ছুটি
ছেলেবেলার অপূর্ব অনুভূতি

আরিফুল আলম জুয়েল: রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়া। পড়া না শেষ করে ঘুমাতে না যাওয়া, ছোটবেলার ক্রাশ কিশোর পাশা। স্কুলের ক্লাসেও অন্য বইয়ের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা, কুয়াশা সিরিজ পড়া। প্রায় সব ডায়েরী বা খাতারই পেছনের পাতায় থাকতো মজাদার কাটাকুটি খেলা বা বক্স খেলা। ধান/চাল/লোহা/জুতা/কাঁচের বোতলের বিনিময়ে পাওয়া যেত জিলাপী/কটকটি/আইসক্রিম/বুট-বাদাম/শন পাপড়ি! আহ্ ! কি অপূর্ব স্বাদ, এখনও মুখে লেগে আছে !
ধান উঠানোর সময় মাটির হাড়িতে করে ছোট রসগোল্লা নিয়ে আসতো, ধানের বিনিময়ে সেই রসগোল্লা কিনে খাওয়া! ধান বা চাল বা গাছের সুপারি বিক্রি করে সিনেমা দেখতে যাওয়া! রাত-বিরাতে পাশের বাড়িতে বা পাশের গ্রামে ভিসিআর দেখতে যাওয়া! সে অপূর্ব অনুভূতি ভুলা যায় না! গোল্লাছুট, বউছি খেলায় পোলাপাইনের সেই কুত্তামারা ভোঁদৌড় আজও চোখে ভাসে! দাড়িয়াবান্দা খেলায় কথা না বলে খেলা মানে, শুধু শিষ আর তালি দিয়ে খেলা। খেলা চলাকালীন কথা না বলা, কথা বললেই এক পক্ষ শেষ! ফকফকা দেয়াল পেলেই দুষ্টু ছেলের দল হয়ে যেত রঙমিস্ত্রী। লিখত, S+L, অমুক+তমুক!
শ্যালোমেশিনের পানিতে গোসল করতে গিয়ে দাপাদাপি করা। সে এক অন্যরকম, সময়ের চিন্তা না করে গোসল! সময় কোনদিক দিয়ে চলে যেতো টেরই পেতাম না!পুকুরেও গোসল করার সময় এমন হতো। পানিতে ডুব দিয়ে ছোয়াঁছোয়ির খেলা। উঠার পর চোখ থাকতো লাল! পুকুরের ঠিক উপরের দিকে কোন গাছের ডাল থাকলে সেই ডালে উঠে লাফ দিয়ে পানিতে পড়া! জাম্বুরার খোল দিয়ে টুপি বানিয়ে মজা করা! স্কুলে কলম খেলা। ক্রিকেট বল দিয়ে সেই প্রিয় বোম্বাসট্রিং খেলা, একবার কাউকে বাগে পাইলেই হইছে, সেই জোরে মাইর এবং পেতো পৈশাচিক আনন্দ! ক্রিকেট খেলা হলে যে ব্যাটের মালিক তাকে সবার আগে ব্যাট করতে দেয়ার দৃশ্য কি মনে পড়ে আপনাদের!
লাটিম দিয়ে কুপাকুপি খেলা, প্রতিপক্ষের লাটিমকে জখম করা! অন্যের বাড়ি থেকে বড়ই, পেয়ারা, আম, জাম, লিচু চুরি করে একসাথে দলবেঁধে খাওয়া। স্কুলের ক্লাস ক্যাপ্টেন হলে ক্লাসের বাকি সবাইকে সবসময় হুমকির উপর রাখা!
স্কুলে পরিদর্শক আসবে শুনে বুকের রক্ত হিম হওয়া, আবার পরিদর্শক চলে যাওয়ার পরদিন পুরো স্কুল ছুটির জন্য দরখাস্ত করা! দশ পয়সা দিয়ে হজমি বা সুবার বিস্কুট কিনে খাওয়া, তাছাড়াও আছে গোলাপী রংয়ের সেই গ্লুকোজ বিস্কুট!ছোটবেলায় ঈদের আগের দিন সবাই একত্রে ঈদের চাঁদ দেখার যে আনন্দ সেটা কোন কিছুর সাথে তুলনা করা যাবে না।ঈদের জামা কিনে তা লুকিয়ে রেখে প্রতিদিন নিজে একবার করে দেখা, ভাঁজ খোলা আবার ভাঁজ করার কথা খুবই মনে পড়ে!
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে আশেপাশের কয়েক গ্রামের মানুষজন মিলে নির্ধারিত খাল-বিল বা হাওড়ে লাইন ধরে মাছ ধরতে যাওয়ার দৃশ্য সত্যি বিরল। তাছাড়া ঐ খাল-বিল বা হাওড় থাকতো মাছে ভরপুর! আহা ! কি দিন, কি ছোটবেলা! একেবারেই দস্যি!