বাক্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
তের নদীর কথা

সাকিব রহমান সিদ্দিকী শুভ: সাত সমুদ্র পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত প্রবাদ হলেও তের নদীর কথা ভারতবর্ষেই প্রচলিত। এই তেরটি নদী সম্ভবত অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের বড় বড় তেরটি নদী। আসুন জেনে আসি এই তের নদীর গল্প।
১। গঙ্গা : গঙ্গা ভারত ও বাংলাদেশে প্রবাহিত একটি আন্তর্জাতিক নদী। এই নদী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় নদীও বটে। গঙ্গার দৈর্ঘ্য্য ২,৫২৫ কিমি (১,৫৬৯ মাইল) ; উৎসস্থল পশ্চিম হিমালয়ে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে। দক্ষিণ ও পূর্বে গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গঙ্গা মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। জলপ্রবাহের ক্ষমতা অনুযায়ী গঙ্গা বিশ্বের প্রথম ২০টি নদীর একটি।
২। সিন্ধু: পাকিস্তানের দীর্ঘতম এবং গুরুত্বপূর্ণ নদ এবং ভারত উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নদনদীগুলোর একটি যার নাম অনুসারে ভারতের নাম ইংরেজিতে ইন্ডিয়া বা ফার্সিতে হিন্দ/হিন্দুস্তান হয়েছে। সিন্ধু নদী (সিন্ধু নামেও পরিচিত) এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘতম নদী। মানসরোবরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় তিব্বতীয় মালভূমি থেকে উদ্গত হয়ে নদীটি জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গিলগিট-বালতিস্তান ও হিন্দুকুশ সীমান্তের দিকে অগ্রসর হয় এবং তারপর সিন্ধে করাচির বন্দর নগরীর নিকটবর্তী আরব সাগরে মিলিত হবার জন্য সমগ্র পাকিস্তান জুড়ে দক্ষিণ অভিমুখে প্রবাহিত হয়।
৩। ব্রহ্মপুত্র: ব্রহ্মপুত্র নদ বা ব্রহ্মপুত্র নদী এশিয়া মহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। সংস্কৃত ভাষায় ব্রহ্মপুত্রের অর্থ হচ্ছে “ব্রহ্মার পুত্র। ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব নাম ছিল লৌহিত্য। আবার তিব্বতে তা জাঙপো নামে পরিচিত, এবং আসামে তার নাম দিহাঙ। ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি হিমালয় পর্বতমালার কৈলাস শৃঙ্গের নিকট জিমা ইয়ংজং হিমবাহে, যা তিব্বতের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত।
৪। যমুনা: যমুনা উত্তর ভারতের একটি অন্যতম প্রধান নদী। এটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় নদী গঙ্গার প্রধান উপনদী। যমুনা নদীর উৎস মধ্য হিমালয়ের বান্দারপুচ পর্বতশৃঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম পাদদেশে অবস্থিত যমুনোত্রী হিমবাহের ৬,৩৮৭ মিটার উচ্চতায়। এই নদীর দৈর্ঘ্য ১,৩৭৬ কিলোমিটার (৮৫৫ মাইল)।
৫। স্বরস্বতী: সরস্বতী নদী ভাগীরথী নদীর একটি শাখানদ ছিল, যা ১৬ শতক পর্যন্ত সক্রিয় ছিল, কিন্তু বর্তমানে এর প্রায় অস্তিত্ব নেই।
৬। নর্মদা: মধ্য ভারতের একটি নদী। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের পঞ্চম দীর্ঘতম নদী। পেরিপ্লাস অফ দি ইরিথ্রিয়ান সি গ্রন্থে এই নদীকে নম্মদাস (Nammadus) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রিটিশরা একে নেরবুড্ডা (Nerbudda) বা নরবাদা (Narbada) বলত। সংস্কৃত ভাষায় নর্মদা শব্দের অর্থ সুখপ্রদায়িনী। এই নদী উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত সীমারেখা নির্দেশ করে। পশ্চিমবাহিনী এই নদীটি ১৩১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে গুজরাট রাজ্যের ভারুচ শহরের ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে আরব সাগরের খাম্বাত উপসাগরে পতিত হয়েছে। তাপ্তি নদী ও মাহি নদী সহ এই নদী ভারতীয় উপদ্বীপের তৃতীয় তথা বৃহত্তম পশ্চিমবাহিনী নদী। সাতপুরা ও বিন্ধ্যের গ্রস্থ উপত্যকা ধরে প্রবাহিত এই নদী মধ্যপ্রদেশ (১০৭৭ কিলোমিটার), মহারাষ্ট্র (৭৪ কিলোমিটার), মধ্যপ্রদেশ-মহারাষ্ট্র সীমান্ত (৩৫ কিলোমিটার), মধ্যপ্রদেশ-গুজরাট সীমান্ত (৩৯ কিলোমিটার) ও গুজরাট (১৬১ কিলোমিটার) রাজ্যের মধ্য দিয়ে গিয়েছে।
৭। অলকানন্দা: ভারতের উত্তরাখণ্ডের অলকানন্দা হিমালয় থেকে উদ্ভূত নদী এবং গঙ্গার দুটি প্রধান উৎসের একটি। এটি উত্তর ভারতের প্রধান নদী এবং হিন্দুধর্মের পবিত্র নদী । জলবিজ্ঞানে বৃহত্তর দৈর্ঘ্য এবং প্রবাহের অনুসারে, অলকানন্দা, গঙ্গার উৎস জলস্রোত হিসাবে বিবেচিত হয়।
৮। গোদাবরী: গোদাবরী দক্ষিণ ভারতের একটি পশ্চিমবাহিনী নদী। এই নদীর অববাহিকা ভারতের বৃহত্তম নদী অববাহিকাগুলির অন্যতম। মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাসিক জেলার ত্র্যম্বকে এই নদীর উৎপত্তি। দাক্ষিণাত্য মালভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অতঃপর এই নদী অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব গোদাবরী জেলার রাজামুন্দ্রির কাছে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
৯। কৃষ্ণা: কৃষ্ণা নদী, ভারতের দীর্ঘতম নদীগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রায় ১৩০০ কিমি দীর্ঘ এই নদী মহারাষ্ট্র রাজ্যের মহাবালেশ্বর থেকে উদ্ভূত হয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে বইতে থাকে এবং অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের হংসলাঢিবি গ্রামের কাছে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মেশে। এই দুটি রাজ্য ছাড়া কর্ণাটক রাজ্যের উপর দিয়েও এই নদী প্রবাহিত হয়। এই নদীর বদ্বীপ অঞ্চল ভারতের সবচেয়ে উর্বর অঞ্চল্গুলির মধ্যে পড়ে। প্রাচীন ইতিহাসের সাতবাহন বংশ আর ইক্ষ্বাকু সূর্যবংশের রাজারা এই অঞ্চলে রাজত্ব করে গেছেন। বিজয়ওয়াদা এই নদীর তীরে অবস্থিত শহরগুলির মধ্যে অন্যতম।
১০। কাবেরী: কর্ণাটক রাজ্যের কোডাগু জেলায় অবস্থিত পশ্চিমঘাটের টালাকাবেরী নামক স্থানে এই নদীর উৎপত্তি। অতঃপর দক্ষিণ ও পূর্বে কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু রাজ্যদ্বয়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দাক্ষিণাত্য মালভূমির দক্ষিণ-পশ্চিম নিম্নভূমি হয়ে দুটি প্রধান শাখায় বিভক্ত হয়ে এই নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
১১। মহানদী: মহানদী পূর্ব-মধ্য ভারতের একটি প্রধান নদী। এই নদীর অববাহিকার আয়তন ১৪০,০০০ বর্গকিলোমিটার ও নদীটির দৈর্ঘ্য ৮৮৫ কিলোমিটার।
১২। পেরিয়ার: পেরিয়ার মানে বড়। এটি কেরালা রাজ্যের সর্ববৃহৎ নদী।
১৩। শিপ্রা: ভারতের মধ্য প্রদেশ দিয়ে বয়ে চলা একটী পবিত্র নদী।
গানে গল্পে এই তের নদী আমাদের এই অঞ্চলের সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
তথ্যসূত্র: thoughts Co