জাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
করোনা পরবর্তী দুর্ভিক্ষ এড়াতে কৃষক বাঁচান

করোনা শেষ না,আরও বড় ভয়ের জায়গা আছে, সেদিকে তাকান এখনি। করোনাকাল প্রলম্বিত হলে, অথবা করোনাকাল কেটে যাবার পর একটিমাত্র সেক্টর বাংলাদেশ এবং তার মানুষদের বাঁচিয়ে রাখতে পারবে, সেই সেক্টরটি রেমিটেন্স না, গার্মেন্টসেক্টর না, একমাত্র কৃষিখাত, কৃষিসংশ্লিষ্ট খাতই বাংলাদেশের প্রাণপ্রবাহ টিকিয়ে রাখবে। আমি অর্থনীতির ছাত্র না, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র। অনধিকার চর্চা মনে হতে পারে তারপরও আগাম বলে রাখি, বেঁচে থাকলে হিসাবটা মিলিয়ে নিয়েন, আমাকে উদ্ভট উট বলে গালি দিয়ে রাজধানীর জিরোপয়েন্টে বেঁধে রাখবেন। এবার একটু কষ্ট করে শুনুন।
করোনার ধাক্কা কেটে যাবার পর পৃথিবীর কোন দেশ পরবর্তী এক দুই বছর আপনাকে এক ছটাক চালও দেবে না,গম দেবে না,পেঁয়াজ দেবে না। ৫০গুন বেশী দাম দিলেও না। কারণ সে দিতে পারবে না। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতও না, ধারণা করি করোনার ধাক্কায় ভারতও সুস্থ থাকবে না। সম্মানিত পলিসিমেকারগণ, বিনয়ের সাথে আকুতি রাখছি, গার্মেন্টসহ অন্যান্য খাতে যত পারেন প্রণোদনা দিন সমস্যা নেই। কিন্তু কৃষিখাত, কৃষকের কথা মাথায় নিন,আজ, এক্ষুনি ভাবুন।
গার্মেন্ট শিল্প আগামীর অর্থনৈতিক ধ্বসের ধাক্কা মোকাবেলায় চার পয়সাও কাজে লাগবে না। সবকিছু সামলে নিতে পারলেও ইউরোপ আমেরিকারই সুস্থ হতে সময় লাগবে কমপক্ষ দুই বছর। তারা নতুন করে সহসাই অর্ডার দেবে না,সেই সামর্থ তাদেরও থাকবে না। মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশ থেকে চাকুরি হারিয়ে দলে দলে দেশে ফিরে আসবেন রেমিটেন্স যোদ্ধারা। মুখথুবরে পড়বে রেমিটেন্স প্রবাহ। করোনার কার্যকর প্রতিষেধক, ওষুধ আবিস্কারের আগে পৃথিবীর কোন দেশ তার নিজ নিরাপত্তার স্বার্থে অন্যকোন দেশ থেকে কোন শ্রমিক নেবে না। একটি বিষয় কি লক্ষ্য করেছেন, কোমর ভাঙার শব্দ শুরু হয়েছে আমাদের পোল্ট্রি খাতে। মুরগীর দাম উৎপাদক পর্যায়ে হুহু করে নামছে। ক্রেতা কমে গেছে, বাজার বন্ধ, যোগাযোগ বাধাগ্রস্থ হওয়ার,পোল্ট্রিফিড কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কত বড় বিপাকে তারা পড়েছে।
ডেইরি,মাছের খামারীদের অবস্থাও একই। এরা এই ক্ষতির ভার বইতে পারবে না। সর্বশান্ত হবে। আরও বড় ভয়ের জায়গা আরও আছে। খোদা না করুক করোনা যদি বড়মাত্রায় আমাদের গ্রামগুলোতে থাবা বসায় তখন কী হবে ভাবুন একবার। ফসলের মাঠ অনাবাদী পড়ে থাকবে, কৃষিশ্রমিকের আকাল নামবে। ধ্বস নামবে ফসল উৎপাদনে। আরও অনেক বিষয় আছে কৃষি,কৃষিজাত পণ্য,কৃষি খাত নিয়ে। মান্যবর নীতিনির্ধারকবৃন্দ, এরপর যাবতীয় প্রণোদনা প্রদানের চিন্তা কৃষির জন্য রিজার্ভ রাখুন। করোনা চিকিৎসায় ব্যয় বাড়ান।
করোনার বিস্তাররোধে গ্রামকে, গ্রামের মানুষকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা সাজান। কার্যকর করুন। কেবল শহর না গ্রামেও নজর ফেলুন। গ্রামস্তরে করোনা টেস্টের সুবিধাকে শহরের মতই চিন্তায় রাখুন। বিশ্বাস রাখুন গ্রাম আর কৃষকের প্রতি। বাংলাদেশকে বাঁচালে গ্রামই বাঁচাবে, গ্রামের কৃষক পরিবারগুলোই বাঁচাবে আর কেউ না। অতীতের পানে তাকান,বন্যা, খরা, বিপর্যয়ে, আমাদের গৌরেবের মুক্তিযুদ্ধ অবহেলিত, অচ্ছুত গ্রাম, গ্রামের অচ্ছুত কৃষকেরাই বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে, আকালমুক্ত রেখে বেঁচে থাকার, দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি যুগিয়েছে। আমার মত শহুরে “ভদ্দর নোক” আর সো কল্ড এলিটেরা না।