ছুটিহোমপেজ স্লাইড ছবি
চীনের মহাপ্রাচীর : যে আশ্চর্যকর নিদর্শন আজও বিস্ময়ের জন্ম দেয়

মৃন্ময়ী মোহনা: পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আশ্চর্য সব নিদর্শন। এসব নিদর্শন যেমন যুগ যুগ ধরে গর্বের সাথে টিকে আছে পৃথিবীর বুকে, তেমনি এর পেছনে রয়েছে আশ্চর্য সব কাহিনী। তেমনি এক আশ্চর্যকর নিদর্শন চীনের মহাপ্রাচীর। The great wall of China! এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৬৯৫ কিলোমিটার এবং উচ্চতা ৪.৫৭ থেকে ৯.২ মিটার বা প্রায় ১৫ থেকে ৩০ ফুট ও চওড়ায় প্রায় ৯.৭৫ মিটার বা ৩২ ফুট।
চীনের প্রাচীর তৈরির সময়কাল: খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে চীনের সীমান্ত রক্ষা করার জন্য এ প্রাচীর তৈরি শুরু করা হয়। চলে ১৬০০ শতক পর্যন্ত। পাথর ও মাটি দিয়ে তৈরি হয়েছিল এ প্রাচীর। এ সময় প্রায় একইরকম অনেকগুলো প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল, তবে খ্রিষ্টপূর্ব ২২০-২০০ মধ্যবর্তী সময়ে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াঙের অধীনে নির্মিত প্রাচীরটিই সবচেয়ে বিখ্যাত। এটি একেবারে উত্তরে অবস্থিত। বর্তমানে যে প্রাচীরটি সব’চে সুরক্ষিত অবস্থায় আছে সেটি মিং রাজবংশের শাসনামলে নির্মিত হয়।
কেনো নির্মিত হয়েছিল চীনের মহাপ্রাচীর: প্রাচীর তৈরির প্রধান কারণ ছিল বহিঃশত্রুর হাত থেকে চীনকে রক্ষা করা। সেই সময় মাঞ্চুরিয়া আর মঙ্গোলিয়ার যাযাবর দস্যুদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল চীনের বিভিন্ন অংশে আক্রমণ করা। চীন তখন খণ্ড খণ্ড অংশে বিভক্ত ছিল বিধায় প্রতিটি অঞ্চলের একজন করে সম্রাট ছিল। সর্বপ্রথম উত্তর অংশের সম্রাটের নির্দেশে দেওয়াল নির্মাণ শুরু হয়। প্রাচীর তৈরি হয়েছিল পোহাই উপসাগরের কূলের রাজ্য শানসিকুয়ান থেকে কানসু প্রদেশের চিয়াকুমান পর্যন্ত। দেওয়াল তৈরি করার পর অনেক জায়গা প্রায়ই ভেঙে পড়ত। কখনো কখনো বহিঃশত্রুর আক্রমণেও দেওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হত। তাও দেওয়াল তৈরি থেমে ছিল না! দেওয়ালের গাঁথুনি, উপকরণ সবই ছিল অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।প্রাচীরের নির্মাণেও ছিল মুন্সিয়ানা। নিয়মিত বিরতিতে তৈরি করা হয়েছিল পর্যবেক্ষণ চৌকি, যা অস্ত্র সংরক্ষণ, সেনাবাহিনীর আবাসন এবং সংকেত প্রদানে কাজে লাগত।
প্রাচীরের বর্তমান অবস্থা: বর্তমানে প্রাচীরের অনেকাংশই ভেঙে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পর্যটন শিল্পের জন্যই এখন সংরক্ষণ করা হয়েছে প্রাচীরের কিছু অংশ। চীনের মহাপ্রাচীর দেখতে হাজার হাজার পর্যটক ভীড় জমায় প্রতিদিন। সবচেয়ে বেশি ভীড় হয় বেডেলিং-এর অংশে।
চীনের মহাপ্রাচীর নিয়ে নানা কিংবদন্তী: চীনের দেওয়াল পৃথিবীর সবচে দীর্ঘ সুরক্ষা প্রাচীর। এ নিয়ে প্রচলিত আছে নানা কিংবদন্তী। তারমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো চাঁদ থেকে দেখা যায় এ মহাপ্রাচীর! আবার এই মহাপ্রাচীর প্রস্থ সম্পর্কে প্রচলিত আছে, পাঁচজন মানুষ ও ঘোড়া পাশাপাশি যেতে পারে এ দেওয়ালের ওপর দিয়ে। আবার কারো কারো মতে, ১২ জোড়া বড় আকৃতির ঘোড়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে এ দেওয়ালে। আধুনিক সভ্যতার এত এত যুগ আগে চীনাদের হাতে তৈরি এ মহাপ্রাচীর আজও বিস্ময়ের জন্ম দেয়!