বাক্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
খনার বচনের ইতিবৃত্ত

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি দেশ। এই দেশের পলিমাটির ঘ্রাণে মিশে আছে লোকগান, গীত, ছড়া। খনার বচন তাদের অন্যতম। খনার বচন মূলত কৃষিতত্ত্ব ভিত্তিক ছড়া। ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বাংলা সাহিত্য কিংবা ভারতবর্ষে খনা নামে এক বিদুষী নারীর প্রবাদ-প্রবচন আমাদের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে আছে। এক সময় বাঙালি সমাজে সবাই কথায় কথায় ‘খনা’ নামের এই প্রবাদপ্রতীম নারীর প্রবাদ বলতেন। এজন্য ‘খনা’ নামের এই নারী এখনো আমাদের কাছে কিংবদন্তী হয়ে আছেন। খনা নাম্নী জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী বাঙালি নারীর রচনা এই ছড়াগুলো। তবে এ নিয়ে মতভেদ আছে।
বলা হয়ে থাকে, খনার নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বারাসত সদর মহকুমার দেউলিয়া গ্রামে (বর্তমানে চন্দ্রকেতুগড় প্রত্নস্থল, যেটি খনামিহিরের ঢিবি নামে পরিচিত)। কথিত আছে, তিনি রাজা বিক্রমাদিত্যের সভার নবরত্নের একজন ছিলেন। বরাহমিহির বা বররুচি-এর পুত্র মিহির তার স্বামী ছিল বলেও কিংবদন্তী আছে।
এই রচনা গুলো চার ভাগে বিভক্ত। কৃষিকাজের প্রথা ও কুসংস্কার, কৃষিকাজ ফলিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান, আবহাওয়া জ্ঞান, শস্যের যত্ন সম্পর্কিত উপদেশ পাওয়া যায় খনার বচনে। আসুন জেনে আসি কিছু খনার বচনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা।
বিনা চাষে পান।
১৬ দিন চাষ করার পর সেই জমিতে মূলা চাষ করলে ভাল জাতের ফলন পাওয়া যায়। তুলা লাগানোর জমিতে ৮ দিন চাষ করতে হবে, ধানের জমিতে ৪ দিন চাষ করে ধান লাগালে ভাল ফলন পাওয়া যায়। পানের জমিতে চাষের প্রয়োজন হয় না।
তাতেই কাপড়, তাতেই ভাত।
কলাগাছের ফলন শেষে গাছের গোড়া যেন না কাটে কৃষক, কেননা তাতেই সারা বছর ভাত-কাপড় জুটবে তাদের।
রাজা যায় মাগনে।
আগুনে অর্থাৎ অগ্রাণে, আর, মাগুনে মানে ভিক্ষাবৃত্তির কথা বোঝাতে ব্যবহৃত, অর্থাৎ যদি অঘ্রাণে বৃষ্টিপাত হয়, তো, রাজারও ভিক্ষাবৃত্তির দশা, আকাল অবস্থায় পতিত হওয়াকে বোঝায়।
কড়ি হয় তুষে।
পৌষে বৃষ্টিপাতের ফলে কৃষক তুষ বিক্রি করেও অঢেল টাকাকড়ির বন্দোবস্ত করবে।
ধন্য রাজার পুণ্য দেশ।
মাঘের শেষের বৃষ্টিপাতে রাজা ও দেশের কল্যাণ।
তার দুঃখ হয় চিরকাল ।
তার বলদের হয় বাত, ঘরে তার থাকে না ভাত।
পূর্ণিমা বা অমাবস্যায় হাল ধরা উচিত নয়, ধরলে চিরকাল দুঃখ পেতে হয়। বলদ বাত রোগে পঙ্গু হয়ে যায় , চাষ না করার ফলে ঘরে তার ভাত জোটে না।