বাণিজ্য বার্তা
প্রান্তিক কৃষকদের পাশে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স

বন্যা আক্রান্ত এলাকায় শস্য উৎপাদন এবং পশু পালনে বীমা সেবার মাধ্যমে ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রান্তিক কৃষকদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স।
প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জামানত বিহীন সহজ শর্তে ঋণ প্রদানে কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের সাথে সাথে খামারের উৎপাদনে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি আনতে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সাথে যৌথভাবে কাজ করছে দেশের অন্যতম বীমা প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি, পশু মারা যাওয়া কিংবা আংশিক বিকলাঙ্গ হওয়ার ফলে গরু খামারিদের ব্যবসায় ক্ষতি কমিয়ে আনতে সুরক্ষা প্রক্রিয়া চালু করেছে গ্রীন ডেল্টা এবং ব্র্যাক ব্যাংক ।
দেশের বীমা খাতে প্রথম বারের মত পশু খামারিদের নিয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য তৈরী করা হয়েছে, যার মাধ্যমে দূরে বসেও প্রান্তিক চাষীদের বীমাকৃত পশু ব্যবস্থাপনা সম্ভব হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। বর্তমানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মাঠ পর্যবেক্ষন করার পাশাপাশি পশুর স্বাস্থ্য কার্ড ব্যবস্থাকে ডিজিটাল মাধ্যমে নিয়ে আসতে কাজ করছে বীমা প্রতিষ্ঠানটি।
এই প্রকল্পের পরবর্তী ধাপে, একই মাধ্যমে খামারের তথ্য এবং কৃষকদের সাথে পশুসম্পদ চিকিৎসকদের সংযোগ স্থাপন করা হবে। খামারের বীমার আওতায় থাকা পশুদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন হবে এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় কৃষকগণ ঋণের আবেদন এবং পশু বিক্রি করতে পারবেন।
এ বছরের প্রথম তিন মাসে ১৭২টি খামারের ৬৭৯ টি পশু ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা দিতে গ্রীন ডেল্টা প্রায় ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা মূল্যমানের সম্পদ বীমার আওতায় নিয়ে এসেছে। এই সময়কালে কৃষকদের মাঝে বীমা দাবির ১৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সূচক ভিত্তিক শস্য বীমার আওতায় হাওর অঞ্চলের ৩১৬ কৃষককে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বীমা দাবি পরিশোধ করেছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর হাওর অঞ্চলের ৩১৬ জন বোরো ধান চাষী চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল থেকে ২২ মে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের সূচক ভিত্তিক শস্য বীমার অধীনে ছিলেন। এরই মধ্যে ২০ মে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোনিক ঝড় আম্ফান। বীমা চলাকালীন সময়ের শেষ তিন দিনে এই সাইক্লোনের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় হাওর এলাকার কৃষকেরা শস্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, যার ফলশ্রুতিতে সেই অঞ্চলের কৃষকরা এই বীমা দাবি পেয়েছেন।
সারাদেশে করোনা মহামারীর প্রকোপ জনজীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে, যার ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পায়নি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোও। তা স্বত্তেও গ্রীন ডেল্টা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বীমা দাবি পরিশোধের সিদ্ধান্তে এগিয়ে এসেছে।
কর্মকর্তারা বলেন, গ্রীন ডেল্টা সবসময় বিশ্বাস করে এসেছে যে দারিদ্র্যপীড়িত কৃষকদের জন্য সূচক ভিত্তিক শস্য বীমা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি নিরসনের মাধ্যম হতে পারে এবং তাদেরকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করতে পারে। আর্থিক ব্যবস্থায় বীমার প্রবেশ আর্থিক অবকাঠামো ও সার্বিক অর্থনীতির চাকাকেও মজবুত করবে।
গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান অক্সফাম বাংলাদেশ এবং স্থানীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্যানক্রেড ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন পরীক্ষামূলকভাবে ২৮ এপ্রিল সিলেটের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর হাওর এলাকায় ৩১৬ জন কৃষককে সূচকভিত্তিক শস্য বীমা সুবিধা প্রদান করেছিল।
বন্যাপ্রবণ হাওর এলাকায় আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকিগ্রস্থ কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অর্থমন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তত্বাবধানে এই পরীক্ষামূলক উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছিল।
হাওর এলাকার কৃষকদের এই বীমা দাবি প্রাপ্তি গ্রীন ডেল্টার বিশ্বাসের সত্যতা ও হাওর অঞ্চলের এই পরীক্ষামূলক উদ্যোগের সফলতাই নির্দেশ করে। এই সফলতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বলা যায়, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সকল কৃষককে বীমা সুরক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হবে।
পাশাপাশি, সিনজেনটা ফাউন্ডেশনের সাথে মিলিতভাবে দারিদ্র পীড়িত প্রান্তিক কৃষকদের সাহায্য করেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফাম এবং গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্স। সিনজেনটা ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলায় ৬০৩১ জন আলু চাষীদের বীমা দাবি পরিশোধ করেছে গ্রীন ডেল্টা। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সিনজেনটা ফাউন্ডেশন ফর সাসটেইনেবল আগ্ররিকালচার (এসএফএসএ)। প্রান্তিক কৃষকদের কাছে পৌঁছতে সহযোগিতা করেছে স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জিইউকে, ইএসডিও, ইজাব গ্রূপ এবং ফার্মারস হাব।
প্রান্তিক কৃষকদের পাশাপাশি, কৃষিখাতে অনানুষ্ঠানিক কাজে জড়িত শ্রমিকদের জীবিকা রক্ষায় এই বন্যার মৌসুমে পাশে ছিলো গ্রীন ডেল্টা। অন্যান্য বছরের মত, অক্সফাম এবং এসকেএস ফাউন্ডেশনের মত স্থানীয় অংশীদারদের সহযোগিতায় বন্যা দুর্গত এলাকায় শ্রমজীবি মানুষদের সূচক ভিত্তিক বন্যা বীমার আওতায় নিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি।
যখন গাইবান্ধায় অক্সফাম এবং গ্রীন ডেল্টা কৃষি শ্রমিকদের জীবিকা রক্ষায় কাজ করছে তখন মানব মুক্তি সংঘ (এমএমএস) নামে একটি এনজিও সুনামগঞ্জের দুটি ইউনিয়নে একই কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে। এই প্রকল্পের আওতায় গ্রীন ডেল্টা দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫০০ জন কৃষি শ্রমিককে সেবা প্রদান করে।
বাংলাদেশের মৌসুমী বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় সূচক ভিত্তিক ‘বন্যা বীমা’ সেবার আওতায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচী (ডাব্লিউএফপি) এর সাথে। এক্ষেত্রেও গ্রীন ডেল্টার সাথে ছিলো অক্সফাম। চলতি অর্থছরের প্রথম দিনে ( ১ জুলাই) বন্যা বীমা চালু করে গ্রীন ডেল্টা। এই মৌসুম চলাকালীন সময়ে কুড়িগ্রামের সদর এবং চিলমারী উপজেলার যাত্রাপুর এবং রানীগঞ্জ ইউনিয়নের ২ হাজার অপ্রাতিষ্ঠানিক কৃষি শ্রমিকের জীবিকা নিরাপদ করবে বন্যা বীমা।
করোনা মহামারীর পাশাপাশি পরিবর্তিত জলবায়ুতে নিয়মিত বৃষ্টিপাত বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। শহর গ্রামের বাসা বাড়িতে পানি ওঠাসহ শস্য উৎপাদনে দুর্দশার শিকার হচ্ছে কৃষকরা।
কোরীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (কোইকা) অর্থায়নে বন্যা বীমা কৃষকদের ফসল উৎপাদনে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় সাহায্য করার মাধ্যমে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখছে।
এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে কোইকার কান্ট্রি ম্যানেজার ইয়াং-আহ দো বলেন সূচক ভিত্তিক বন্যা বীমাসহ পুর্বাভাস অনুযায়ী অর্থায়ন কৃষকদের কষ্ট এবং ক্ষতি কমাচ্ছে ।
অক্সফামের কান্ট্রি ডিরেক্টর দীপংকর দত্ত বলেন প্রখর ঝুঁকি এবং বৈষম্য মোকাবিলায় সরকারি পর্যায় থেকে নতুন চালু করা সূচক ভিত্তিক বন্যা বীমার পরিধি বাড়বে।
গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী ফারজানাহ চৌধুরী বলেন বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করে কৃষি শ্রমিকদের বীমা সেবায় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অংশীদার ভিত্তিক উদ্যোগ ‘নতুন মাত্রা’ যোগ করেছে।
জুলাই মাসে, শস্য বীমায় গ্রীন ডেল্টার অংশীদার প্রতিষ্ঠান – সিনজেনটা ফাউন্ডেশন ফর সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার বাংলাদেশ, ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, গ্রাম উন্নয়ন কর্ম এবং ফার্মার হাবের কর্মীদের জন্য আমন শস্য নিয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে কর্মশালা আয়োজন করা হয়। আগস্ট মাসের ১০ তারিখ থেকে ১৩ হাজার ৩৬৬ জন কৃষককে বীমার আওতায় নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়েছে।
অতি সম্প্রতি, শস্য বীমার অংশীদার এসএফএসএ-এর নেতৃত্বে ব্র্যাক এবং গ্রীন ডেল্টা ‘ইনসুরেসিলেন্স সলিউশন ফান্ড (আইএসএফ) এ যুক্ত হয়েছে। আগামী দুই বছরে রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগের ৭০ হাজার কৃষকের পরিবারকে বীমার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নিরাপদ করা হবে।
এগিয়ে যাওয়ার পথে, প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান এবং টেকসই কৃষিখাত উন্নয়নে উদ্ভাবনী বীমা সেবা প্রদানে আশাবাদী গ্রীন ডেল্টা। এই লক্ষ্যে সেবা পরিধি এবং অংশীদারিত্ব বাড়ানোর মাধ্যমে কৃষিখাত এগিয়ে নিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।