খেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
বাংলাদেশ কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

মঞ্জুর দেওয়ান: অবশেষে ভয়ই সত্যিতে পরিণত হলো। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড ’জুজু’ কাটাতে পারলো না টিম টাইগার। বুঝে ওঠার আগেই যেন শেষ হয়ে গেল নিউজিল্যান্ড বধের অধরা স্বপ্ন। অথচ, কি এনার্জি নিয়েই না নিউজিল্যান্ডে গিয়েছিল তামিম, মাশরাফিরা। উত্তম দল বাছাইয়ের জন্য কি মূখ্যম সুযোগটা পেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। তারপরও হলোনা। কাজে লাগলো না বিপিএল ‘বুস্ট’! নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের এমন ভরাডুবি দেখে বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটপ্রেমীরা নেতিবাচক বুলি ঝারলেও এর বিপক্ষে আমি। কেননা, এই ব্যর্থ সফরেও অনেক অর্জন আছে বাংলাদেশের। অভিজ্ঞতার ঝুলি সম্পন্ন হয়েছে। হোক না সেটা পরাজয়ের ঝুলি! তারপরও বলবো এখানেও বাংলাদেশ শিখেছে। অর্জন করেছে। যে অর্জনের বহিঃপ্রকাশ হবে কিছুটা দেরিতে।
কয়েক মাস পরেই শুরু হচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আয়োজন, ক্রিকেট বিশ্বকাপ। নিউজিল্যান্ড সিরিজের বাজে প্রভাব পড়বে কি না সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগ পর্যন্ত। কিন্তু আবহাওয়ার সাথে নিজেদের মানিয়ে নেয়া টনিক হিসেবে কাজ করবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই নিউজিল্যান্ড সিরিজকে কেবল জয়ের মঞ্চ হিসেবে দেখলেই হবেনা। বিশ্বকাপের ওয়ার্ম আপ দেখলে ক্ষতি কি! বিশ্বকাপের আগে এমন সিরিজের গুরুত্ব খুব তাড়াতাড়ি-ই পরিলক্ষিত হবে।
যে বাংলাদেশ একদিন হারের গণ্ডি পেরুতে পারতো না তারাই সব বাঘা দলকে হারিয়েছে। তাই আবার বলছি, হারতে হারতেই একদিন জয় আসবে। বিদেশের মাটিতে সিরিজ জেতা এমনিতেই চ্যালেঞ্জ। নিউজিল্যান্ডের মতো বৈরি আবহাওয়ায় তা আরোও কঠিন হয়ে যায়। বলতে গেলে অনেকটা দুঃসাধ্য! এখন বলতে পারেন, কদিন আগে ভারত কিভাবে সিরিজ জিতে আসলো। দেখুন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করাটা কতটা যৌক্তিক সেটা আগে বিবেচনা করলে ভালো হয়।
বাংলাদেশ এখনো নিজেদের ব্যাটিং নির্ভর দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে লো স্কোরিং করে সফলতা পাওয়াটা তাই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে। টপ অর্ডারে ভালো করলে, বাংলাদেশ পুরো সিরিজে ভালো করতো এতে সন্দেহ আছে বলে মনে হয়না। দুই ওপেনার আগের ম্যাচের মতোই ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু মিডল অর্ডারে ভালো করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন মিঠুন। নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কের ফর্ম নিয়ে এসেছেন ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে। টানা দুই ম্যাচে অর্ধশতক করেছেন। প্রথম ম্যাচে প্রত্যাশা মেটাতে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেকে ফিরে পাবার ইঙ্গিত দিয়েছেন সাব্বির রহমান। ধরে খেলার প্রবণতা অদূর ভবিষ্যতে কাজে দিবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তামিম, লিটনরা যদি ভালো শুরু এনে দিতে পারতেন আরও হাত খুলে খেলতে পারতো মিডল অর্ডার। তাই প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের ফর্মে ফেরা জরুরি দেখছেন ম্যানেজমেন্ট।
নিউজিল্যান্ডকে হারানোর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সেখানকার কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নেয়া। নিউজিল্যান্ডে এখন পর্যন্ত জিততে না পারার প্রবণতাই হয়তো বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ২২ গজে আবহাওয়ার যথাযথ ব্যবহার করতে না পেরেও হতাশ হয়েছেন বোলাররা। এই সমস্যা থেকে বের হতে হলে কৌশলের পরিবর্তন চাইবে টিম বাংলাদেশ। স্বল্প পুঁজি থেকে বের হতে পারলেই মিলবে সফলতা। যে কথা মাশরাফি বলে আসছেন সিরিজের শুরু থেকে। তবে ঘুরেফিরে কথা আসছে ওই মিডল অর্ডারের সফলতা নিয়ে। আর ওপেনারদের ব্যর্থতা নিয়ে। শুরুটা ভালো হলে হাসিমুখেই সিরিজ শেষ করতে পারবে টিম বাংলাদেশ। নাহলে টি-টোয়েন্টিতেও ভোগান্তি পোহাতে হবে। সাদা পোশাকেও দেখতে হবে দৈন্যদশা। বাকি ম্যাচগুলোতে ভালো করতে ইউনিভার্সিটি ওভালেই ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। ২১শে ফেব্রুয়ারি তৃতীয় ওয়ানডে জিতে ভাষা দিবসের উপহার দিবে এমন প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি!