জাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
পরিছন্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে যারা

আরিফুল আলম জুয়েল: জ্বী! আপনি একদম ঠিক দেখেছেন। এগুলো বিভিন্ন সাইজ ও রঙের প্লাস্টিক বোতল। নিচের যে স্থিরচিত্র টি দেখতে পাচ্ছেন সেখানে কি পরিমান প্লাস্টিকের বোতল আছে কেউ কি ধারণা করতে পারছেন বা অনুমান করতে পারছেন! পারছেন না, আমিই বলে দিচ্ছি, প্লাস্টিকের বোতলের সংখ্যা এখানে ৩০ লাখ।
বিডি ক্লিন নামের একটি সংগঠন নভেম্বর ১০ থেকে ডিসেম্বর ১০ – এই এক মাসে গোটা দেশ থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করেছে। বিডি ক্লিনের এই সদস্যরা কখনো রাস্তা, কখনো বা জলাশয়, কখনো কখনো কাদামাটিতে প্রায় ডুবন্ত, আবার কখনো ড্রেনেজ থেকে পরিত্যক্ত এ বোতলগুলো সংগ্রহ করেছেন। যে প্লাস্টিক মাটির সাথে মিশে না, পরিবেশকে নষ্ট করে দিচ্ছে, জলবায়ু ও পরিবেশ সংকটকে তীব্রতর করছে সেই প্লাস্টিকগুলো তারা দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে সংগ্রহ করেছে। সবুজ রংয়ের টি শার্ট পরিহিত একদল প্রাণোচ্ছল তরুণরা দেবদূতের মতো বিডি ক্লিনের সদস্য হয়ে ছড়িয়ে আছে সারাদেশে। তারা এই একমাসে কল্পনাতীত এ কাজটি করেছে।
তারা কেন করেছে এটা জানেন, এবারের বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য। তারা একটি প্রদর্শনী করেছে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে। প্রদর্শনীর মাধ্যমে সচেতন করতে চায় সবাইকে, যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলতে, প্লাস্টিকের বোতল না ফেলতে।
তারা এখনো প্রতিদিন জাতীয় শহীদ মিনার বিকেল বেলা নিজ হাতে পরিস্কার করে! ৩০ লাখ শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে পরিবেশের জন্য মারত্মক ক্ষতিকর ৩০ লাখ প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে তার রিসাইকেল নিশ্চিত করতে এ আয়োজনের উদ্যোগে নিয়েছে সংগঠনটি। ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে এ প্রদর্শনী চলেছে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রাজধানীর ওয়ারলেস রোডের বনানী বিটিসিএলের টিএনটি মাঠে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে কি তৈরি করেছে জানেন— জনসচেতনতামূলক এই প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করেছে ১৯ ফিট বাই ৭১ ফিট একটি নৌকা, যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন। এছাড়া ছিল প্লাস্টিক বোতলের ঢাকনা দিয়ে তৈরি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিসহ বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রতিকৃতি এবং নানা ধরনের দৃষ্টিনন্দন সামগ্রী।
কেন এই ব্যাতিক্রমি প্রদর্শনী- তারা দেশপ্রেমে সিক্ত হয়ে আমাদেরকে দেখাতে চায়, বুঝাতে চায়- দেশকে ভালবাসা মানে শুধুমাত্র মুখে বুলি আওড়ানো নয়, দেশটাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখাও দেশপ্রেমের অংশ। ব্যবহারের পরে প্লাস্টিকের বোতলগুলো যত্রতত্র ছুড়ে না ফেলে তা বিভিন্ন উপায়ে পুনরায় ব্যবহারে উৎসাহিত করতেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
বিজয় দিবসকে উদযাপন করতে এর চেয়ে দারুণ ইনিশিয়েটিভ আর কিছু হতে পারে? আর আমরা বিজয় দিবস উদযাপন করি কিভাবে, একটু বলবো—বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সাথে হিন্দী গান মিলিয়ে একসাথে মাইক বাজিয়ে, কাঙালীভোজ আয়োজন করে নিজের সাঙ্গপাঙ্গ মিলে সাবাড় করে, মুখে মুখে দেশপ্রেমের বুলি আওড়িয়ে নিজ স্বার্থে দেশের বারটা বাজিয়ে, বড় বড় সংলাপের আয়োজন করে, ফেসবুকে বড় বড় স্ট্যাটাস দিয়ে! সবুজ টি শার্ট পড়া এই স্বপ্নবাজ তরুণদল যে দেশপ্রেম দেখালো তা অটুট থাকুক আজীবন।
তাদের মধ্যের দেশপ্রেম দেখে আমরাও যেন শিক্ষা নেই, আমরা যেন তাদের কাছে থেকে শিখি দেশটাকে কতভাবেই না ভালবাসা যায়!