জাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
ফায়ার ফাইটার: তোমাদের জন্য ভালোবাসা

বাশার আল আসাদ: প্রতি দিনের মতোই নানা কাজের ব্যস্ততায় মূখর ছিল রাজধানী। হঠাৎ তখনই ঢাকার বনানীতে দেখা দিল ভয়ঙ্কর এক অগ্নিকান্ড। এর শুরু হয় এফআর টাওয়ারে গতকাল দুপুরের দিকে। চোখের পলকে নিষ্ঠুর-সুন্দর লাল-কমলা নারকীয় আগুন গ্রাস করে নিল এফ আর টাওয়ার। এই পৈশাচিত শক্তির বিরুদ্ধে অদম্য সাহস বুকে নিয়ে মানবতার সেবায় সবার আগে এগিয়ে এলো ফায়ার ফাইটাররা। সোজা বাংলায় যাদের বলা হয় দমকল কর্মী। উদ্ধার কাজে যোগ দেয় নৌ ও বিমান বাহিনীও।
আমরা সবাই খবর পড়েছি বা দেখেছি, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের ১৭টি ইউনিট এই ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছেন। খুব বেশি হলে এতে কর্মী সংখ্যা উঠে আসে। তবে, কেউ কি লিখেছে বা বলেছে, এ নারকীয় আগুনের সঙ্গে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করছেন আমাদের সূর্যসন্তান এই ফায়ার ফাইটাররা। যাদের কোন ভয় যেন নেই, বিকারহীনভাবে আগুন মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে আগুনেরই মাঝে। এর মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতির স্বল্পতাসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতা। ঢাকা শহরে আগুন নেভানোর কাজে অনেক সময় সরু রাস্তা ও সংকীর্ণ জায়গার জন্য কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হয়। বাংলার এই দামাল ছেলেদের মহান সেবার নিদর্শন আমরা দেখেছি বেশ কয়েকবারই। তাজরিন, রানাপ্লাজা, নিমতলী, চুরিহাট্টায় সর্বশেষ বনানী।
ফায়ার ফাইটারদের স্যালুট। ভাবনা আসতেই পারে, কতো বড় মন হলে একজন ফায়ার ফাইটার হওয়া যায়। একজন কর্মী থেকে বাহিনী প্রধান পর্যন্ত সবাইকে দেখেছে বনানী ট্রাজেডির সময়।
বনানীতে দিনের শুরুটা হয়েছিল কর্মব্যস্ততা দিয়ে কিন্তু দিনটি শেষ হলো ভয়াবহ প্রাণ কেড়ে নেয়া আগুনের মধ্যে দিয়ে। আগুন না নেভা পর্যন্ত নিরলস-নির্বিকারভাবে কাজ করেছেন ফায়ার ফাইটাররা।
যত বেশি জীবন-সম্পদ রক্ষা করা যায় সে চেষ্টায় হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আগুন মোকাবিলায়। তারা কিছুতেই যেন হার মানবে না। হয়তো বা নিজে দগ্ধ বা মরেও যেতে পারে- এসব কিছুকেই তারা পরোয়া করেন না। তবে, অনেকেই বলতে পারেন- এটাই তাদের কাজ। বিশেষ করে আপনি (ফায়ার ফাইটার) যখন জানেন, কি করতে যাচ্ছেন। আগুন লাগলে তা কত ভয়াবহ তা জেনেও আপনি সেই নারকীয় তান্ডব থেকে মানবতাকে-মানুষকে বাচাঁতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। এদিকে এতো ঝুঁকির পরও প্রতিটি দুর্যোগে সময় লাগলে ও সফল হয়েছে, আগুনকে বসে এনেছে ফায়ার সার্ভিস। অধিক মাত্রায় জানমালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছে।
বনানী আগুনের দূর্ঘটনায় সাধারন মানুষ ও ছাত্ররা অনেকেই সাহায্য করেছেন। দুর্যোগে বাঙালি সব সময়ই এক হয়ে লড়াই করে। তাদের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাধারণ মানুষ। যে যেভাবে পেরেছেন সবাই উদ্ধারকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করেন। এর মধ্যে রয়েছেন শিশুরাও।
এমনই একটি শিশুর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। ছবিতে দেখা যায়, একটি শিশু পানির পাইপের ছিদ্র বন্ধ করার জন্য এর ওপর বসে আছে। এ ঘটনায় প্রশংসায় ভাসছে শিশুটি। আগুন নেভাতে এগিয়ে আসেন ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া কিছু মানুষ। এ সময় আশপাশের এলাকায় পানির সন্ধান করা, পাইপ টেনে নিয়ে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষও। তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উৎসুক মানুষের মোবাইলে ছবি ও ভিডিও ধারণ করা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আগুন লাগার পর ঘটনাস্থলে আসা অনেক মানুষই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসার পর পাইপ টেনে এনেছে। উপরের তলাগুলোতেও যাতে পানির ফ্লো যায় সেজন্য পাইপ নিজেরাই কাঁধে তুলে ধরেছেন।
তারা ক্যামেরা হাতে ফেসবুকে ভাইরালের উন্মাদনায় ছবি তুলতে আর ভিডিও করতে ব্যস্ত না। কিন্তু সংখ্যায় এটা অল্প হলেও এই মানুষগুলো অনেক আহতদের হাসপাতালে নিতে সাহায্য করেছেন। বিশেষ করে যারা আতঙ্কিত হয়ে উপর থেকে লাফ দিয়েছেন, তাদের তাৎক্ষণিক সাহায্য করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। নীচ থেকে চিৎকার করে সাহস যোগাবার চেষ্টা করেছেন যেন উপর থেকে মানুষগুলো লাফ না দেয়। এসব মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
এসব মানুষদের কথা আমরা কেউই বিস্তারিত লিখিনি বা জানাইনি। তাই মনে একটা তাগিদ ছিল। তারাও মানুষ, তাদেরও স্ত্রী-সন্তান ও স্বজন রয়েছে। তারপরও তারা একটু ব্যতিক্রমী বড় মাপের মানুষ। আলাদাভাবে একটু ধন্যবাদ দিলে কি ছোট হয়ে যাই আমরা!
এভাবেই ফায়ার ফাইটার নামের দেবদূতরা ধ্বংসাত্মক আগুনসহ বড় বড় দুর্যোগে বরাবরই আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান। এদের মন-দিল কি হিরে দিয়ে বাঁধানো! বড়ই কঠিন এক প্রশ্ন, এইসব মানুষ মানবতার জন্য খুবই মূল্যবান। এসব দৈব দুর্যোগে প্রধান কাজটি করে ফায়ার ফাইটার নামের সোনার ছেলেরা। তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের আন্তরিক ভালবাসা। সালাম ফায়ারম্যান!