টেক গেজেটসট্রেন্ডিং খবরপ্রযুক্তিহোমপেজ স্লাইড ছবি
গুগলের স্ন্যাপে হুয়াওয়ের এন্ড গেম

আবদুল্লাহ আল মুনতাসির: হুয়াওয়ের নাম যারা শুনেন নি এখনো, এটি একটি জায়ান্ট চাইনীজ টেক কোম্পানি যা মূলত নেটওয়ার্কিং ইকুইপমেন্ট, ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন বানিয়ে থাকে। শুনলে অবাক হতে পারেন যে মার্কেট শেয়ারের দিক থেকে হুয়াওয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্ট ফোন বিক্রেতা, যেখানে প্রথম স্থানে রয়েছে স্যামসাং এবং তৃতীয়তে রয়েছে অ্যাপল। স্মার্ট ফোনের বাজারে অত্যন্ত দ্রুত উপরে উঠে আসছিলো হুয়াওয়ে কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন সরকারি আদেশে গুগল বাধ্য হয় হুয়াওয়ের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করতে। যার ফলশ্রুতিতে স্টেক কমিউনিটি, বিশেষত স্মার্ট ফোন কমিউনিটি বিচলিত কিছুদিন ধরে।
জ্বী! গুগল ইচ্ছা করে হুয়াওয়ের ব্যবসায় আঘাত হানার জন্য অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারের লাইসেন্স তুলে নিয়ে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। তারা মার্কিন আইনের কারনে এটি করতে বাধ্য হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারের আওতায় হুয়াওয়েকে “এনটিটি লিস্ট” এ ফেলা হয়। এই লিস্টের ভেতরে থাকা কোম্পানিগুলোর সাথে কোন মার্কিন কোম্পানি কোন রকম ব্যবসা করতে পারবেনা। বলা বাহুল্য যে, মার্কিন মাটিতে অনেক সময় ধরেই হুয়াওয়ে ফোন বিক্রিতেই নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এখন থেকে হুয়াওয়ে অ্যান্ড্রয়েডের মতো কোন মার্কিন সেবাও নিতে পারবেনা, পারবেনা কোন মার্কিন কোম্পানি থেকে কোন সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার ক্রয় করতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন ধরেই হুয়াওয়েকে সিকিউরিটি থ্রেট হিসেবে দেখে আসছিল যা বরাবরই হুয়াওয়ে অস্বীকার করে আসছিলো। এর সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও চায়নার বাণিজ্য যুদ্ধের রেষ মিলিয়ে হুয়াওয়ের ওপর এই আঘাতটি আসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে হুয়াওয়ের সাথে চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির যোগসাজেশ রয়েছে এবং হুয়াওয়ে গুপ্তচর বৃত্তির জন্য তাদের টেকনোলজির ব্যবহার করে বলে সন্দেহ করে।
এখন আসা যাক অ্যান্ড্রয়েড ব্যান প্রসঙ্গে। অ্যান্ড্রয়েড ছাড়া কি হবে হুয়াওয়ের? আপনার হুয়াওয়ে ফোন গুলো কি এখন অচল? না, আপাতত আপনার ফোনের তেমন কিছুই হচ্ছেনা। তবে সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। যে হুয়াওয়ে ফোনগুলো ইতোমধ্যে রিলিজ হয়ে গিয়েছে যেমন মেট ২০, মেট ৩০ ইত্যাদি তারা আগামী ৯০ দিন সময় পাচ্ছে। অর্থাৎ আগামী নব্বই দিন পর্যন্ত হুয়াওয়ে ব্যবহারকারীরা স্বাভাবিকভাবেই অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন আপডেট পাবেন। সাথে পাবেন গুগলের সিকিউরিটি প্যাচ ও প্লে-স্টোর সার্ভিস। কিন্তু এই সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পর আর নতুন কোন অ্যান্ড্রয়েডের ভার্সন পাবেনা হুয়াওয়ে ব্যবহারকারীরা। সর্বশেষ অ্যান্ড্রয়েডের যে সংস্করণটি থাকবে ওই সময়ে তাই দিয়ে বাকি দিন পার করে দিতে হবে। হুয়াওয়ে ওপেন সোর্স থেকে যতটুকু প্রয়োজন তা নিতে পারবে যেহেতু অ্যান্ড্রয়েড একটি ওপেন সোর্স প্রজেক্ট। তবে প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে চলছে তাতে ওপেন সোর্সে যা আছে তা দিয়ে চালিয়ে উঠতে পারবেনা হুয়াওয়ে।
হুয়াওয়ে অবশ্য জানিয়েছে তারা এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। ২০১২ থেকে তারা তাদের নিজস্ব “হংমেং” ওএস ডেভেলপ করছে যা এই ব্যান উঠিয়ে নেওয়া যা হলে হুয়াওয়ে ব্যবহার করবে। কিন্তু গুগলের ইকো সিস্টেম থেকে গ্রাহকদের বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা এর আগে উইন্ডোজ ফোন ও করেছে অ্যামাজন ও করেছে। যার ফলাফল তেমন ভালো হয়নি। অ্যান্ড্রয়েড ব্যান এর ফলে প্লে-স্টোর তো ব্যবহার করতে পারবেই না, সাথে চলে যাবে গুগল এর ইউটিউব, জি-মেইল, গুগল ম্যাপস এর মতো অ্যাপ্লিকেশন। যেহেতু এনটিটি লিস্ট এ থাকছে হুয়াওয়ে তাই ফেসবুক, ওয়াটসঅ্যাপ, নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই, স্ন্যাপচ্যাটের মতো যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অ্যাপ গুলোও আর ব্যবহার করা যাবেনা এই ফোনে। এবং এগুলো ছাড়া হংমেং ও এস এর ফোনে গ্রাহক কতটুকুই বা আকৃষ্ট হবে তা সন্দেহজনক।
শুধু অ্যান্ড্রয়েড ব্যান এর কথা চিন্তা করলেই হবেনা। হুয়াওয়ে “এনটিটি লিস্ট” এ থাকার মানে তারা তাদের ল্যাপটপের জন্য উইন্ডোজ ব্যবহার করতে পারবেনা, ইন্টেলের চিপ সেট ব্যবহার করতে পারবেনা, এনভিডিয়া এর গ্রাফিক্স সাপোর্ট পাবেনা। হুয়াওয়ে বাণিজ্যিকভাবে যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সাথে ক্ষতির সম্মুখীন হবো আমরা ব্যবহারকারীরা কারণ হুয়াওয়ের মতো এতো বড় একটা প্লেয়ার মার্কেট থেকে চলে যাওয়া মানে প্রতিযোগিতা কমে যাওয়া। এবং প্রতিযোগিতা কমে যাওয়া মানেই ইনোভেশনের প্রয়োজনীয়তা কমে যাওয়া। যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ব্যান তুলেও নেয় তাও মানুষ এতো টাকা খরচ করে এমন একটি কোম্পানির প্রোডাক্ট কিনতে ভয় পাবে যার প্রোডাক্ট যেকোনো সময় অকেজো হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে।