
উইকিপিডিয়া এমন এক তথ্যভান্ডার যা আপনাকে প্রায় সবধরনের তথ্য দিতে প্রস্তুত। আপনার খ্যাতি যদি দুনিয়াজোড়া হয়, তাহলে নিজের সম্পর্কে জানতেও উইকিপিডিয়ার সাহায্য নিতে পারেন! কারণ আপনার জীবনের অনেক কিছু আপনার মনে না থাকলেও উইকিপিডিয়ার ঠিকই মনে থাকবে ! শুনতে কিছুটা অভাবনীয় শুনালেও দীর্ঘদিন ধরে এটাই হয়ে আসছে। বিশেষ করে পরিসংখ্যান কিংবা ইতিহাস নির্ভর বিষয়ে তো উইকিপিডিয়ার জুড়ি নেই বললেই চলে। দুনিয়াজুড়ে যারা তথ্যের ভাণ্ডার ছড়িয়ে দেয়া উইকিপিডিয়ার ইতিহাস সম্পর্কে জানবো এবারের আয়োজনে।
উইকি ও এনসাইক্লোপিডিয়া নামক দুটি শব্দ থেকে উইকিপিডিয়ার নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে বড় ও নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স সাইট এটি। যা পৃথিবীব্যাপি মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেটাবেস তৈরি করে আসছে। যেকোন ব্যবহারকারীই যেকোনো ধরনের কন্টেন্ট যুক্ত করার স্বাধীনতা রাখে। বর্তমানে অ্যালেক্সা র্যাংকিংয়ে পৃথিবীর সেরা পাঁচ ওয়েসবাইট, উইকিপিডিয়ার যাত্রা হয়েছিলো নিউপিডিয়া নামক একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে। ইংরেজি ভাষার মুক্তকোষ হিসেবে যেখানে অভিজ্ঞরা লিখে থাকতেন। ২০০০ সালের ৯ মার্চ থেকে যা বমিস নামের একটি ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। যার নেপথ্যে ছিলেন বমিসের নির্বাহী পরিচালক জিমি ওয়েলস এবং প্রধান সম্পাদক ল্যারি স্যাঙ্গার। যাদের হাত ধরে পরবর্তীতে উইকিপিডিয়ার যাত্রা শুরু হয়।
যেকোনো আর্টিকেল প্রকাশের ক্ষেত্রে নিউপিডিয়া দুটি নিয়ম অনুসরণ করতো। নিরপেক্ষ কোনো আর্টিকেল না হলে তা প্রকাশ করা হতো না। এছাড়া বিতর্কিত কিংবা যেটা মতভেদ আছে, সে ধরনের কোনো কিছুই প্রকাশ করা হবে না। একাধিক পক্ষের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করার পর নেয়া হবে প্রকাশের সিদ্ধান্ত। এছাড়া নিউপিডিয়ায় কোনো লেখা-ই একজন লেখক দ্বারা রচিত নয়। প্রতিটি লেখা-ই একাধিক লেখকের দ্বারা লেখা হবে। মজার ব্যাপার হলো, সম্মিলিত প্রচেষ্টার এই লেখার জন্য কোন লেখক-ই কৃতিত্ব পাবেন না ! এতো এতো নিয়মের বেড়াজালের কারণে নিউপিডিয়ার প্রসার হচ্ছিলো অনেকটা কচ্ছপ গতিতে! ২০০০ সালের জুলাইয়ে প্রথম আর্টিকেল প্রকাশ হলেও ২০০০ সালের শেষ নাগাদ মাত্র ২৫ টি আর্টিকেল প্রকাশ করতে সমর্থ হয় নিউপিডিয়া! ফলে নতুন করে ঢেলে সাজানোর বিকল্প ছিলো না প্রতিষ্ঠানটির।
নিউপিডিয়ার মতো এতো এতো নিয়মের যেন বেড়াজাল না থাকে, সেটি মাথায় রেখে ২০০১ সালের ১৫ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে উইকিপিডিয়া। নিউপিডিয়ার অংশ হলেও একেবারে স্বাধীনভাবে কাজ করতে থাকে উইকিপিডিয়া। নিউপিডিয়ার মতো কড়া নিয়ম না থাকায় এর কন্টেন্ট দিন দিন বাড়তে থাকে। শুরুর মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে এর আর্টিকেলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০০ তে। দিন দিন গাণিতিক হারে বাড়তে থাকে এ কন্টেন্টের সংখ্যা। মে মাসে উইকিপিডিয়ার আর্টিকেলের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় চার হাজারে !
উইকিপিডিয়ার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার পেছনে গুগলের বড় ভূমিকা রয়েছে। উইকিপিডিয়ার আর্টিকেল এতোটাই সমৃদ্ধ যে, সুনির্দিষ্ট কােন বিষয়ে খোঁজ করলে গুগল প্রথমে উইকিপিডিয়াকে সুপারিশ করে। পৃথিবীর ৩০৩ টি ভাষায় উইকিপিডিয়ার পদচারণা রয়েছে। সবমিলিয়ে চারকোটিরও বেশি আর্টিকেল রয়েছে উইকিপিডিয়ায়। এর মধ্যে বহুল প্রচলিত ইংরেজি আর্টিকেলের সংখ্যা প্রায় ৫৯ লাখ। ২০০৪ সালে বাংলা ভার্সনে যাত্রা শুরু করে বাংলা কন্টেন্টকেও সমান জনপ্রিয় করে তুলেছে উইকিপিডিয়া। ষাট হাজারেরও বেশি বাংলা আর্টিকেল দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছে ইন্টারনেটের এই মু্ক্ত জ্ঞান কোষ।
১৮ বছর আগে শুরু হওয়া উইকিপিডিয়া এখন পৃথিবীর বহুল ব্যবহৃত ওয়েবসাইটের মধ্যে একটি। অ্যালেক্সা র্যাংকিংয়ের পাঁচ নম্বরে রয়েছে জিমি ওয়েলসের প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিমাসে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী উইকিপিডিয়া ব্যবহার করছেন। ৮ কোটিরও বেশি রেজিস্টার্ড ব্যবহারকারী নিয়ে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে মুক্ত জ্ঞান কোষের সাইটটি।