ছুটিহোমপেজ স্লাইড ছবি
দেশের সবচেয়ে উচু গ্রাম পাসিংপাড়ায়

আবদুল্লাহ মাহফুজ অভী: মেনদ্রো ম্রো। ৭০ বছরের এই বৃদ্ধ বাস করেন দেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম পাসিং পাড়ায়। মেনদ্রো ম্রো ক্রামা ধর্মের অনুসারি। ম্রো জাতির জন্য এই ধর্মের প্রবর্তন করেছিলেন মেনলে ম্রো। মাত্র ৩৫ বছর আগে এই জনপদে ক্রামা নামে নতুন একটি ধর্মের আর্বিভাব হয় ম্রো বর্ণমালাসহ! মেনদ্রো এই ধর্মের অনুসারী হন। তিনি পাসিং পাড়ার ক্রামা ধর্মের পাচং। মানে ধর্মগুরু। ক্রামা ধর্মের অনুসারীদের জন্য বৃহস্পতিবার পবিত্রদিন। এই দিনে তারা প্রার্থনা করেন। পাড়ায় ক্রামা ধর্মের ছোট একটি প্রার্থনালয় আছে।
পাসিং পাড়ায় এখন আর যাওয়ার অনুমতি মেলে না পাড়ার বাইরের মানুষের। সেই অর্থে দেশের সবচেয়ে উচু গ্রামটি এখন পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ। নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে প্রশাসন এই গ্রামে পর্যটক প্রবেশ নিষেধ করে রেখেছে। অথচ পাশেই কেওক্রাডং এর চূড়ায় আপনি থাকতে পারবেন! যাই হোক সে কথা বলার সুযোগ বেশি নেই। এ নিয়ে পাড়ার অনেকের মন খারাপও আছে। এই গ্রামেরই অতিথি হয়ে অল্প সময়ের জন্য আমরা গিয়েছিলাম পাসিং পাড়ায়।
কথা হয় বৃদ্ধ মেনদ্রো ম্রোর সাথে। যার কাছে আছে অসংখ্য গল্পের ভান্ডার। ম্রো সমাজে জুম চাষ শেষ হলে যখন কাজ থাকে না তখন গ্রামের বৃদ্ধরা গল্প শোনায় শিশু-কিশোর-তরুনদের। এই গল্প শুধু রুপকথাই না এই গল্পে গল্পে মূলত সামাজিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন। ম্রো সমাজের অনেক রীতি নীতি সংস্কৃতি উঠে আসে এইসব গল্পে। গ্রামের এই গল্প কথক বৃদ্ধদের অনেকটা সামাজিক শিক্ষক বলা যায়। মেনদ্রো ম্রো তেমনই একজন। যদিও এখন আর আগের চেয়ে কমে গেছে এইসব গল্প বলার প্রচলন।
আকাশের কাছাকাছি গড়ে ওঠা এই গ্রামে ছোট্ট ঘরে মেনদ্রো ম্রো একাই থাকেন। পাশেই আরেকটি ঘরে ছেলে পরিবার নিয়ে থাকেন। এই গ্রামের ভেতর দিয়ে মানুষ আর প্রাণীদের পাশাপাশি মেঘেরাও চলাচল করে। এখানে মেঘ চরে বারোমাস…।
গল্প আড্ডা ঘোরাঘুরি শেষে ফিরে আসার সময় সকালের সোনালি রোদে দাঁড়িয়ে যখন মেনদ্রো হাত নেড়ে বিদায় দিচ্ছিলেন তখন তার মাথায় বাধা চুলের চুড়োয় সূর্যের আলো চকমক করছিলো। পাশেই জালে জমে থাকা শিশির খুটে খুটে খাচ্ছে মাকরসা। যেন তার বুকে হাজার বছরের তৃষ্ণা। মেনদ্রো ম্রো’র দরজায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় সবুজ চিম্বুক পাহাড়। সেখানে ফাইভস্টার হোটেল হবে…। সেখানকার বাসিন্দাদের আপত্তি উপেক্ষা করেই পর্যটন উন্নয়নের নামে বানানো হচ্ছে এই হোটেল। তৈরি হবে বিশাল পর্যটন স্পট। পর্যটন স্পট মানেই তো বর্তমান সাজেক, নীলগিড়ি নিলাচলের মতো জঘন্য এক কংক্রিট পার্ক! স্থানীয় আদীবাসীদের ভেতর এ নিয়ে প্রচন্ড দুঃখ আছে, ক্ষোভ আছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা?
পাসিং পাড়া থেকে চিম্বুকের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ হলো এই ভেবে যে আবার যদি অনেক বছর পর এখানে ফিরে আসি তাহলে হয়তো এই উঠানে দাড়িয়ে দেখতে হবে চিম্বুকের বুকে একটি কংক্রিট দানব দাড়িয়ে আছে উন্নয়নের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে! কিংবা অনেক বছর পর এখানে আর এই গ্রামটিই হয়তো বা থাকবে না, যেভাবে উন্নয়নের নামে আদীবাসীদের গ্রামের পর গ্রাম বিলীন করে দেয়া হয়েছে!