চলতি হাওয়াট্রেন্ডিং খবরব্যবসা ও বাণিজ্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
‘নামে নামে যমে টানে’

মঞ্জুর দেওয়ান: বিজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্য থাকে মানুষের দোরগোড়ায় তার সেবা সম্পর্কে জানানো। নির্দিষ্ট পণ্যটি ব্যবহারের গুণাগুণ সম্পর্কে প্রচার করা। অতিরঞ্জিত করে নিজের পণ্যের ব্রান্ডিং করা-ই থাকে বিজ্ঞাপন দাতা সংস্থার মূল উদ্দেশ্য। পণ্যটির মালিক শ্রেণী স্বীকার করুক আর না করুক, ভোক্তা খুঁজে বের করা কিংবা ভোক্তাকে আকৃষ্ট করাকে কেন্দ্র করেই মূলত নির্মিত হয় বিজ্ঞাপন। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু বিজ্ঞাপন নির্মিত হতে দেখা যায়, যার উদ্দেশ্য কেবল ভোক্তা খুঁজে বের করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা। সমাজের নেতিবাচক কিছু দিককে তুলে ধরে, সেগুলো থেকে বের হয়ে আসাকে ইঙ্গিত করে। অতি সম্প্রতি এমনই একটি বিজ্ঞাপনের দেখা মিলেছে। আর সেটি হলো ইউনিলিভারের জনপ্রিয় ডিটারজেন্ট ব্র্যান্ড ‘সার্ফ এক্সেল’র বিজ্ঞাপন।
আসন্ন হোলি উৎসবকে কেন্দ্র করে বানানো এই বিজ্ঞাপন নিয়ে সমালোচনার ঢেউ বইছে পুরো ভারত জুড়ে। অনেক হিন্দু ধর্মাবম্বীদের মতে, এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মকে ছোট করা হয়েছে। আর তাই সার্ফ এক্সেলের বিপক্ষে ক্ষোভ উগড়ে দিতে হ্যাশট্যাগ বয়কট সার্ফ এক্সেল এবং হ্যাশট্যাগ বয়কট হিন্দুস্তান ইউনিলিভার লিখে পোস্ট হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মাইক্রোসফটের উপর! হ্যা, এমনটি-ই হচ্ছে ভারতে। সার্ফ এক্সেলের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে ’মাইক্রোসফট এক্সেল’ কে অনেকে ডাউনগ্রেড দিচ্ছেন। অনেকটা ‘নামে নামে, যমে টানে’ প্রবাদের মতো আর কি! উত্তাপ ছড়ালো কে, আর গলিত হচ্ছে কে! ডাউনগ্রেডের ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছে মাইক্রোসফট এক্সেল।
সদ্য নির্মিত বিজ্ঞাপনটি অনেক মহলে প্রশংসা কুড়ালেও সমালোচনা এড়াতে পারছে না। অথচ, এই বিজ্ঞাপনটি হতে পারতো সম্প্রীতির আরেক নাম! মিলে মিশে সমাজে বাস করার সুন্দরতম ভিজ্যুয়াল উদাহরণ হতে পারতো সার্ফ এক্সেলের নির্মিত বিজ্ঞাপনটি। রং থেকে নিজের বন্ধুকে রক্ষা করে মসজিদে পৌঁছে দেয়ার সুন্দরতম একটি কাজকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রয়াস দেখে অনেক সমাজকর্মীরাও হয়তো অবাক না হয়ে পারবেন না। ভালো কাজের উদাহরণ কে হিন্দু-মুসলিম’ ’প্রেম’ বলে চালানোর এক অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে! এর ফলে মাইক্রোসফট এক্সেল ব্যবহারকারীরা এক্সেলে ঢুকলেই সার্ফ এক্সেলের বিজ্ঞাপনের কথা মাথায় আনছেন! আর মন থেকে ধিক্কার দিচ্ছেন! এক্সেল শব্দটি-ই যেনো যতো নষ্টের মূল! এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, সার্ফের (সার্ফ এক্সেল) সঙ্গে অংশীদার হওয়ার আগ পর্যন্ত এবং ধর্মবিরোধী বিজ্ঞাপন প্রকাশের আগ পর্যন্ত আমি অ্যাপটি পছন্দ করতাম। এখন আমি যখন আমি ওয়ার্ড এক্সেলে কোনো কিছু পড়তে যাই তখনই হিন্দুবিরোধী প্রচারণা সম্পর্কে মাথায় আসে। এই কাজ করার জন্য তোমাদের প্রতি ধিক্কার জানাই।
আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, সার্ফ এক্সেলের বিজ্ঞাপনের কারণে আমি অ্যাপটিকে এক স্টার দিচ্ছি ! এক্সেলের বেশ কিছু নতুন অ্যাপটিকে ‘দেশ বিরোধী’ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। অথচ হিন্দুস্তান ইউনিলিভার’র সাথে মাইক্রোসফট এক্সেলের কোনো সম্পর্ক নেই। লেনাদেনা না থাকা সত্ত্বেও সার্ফ এক্সেলের বিজ্ঞাপনের মাশুল গুনছে এক্সেল। অবশ্য এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগে নেটিজেনদের তোপের মুখে পড়েছিলো ’স্ন্যাপচ্যাট’ ও। নামের সঙ্গে মিল থাকায় সেবার বিপত্তিতে পড়তে হয়েছিলো ’স্ন্যাপডিল’র। ব্যবহারকারীরা তাদের ক্ষোভ ঝাড়তে সমানে ডাউনগ্রেড দিয়ে যাচ্ছিলেন স্ন্যাপডিল কে। ডাউনগ্রেডের পাশাপাশি আন-ইনস্টল মিশনেও নেমেছিলো এর ব্যবহারকারীরা! গতবছর ব্যাপক ব্যবসায়ীক ক্ষতির মুখে পড়েছিলো ভারতের অনলাইন মার্কেটের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠানটি। অনেকে স্বেচ্ছাসেবী হয়ে বুঝানোর ’দায়িত্ব’ নিলেও বলার মতো কোনো কাজ হচ্ছেনা। সার্ফ এক্সেলের সাথে যে মাইক্রোসফট এক্সেলের কোনো লেনাদেনা নেই সে কথা বলেও লাভ হচ্ছেনা। নিয়মিত বিরতিতে ডাউনগ্রেড দেয়া হচ্ছে মাইক্রোসফট এক্সেল কে!
আলোচিত বিজ্ঞাপনটি দেখার জন্য ক্লিক করুন এই লিংকে https://bit.ly/2EKgs2X