আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণচলতি হাওয়াজাতীয়ট্রেন্ডিং খবরহোমপেজ স্লাইড ছবি
উইল কনোলির অন্যরকম প্রতিবাদ

বাশার আল আসাদ: প্রতিবাদের কতো রকমই না রূপ থাকে। কিন্তু এবার একটা অদ্ভুত ধরনের প্রতিবাদ জানিয়ে সারা দুনিয়ায় আলোচনায় এসেছে অস্ট্রেলিয়ান এক বালক। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দু’টি মসজিদে হামলা চালায় এক শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী। তাতে প্রাণ হারান ৫০ জন নিরীহ মানুষ। কিন্তু হামলাকারীর সমালোচনার বদলে, গোটা ঘটনার জন্য মুসলিম অভিবাসী ও শরণার্থীদেরই দায়ী করেন অষ্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের সেনেটর ফ্রেজার অ্যানিং। অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ফ্রেজার অ্যানিং নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলার ঘটনায় বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তার মাথায় ডিম ভেঙে রীতিমতো তারকা বনে গেছেন ‘ডিম বালক’ নামে ভাইরাল হয়ে উঠেছেন ১৭ বছরের এক তরুণ উইল কনোলি। আলোচিত উইল কনোলি অস্ট্রেলিয়ারই বাসিন্দা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে উপাধি দেওয়া হয়েছে ‘এগ বয়’ বা ‘ডিম বালক’ নামে। ওই ঘটনার পর ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে তার ফলোয়ার সংখ্যা হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তার ফলোয়ার সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে।
মেলবোর্নের মোরাবিনে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় কট্টর এ অস্ট্রেলিয়ান সিনেটরের মাথায় ডিম ফাটিয়ে প্রতিবাদ জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে অ্যানিং কথা বলার সময় তার পেছনে এই তরুণ দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ করেই তার বাঁ-হাতে মোবাইল ধরে ডান হাতে অ্যানিংয়ের মাথায় একটি ডিম ফাটিয়ে দেন। এর একটু আগে সে তার মোবাইলে ভিডিও করা শুরু করে। ডিম ছোড়ার পরও নির্বিকার ভঙ্গিতে ভিডিও করে যাচ্ছিল উইল কনোলি। হতবাক অ্যানিং পেছনে ঘুরে তরুণের মুখে চড় মারতে শুরু করলে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় পাশে থাকা লোকজন ওই তরুণকে মাটিতে চেপে ধরে, অন্য একজন অ্যানিংকে সরিয়ে নেয়। উইল কনোলিকে আটক করা হলেও কোনো অভিযোগ না এনেই পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে আরও তদন্তের পরে ঠিক করা হবে, এই ঘটনায় কোনো অভিযোগ গঠন করা হবে কিনা। মুক্তির পর টুইটারে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় উইল বলেছেন, ‘রাজনীতিকদের ডিম মারবেন না। এতে আপনাকে ৩০ জন নিম্ন শ্রেণির লোককে মোকাবেলা করতে হবে। আমার কঠিন শিক্ষা হয়ে গেছে।
মুহূর্তের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিও। তাতে উইলকে দু’ঘা বসিয়ে দিতেও দেখা যায় ফ্রেজার অ্যানিংকে। গোটা ঘটনায় উইল কনোলির পাশেই দাঁড়ান নেটিজেনরা। সমালোচনা করেন ফ্রেজার অ্যানিংয়ের। এমনকি সেনেটর পদ থেকে তাঁর অপসারণ চেয়ে ইতিমধ্যে পিটিশনেও সই করেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। তবে ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তাতে উইলকে আইনি ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। তাই তার জন্য ‘গো ফান্ড মি’ওয়েবসাইটে ‘মানি ফর এগবয়’নামের একটি দান তহবিল গড়ে তোলা হয়, যাতে উইলের আইনি খরচও উঠে আসে এবং আরও ডিম কেনা যায়। কিন্তু দুই দিনেই তাতে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা জমা পড়ে। প্রায় তিন হাজার মানুষ উইলের জন্য মুক্তহস্তে দান করেছেন। ৪ লাখ টাকার বেশিও জমা দিয়েছেন কেউ কেউ। তবে সব টাকা নিতে রাজি নয় বলে অষ্ট্রেলিয়া সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে উইল। আইনি খরচ ছাড়া পুরো টাকা ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিহতদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ‘ডিম বালক’।
অস্ট্রেলিয়ান ওই সাহসী তরুণ নিজের জন্য সংগৃহীত টাকা ক্রাইস্টচার্চের নিহতদের পরিবারের জন্য ব্যয় করবেন। ডিম বালকের’পাশে দাঁড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনো। অ্যানিংয়ের মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্যের কঠোর নিন্দা করেছেন তিনি। অ্যানিংয়ের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন । এ ধরনের মতামতের অস্ট্রেলিয়াতে কোনো স্থান নেই। এটা অস্ট্রেলীয় সংসদ। নিজের মন্তব্যের জন্য তার লজ্জিত হওয়া উচিত। আমার সরকার কোনোভাবেই এর সঙ্গে একমত নয়।
টুইটারে দেওয়া পোস্টে তার প্রতি ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উইল কনোলি। উইল কনোলি বলেন, একজন মানুষ হিসেবে ওই মুহূর্তটিতে আমি গর্বিত অনুভব করেছি। আপনাদের বলতে চাই, মুসলমানরা সন্ত্রাসী নয় এবং সন্ত্রাসবাদের কোনও ধর্ম নেই। মুসলমানদের যারা সন্ত্রাসী সম্প্রদায় মনে করে, তাদের মাথা অ্যানিংয়ের মতোই শূন্য।