জাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
প্লাস্টিকে ব্যবহৃত কোড: আমাদের যে বার্তা দেয়

মাহমুদুর রহমান: বহুদিন হলো আমরা প্লাস্টিক ব্যবহার করছি। ইথিলিনের পলিমার দিয়ে পলিথিন এবং তারচেয়ে উন্নত ভার্সন প্লাস্টিক এখন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। স্বল্প খরচের কারণে উৎপাদন এবং ব্যবহার দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথম দিকে স্বল্প পরিসরে ব্যবহার হলেও দিনদিন এর ব্যবহার বেড়েছে। প্লাস্টিক ব্যাগ এবং বোতল থেকে শুরু করে এখন থালা বাসন থেকে শুরু করে উন্নত প্লাস্টিকের শেলফও তৈরি হচ্ছে। বহুল ব্যবহারের সাথে সাথে প্লাস্টিকের নানা ক্ষতিকর প্রভাবের কথাও জানা যাচ্ছে। সে ক্ষতির কারন মূলত প্লাস্টিকের অপরিকল্পিত ব্যবহার এবং পুনর্ব্যবহারের উপযুক্ত পদ্ধতির অভাব। আসলে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ না করেও সুচিন্তিত ব্যবহার আমাদের পরিবেশ ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে। ১৯৮৮ সালে দ্য সোসাইটি অব দ্য প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি (SPI) অর্থাৎ প্লাস্টিক শিল্পের সোসাইটি একটি কোডিং পদ্ধতি শুরু করে, যাতে রিসাইক্লিং বা পুনঃব্যবহারের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিককে শ্রেণী বিভাজন করতে সহজ হয়। এজন্য আমাদের প্লাস্টিকের নানা ক্যাটাগরি সম্পর্কে জানতে হবে।
প্রথম ক্যাটাগরি: যে প্লাস্টিকের গায়ে রিসাইক্লিংয়ের ত্রিভুজ চিহ্নের মধ্যে 1 লেখা থাকে, সেগুলো এই ক্যাটাগরির। সিম্বলের নিচেই লেখা থাকে PETE অথবা PET (Polyethylene Terephthalate)। এই ধরনের প্লাস্টিক সাধারণত ব্যবহার করা হয় পানি, পানীয় সোডা ও তেলের জন্য বোতল বা কন্টেইনার তৈরিতে। আমাদের দেশে মিনারেল ওয়াটার এবং সমস্ত বেভারেজের বোতল এই ক্যাটাগরির প্লাস্টিক দিয়েই তৈরি।এ ধরএনের প্লাস্টিকে টেরেফথালেট পলিথিলিন পদার্থের প্রভাব রয়েছে। ব্যবহার শেষে এই ক্যাটাগরির প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করে তৈরি করা হয় গালিচা, ব্যাগ, ছোট ছোট খেলনা ইত্যাদি।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরি: রিসাইক্লিংয়ের ত্রিভুজ আকৃতিটির নিচে HDPE (High Density Polyethylene) লিখে বোঝানো হয়
প্লাস্টিকটিতে উচ্চ ঘন পলিথিলিন পদার্থের প্রভাব রয়েছে। এ ধরনের প্লাস্টিকে রিসাইকেল সিম্বলের মাঝে লেখা থাকবে 2 সংখ্যাটি। শ্যাম্পুর বোতল, দুধের জগ, ঘর পরিষ্কারের পাত্র, জুসের বোতল, খাদ্যশস্য রাখার বৈয়ম, ডিটারজেন্ট পাউডারের বৈয়ম, মোটরের তেল রাখার গ্যালন, দই ও মাখনের কন্টেইনার ইত্যাদি তৈরিতে এই প্লাস্টিক ব্যবহার হয়। ব্যবহার শেষে এই প্লাস্টিককে রিসাইকেল করে কলম, বেঞ্চ, টেবিল ইত্যাদি। এ ধরনের প্লাস্টিক নিরাপদ। তবে বেশিদিন ব্যবহারের জন্য কোনো প্লাস্টিকই নিরাপদ নয়।
তৃতীয় ক্যাটাগরি: রিসাইকেল সিম্বলের মাঝে 3 লেখা পলিভিনাইল ক্লোরাইড পদার্থে তৈরি এ ক্যাটাগরির প্লাস্টিকে V or PVC (Vinyl) লেখা থাকে। অস্বাস্থ্যকর এই প্লাস্টিক গর্ভপাতের মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা সৃষ্টি করে। এ প্লাস্টিকে রয়েছে এমন জীবাণু, যা দীর্ঘমেয়াদী ঘুমন্ত ক্যান্সার, হাড় ক্ষয় ও যকৃতের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিভিন্নভাবে এটি পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। তবুও এই প্লাস্টিকের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। অদ্ভুত ব্যপার হলো খাবার মোড়ানোর প্লাস্টিক এই ক্যাটাগরির।

চতুর্থ ক্যাটাগরি: এই ক্যাটাগরির প্লাস্টিকের গায়ে রিসাইক্লিংয়ের ত্রিভুজ আকৃতিটির নিচেই লেখা থাকে LDPE (Low Density Polyethylene)। এর মানে হলো, প্লাস্টিকটিতে লঘু ঘনত্বের পলিথিলিন পদার্থের প্রভাব রয়েছে এবং রিসাইক্লিং সিম্বলের মাঝেই লেখা থাকবে 4 সংখ্যাটি। এই প্লাস্টিকের ব্যবহার পাওয়া যায় শপিং ব্যাগ, পোশাক, গালিচা, হিমায়িত খাবার, রুটির ব্যাগ, ও খাবার মোড়ানোর পলিথিন ব্যাগে। রিসাইক্লিং পদ্ধতি যদিও এই প্লাস্টিকটির বাছাই প্রক্রিয়ায় এখনও স্বীকৃতি দেয়নি, তবুও এটি নিরাপদ প্লাস্টিক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পঞ্চম ক্যাটাগরি: নিরাপদ প্লাস্টিকগুলোর মধ্যে এই ক্যাটাগরির প্লাস্টিক অন্যতম। এ ক্যাটাগরির প্লাস্টিকের গায়ে PP (Polypropylene) লেখা থাকে যার অর্থ, প্লাস্টিকটিতে পলিপ্রোপলিন পদার্থের প্রভাব রয়েছে। এ ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় কেচাপের বোতল, সিরাপের বোতল, এবং ঔষধের বোতল ইত্যাদিতে।
ষষ্ঠ ক্যাটাগরি: PS (Polystyrene) লেখা অর্থাৎ পলেস্টারিন পদার্থের প্রভাব যুক্ত এ ধরনের প্লাস্টিকে রিসাইকেল সিম্বলের মাঝে 6 লেখা থাকে। রিসাইক্লিং করা বেশ কষ্টসাধ্য এই ক্যাটাগরির প্লাস্টিক। ফলে এ ধরনের প্লাস্টিক পরিবেশের খুবই ক্ষতি করে। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাও সৃষ্টি করে থাকে। এ ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার হয় ডিমের খাঁচা, প্লাস্টিকের তৈরি মগ, কাপ, পিরিচ ইত্যাদিতে।
সপ্তম ক্যাটাগরি: উপরের ছয় ক্যাটাগরির বাইরের প্লাস্টিক এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত। এই প্লাস্টিক বিভিন্ন পদার্থের মিশ্রণের মাধ্যমে তৈরি হয়, যা পলিকার্বনেটের অন্তর্ভুক্ত। সানগ্লাস, আইপড কেস, কম্পিউটারের ক্ষেত্রে নাইলন, এবং বুলেটপ্রুফ সামগ্রীতে এ ক্যাটাগরির প্লাস্টিক ব্যবহার হয়। এর মধ্যে বিষাক্ত bisphenol-A (BPA) রয়েছে। এই প্লাস্টিকে BPA– থাকার কারণে এতে হরমোনের ব্যাধি, বন্ধ্যাত্ব, হাইপার অ্যাক্টিভিটি, প্রজনন সমস্যা এবং স্বাস্থ্যগত অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কিত বিষয় ঘটতে পারে। তাই এমন প্লাস্টিক এড়িয়ে যাওয়া উচিত। রিসাইকেল সিম্বলের মাঝেই লেখা থাকবে 7 সংখ্যাটি।
কীভাবে বাছাই করবো কোন প্লাস্টিক ভালো? অপাচ্য বলে সবধরনের প্লাস্টিকই এড়িয়ে চলা উচিত। কিন্তু আজকের দিনে নানা কারণে প্লাস্টিক এড়িয়ে চলা অসম্ভব। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন ৩, ৬ এবং ৭ সংখ্যার প্লাস্টিকগুলো এড়িয়ে চলা ভালো। আর ১, ২, ৪ এবং ৫ সংখ্যার প্লাস্টিকগুলো তুলনামূলক নিরাপদ বলে তারা মনে করেন। তবে এখনই সময় প্লাস্টিকের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। এবং সেজন্য প্লাস্টিকের বিকল্প খোঁজা প্রয়োজন।