চলতি হাওয়াজাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
কিশোর কুমাররা হেরে গেলে হেরে যাবে বাংলাদেশ

বিদ্যানন্দ একটি ভালবাসার নাম, স্বপ্নের নাম, লাখো মানুষের প্রেরণার নাম, একটা বিরাট উপবাসী-অনাহারী ছিন্নমূল মানুষের বেঁচে থাকার আশ্রয়ের নাম বিদ্যানন্দ।
নারায়নগঞ্জে ২০১৩ সালে ব্যক্তি উদ্যোগ এবং অর্থায়নে যে বিদ্যান্দের শুরু হয়েছিল আজ তা ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী আজ যুক্ত হয়েছে তার সাথে। ক্ষুধার্ত, শ্রমজীবি, অসহায় মানুষের জন্য ১ টাকায় খাবার, ১ টাকায় চিকিৎসা সেবা, নির্যাতিত-অসহায় মানুষের জন্য ১ টাকায় আইনি সেবা, হাজার হাজার পথশিশুদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা,পুষ্টিকর খাবার,পোষাক, শীতার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, ঈদের সময় অসহায়দের মাঝে নতুন পোষাক বিতরণ, দু:স্থ মাতা এবং বিধবা নারীদের সাবলম্বী করার জন্য ছাগল, গরু, সেলাই মেশিন দান, রোজার সময়ে ইফতার সামগ্রী এবং সেহরী বিতরণ তো আছেই।
এই করোনাকালে বাংলাদেশ সরকারের পর হয়তো একক কোনো সংগঠনের পক্ষ হতে সর্ব্বোচ্চ সংখ্যক সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়েছে বিদ্যানন্দ।ডাক্তার-নার্সদের সুরক্ষায় মানসম্পন্ন পিপিই সরবরাহ, সেনাবাহিনী, কোষ্টাগার্ড, পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে প্রকৃত অসহায় মানুষদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো,দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছ হতে ট্রাকবোঝাই করে সব্জি, খাদ্যশষ্য এনে, পুকুর হতে মাছ তুলে বিনামূল্যে বাড়াবাড়ি পৌছে দিচ্ছে বিদ্যানন্দ। আর এ কাজে প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে কোটি টাকা। হ্যাঁ, আবারও বলছি প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে তাদের।
এটা সত্য এ অর্থ একক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেয়না, দেশ বিদেশের হাজার হাজার মানুষের অনুদান এবং হাজার হাজার মানুষদের স্বেচ্ছাশ্রম, অক্লান্ত পরিশ্রমে এটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তুু এইযে বিরাট কর্মযজ্ঞ, গণ মানুষের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া এসবের মূলে একজন মানুষ আছেন বিশেষ করে, যার নাম কিশোর কুমার দাস। যিনি বিশ্বাস করতেন কেবল ধর্ম নয়, কর্মই মানুষের পরিচয়। তাইতো তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান সাম্প্রদায়িক ধর্মের গন্ডি ছাড়িয়ে পরিণত হয়েছিল গণমানুষের প্রতিষ্ঠানে। কিন্তুু আজ কিশোর কুমার দাস মুখোমুখি হলেন এক নির্মম বাস্তবতার। তিনি নিজেকে যে মানুষ ভাবতেন, যে মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য সংগ্রাম করে গিয়েছেন সেখানে আজ নিজেকে আবিষ্কার করলেন একজন হিন্দু হিসেবে, একজন অমুসলিম হিসেবে। বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক পেজ এবং গ্রুপে চলছে বিদ্যান্দের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। এতে তারা সফল ও হয়েছে, যে কিশোরকুমার দাসের হাতে সৃষ্টি হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে, সাধারন মানুষের কল্যানার্থে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব হতে সরে যাবার।মহৎপ্রাণদের কাছে নেতৃত্ব দান নয়,মানুষের কল্যানই যে মুখ্য তা তিনি আবারো প্রমাণ করলেন।
এভাবে কিশোর কুমার দাশেরা কি হেরে যাবে এই সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে? কিশোর কুমাররা হেরে গেলে হেরে যায় মানবতা, হেরে যায় বাংলাদেশ। আর আমরাও যারা স্বপ্ন দেখি মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাড়ানোর তারাও মানুষের জন্য কাজ করার স্পৃহা হারিয়ে ফেলি। অবশেষে মহাত্মা লালনের উক্তি স্মরণ করি–
এমন মানব সমাজ কবেগো সৃজন হবে-
যেথা হিন্দু-মুসলিম,বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ধর্মে-গোত্রে বিভাজন নাহি রবে।