বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
কেন দেখবেন ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’?

সাইদুর বিপু: ‘মাটির প্রজার দেশে’ সিনেমার কথা মনে আছে? গতবছর এই দিনেই দেখেছিলাম কিন্তু খুব বেশি মানুষ সেভাবে দেখতেই পারেনি গত দেড় দশকের এই সেরা সিনেমাটি। তার একটা কারন ছিলো এই সিনেমা শুরুতে আমাদের দেশে রিলিজ পেয়েছিলো মাত্র একটা সিনেমা হলে তাও আবার মাত্র দিনে দুইটা শো! হুম, মাত্র একটা সিনেমা হল আর তার মাত্র দুইটা শো। এমনই ছিলো তখন। যদিও পরবর্তীতে চট্টগ্রামে থিয়েটারে রিলিজ করতে সক্ষম হয়েছিলাম তবু এখনো বেশিরভাগ মানুষকেই জিজ্ঞেস করে দেখলে তারা উত্তর দেয় ‘মাটির প্রজার দেশে’ সিনেমাটি দেখে নাই!। তেমনি আরেকটা সিনেমা এই ২৯ শে মার্চ রিলিজ পাচ্ছে ঢাকার সিনেপ্লেক্সে। সিনেমার নাম ‘Live From Dhaka’, পরিচালনা করেছেন তরুন নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ।
আমাদের দেশের সিনেমার বর্তমান অবস্থায় খুব যে বলার মতো সিনেমা হচ্ছে তা না। তবুও এর মধ্যেই যে গুটি কয়েক সিনেমা বলার মতো হচ্ছে সেগুলোও দর্শকের কাছে পৌছে দিতে দেশের সিনেমা পরিবেশকদের অনীহা কাজ করে বেশিরভাগ। এইসব সিনেমা যতই বাইরের বিভিন্ন ফেস্টিভ্যাল ঘুরে আসুক না কেন তাতে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। আরেকটু ক্লিয়ার করে বললে তারা এই সব সিনেমা পরিবেশন করতে রাজী না কারন এইসব সিনেমা দিয়ে নাকি পেট ভরে না। এরপরেও দেশের অনেক ইন্ডিপেনডেন্ট নির্মাতারা সিনেমা নির্মাণ করে যাচ্ছেন শুধুমাত্র দেশের সিনেমাকে ভালোবাসেন বলেই।
কিন্তু ঐ যে কথায় আছে আপনি কোনদিনই ভালোবাসার দাম পাবেন না। তবু তারা নির্মাণ করেই যাচ্ছেন। সিনেমার ক্ষেত্রে বাইরের দেশগুলোতে আমাদের সেভাবে খুব একটা পরিচিতি নাই। এর কারন হিসেবে অনেকেই আমাদের দেশের সিনেমা কে ভারতের একটা প্রদেশের সিনেমা মনে করা হয়। হয়তো সেভাবে আমরা এখনো বিশ্বের দরবারে নিজেদের সিনেমাকে তুলে ধরতে পারি নাই। তবু এই সিনেমা যখন পৃথিবীর অন্যতম গুরত্বপূর্ণ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আইএফএফআর এর “Bright Future” ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয়ে আসে তখনো আমাদের দেশের যাদের টনক নড়ার কথা তাদের নড়ে না টনক। এতোবড় গর্বের বিষয় কে অন্য দেশ কতটা উৎফুল্লতার সাথে প্রকাশ করতো আর আমরা সেটা প্রকাশ করতেছি এই সিনেমা মাত্র একটা সিনেমা হলে মুক্তি দিয়ে।
এ ছাড়াও এই সিনেমা রোটেরডাম ও সিঙ্গাপুর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে স্ক্রীনিং হয়েছিলো। সিনেমার গল্প সাজানো হয়েছে এমন ভাবে যার মূল চরিত্রে আছেন সাজ্জাদ নামের একজন মানুষ যে কিনা নিজের জীবনের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন। যেমনটা আশা হারিয়ে ফেলেছে আমাদের এই প্রাণের শহর ঢাকা। ঢাকা আর সাজ্জাদ কে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক সাদ। ঢাকায় আর দশটা সাধারন মানুষের মতই সাজ্জাদের জীবনের স্ট্রাগলিং পিরিয়ড দেখানো হয়েছে। হঠাৎ করেই যেমন এই শহরের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যায় তেমনি একদিন সাজ্জাদের ভাগ্যেও নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা। শেয়ার বাজার ধংসের ফলে দুই কূলই হারিয়ে ফেলে সাজ্জাদ। এরই মধ্যে প্রেমিকার প্রেগন্যান্ট হওয়ার খবর।
বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে লোন নেয়া টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে, প্রেমিকাকেই বা কিভাবে সামলাবে কিংবা নিজের জীবনকেই কিভাবে সে আগের মতো সাজাবে? এতো প্রশ্নের উত্তর খুজে পেতে অক্ষম সাজ্জাদ সিদ্ধান্ত নেয় রাশিয়া পাড়ি জমানোর…… কিন্তু এতো কিছুর মধ্যে সে কি রাশিয়া যেতে পারে কি পারে না তারই গল্প দেখানো হয়েছে এই সিনেমায়।
কিন্তু এই শহর কি তাকে পালাতে দিবে নাকি জীবনের থেকে পালানো যায়? সিঙ্গাপুর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এই সিনেমা শ্রেষ্ঠ সিনেমা, সেরা অভিনেতা, সেরা পরিচালকের পুরস্কার জেতার পরও আমাদের দেশে মাত্র একটা সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে! আমাদের দেশটাই এমন অদ্ভুত, ঐটা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। তার চেয়ে বরং ‘মাটির প্রজার দেশে’ সিনেমার সময় না দেখতে পেরে যে আফসোসে অনেকেই ভুগেছিলেন তা আর এই সিনেমার ক্ষেত্রে না করি। সময়, সুযোগ আর সামর্থ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যই দেখে নিবেন এই ৯৬ মিনিটের সাদাকালো ফরম্যাটের সিনেমাটি।