বই Talkসাহিত্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
জহির রায়হানের তিনটি উপন্যাস : সংক্ষিপ্ত পাঠ পর্যালোচনা

মাহমুদুর রহমান: বাংলাদেশের সিনেমাকে যিনি অন্য আসনে তুলে নিয়েছিলেন তিনি জহির রায়হান। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মানুষটি সাহিত্যেও অবদান রেখেছেন। খুব অল্প সময়ের মাঝে আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন বেশকিছু উপন্যাস আর চমৎকার কিছু ছোটগল্প। আজ আমরা জহির রায়হানের তিনটি উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত পাঠ পর্যালোচনা করবো।
১.বরফ গলা নদী: পৃথিবীর অনেক নদীই বরফ গলা পানি থেকে উৎপন্ন হয়। আর কিছু নদী হয় চোখের জলের। সে জল নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষদের। এ উপন্যাসটিও সে রকম মানুষদের নিয়ে লেখা যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। কিন্তু জীবনে শিক্ষার ছোঁয়া থাকার কারণে তারা নিম্নবিত্তর মতো হাত পাত্তে পারে না। নোংরা এক গলিতে পাঁচশ পরিবারের মধ্যে ভাঙাচোরা ভাড়া বাসায় বসবাস হাসমত আলীর। তার স্ত্রী সালেহা, ছেলে মাহমুদ, খোকন, দুলু, মেয়ে মরিয়ম, হাসিনা এদের নিয়ে তার সংসার। কেরানী হাসমতের দিন যাপন আর জীবন বাস্তবতার আখ্যান লিখেছেন জহির রায়হান। বেঁচে থাকা আর মানুষের মতো বেঁচে থাকার মাঝে দারিদ্র্য, বেকারত্ব আর ক্ষমতাসীন মানুষের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার এ গল্প লোনা ধরা দেয়ালের কথা বলে।
২.আরেক ফাল্গুন: ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত জহির রায়হান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখার সময় পাননি। কিন্তু ভাষা আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন গল্প এবং উপন্যাস। এ বইটি তার লেখা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত উপন্যাস। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির পূর্বাপর তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন এই বইয়ে। উপন্যাসের প্লট অবশ্য ভাষা আন্দোলনের আরও কয়েক বছর পরের। সেই সময়ে বসে লেখক তার সৃষ্ট চরিত্রদের মধ্য দিয়ে পাঠককে নিয়ে যান বায়ান্নর ফেব্রুয়ারিতে। রানু, বেণু, সালমা, ফাহাদ, মুনিম, রসুল চরিত্র গুলো বাংলাদেশের তারণ্যের প্রতীক। সে তরুণদের নিয়ে গল্প লিখে জহির রায়হান এনেছেন একুশে ফেব্রুয়ারিকে। ’৫২ র প্রায় তিন বছর পর আবার যেন বায়ান্ন পুনর্বার সংঘটিত হয়। কিন্তু এখানেই সীমাবদ্ধ থাকেননি লেখক। মুনশিয়ানার সঙ্গে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন সে সময়ের সমাজকে। সে সময়ের মানুষের চাওয়া পাওয়া, সুখ দুঃখকে। তাই নামের মতো এ বইও আসলে ফাল্গুনের বার্তা পৌঁছে দেয়।