খেলা
ফুটবলের অবিসংবাদিত সম্রাট ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার

সাইদুর রহমান সেতুঃ
জার্মানির যেকোনো রাস্তার মোড়ে গিয়ে যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করেন, “বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে”?তাহলে প্রায় শতভাগ নিশ্চিন্ত থাকুন যে উত্তর পাবেন সেটি হলো, “ডার কাইজার”,যার বাংলা মানে হলো সম্রাট।জ্বি হ্যা,ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার যে জার্মানিতে সম্রাট বিশেষণেই পরিচিত।স্বাভাবিকভাবেই আপনার মনে এখন এই প্রশ্ন উদয় হওয়ার কথা কেনো জার্মানিতে তো বটেই, প্রায় পুরো ফুটবল বিশ্বের কাছে বেকেনবাওয়ার ফুটবলের সম্রাট নামে পরিচিত?গ্যারান্টি দিয়ে বলছি কারণগুলো জানার পরে একবার হলেও আপনার মনে হতে বাধ্য যে, “সত্যিকারের ‘কাইজার’ই বটে এই বেকেনবাওয়ার”।এই পৃথিবীতে যেই দুইজন মাত্র খেলোয়াড় রয়েছেন যারা একইসাথে খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন তাদের মধ্যে বেকেনবাওয়ার একজন।তবে একই সাথে অধিনায়ক হিসবে বিশ্বকাপ জয় এবং কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর রেকর্ড রয়েছে একমাত্র বেকেনবাওয়ারেরই।১১ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ এ জার্মানির মিউনিখের এক ডাক কর্মকর্তার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন বেকেনবাওয়ার।অবিশ্বাস্য প্রতিভা থাকায় সাফল্যের জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি তাকে।১৯৬৫ সালে যখন বেকেনবাওয়ারের বয়স মাত্র ২০ বছর, তখনই তার ডাক পড়ে পশ্চিম জার্মানির হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামার।সেই থেকে শুরু, তারপরে ১৯৭৭ পর্যন্ত ১০৩ টি ম্যাচে বেকেনবাওয়ার খেলতে নামেন জার্মানির হয়ে।যার ভিতরে ছিল তিনটি বিশ্বকাপের আসর।জার্মানির দুইটি বিশ্বকাপ জয়ে বেকেনবাওয়ারের রয়েছে অনন্য অবদান।দুইবারের ইউরো সেরার খেতাব পাওয়া বেকেনবাওয়ার জায়গা করে নেন ফিফার ফুটবল ইতিহাসের ‘ড্রিম টিমে’।খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুতে বেকেনবাওয়ার খেলেছেন একজন মিডফিল্ডার হিসেবে।তবে সময়ের পরিক্রমায় নিজেকে নিয়ে যান জার্মান দলের রক্ষণভাগের অবিসংবাদিত নেতার আসনে।আধুনিক ফুটবলে সুইপারের যে দায়িত্ব দেখা যায় তার প্রথম প্রবক্তা বেকেনবাওয়ার।রক্ষণের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি অবিশ্বাস্য দক্ষতায় প্রতিপক্ষকে চমকে দেয়ার মতো আক্রমণ করতেন বেকেনবাওয়ার।বেকেনবাওয়ার প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন ১৯৭০ সালে।নিজের ক্যারিয়ারে প্রথম আসরেই মিডফিল্ডার হিসেবে ৪ টি গোল করে সবার নজর কাড়েন বেকেনবাওয়ার।সেই আসরে ইংল্যান্ডের কাছে ফাইনালে হেরে যায় জার্মানি।তবুও বিশ্বের কাছে নিজের আগমনী বার্তা জোরালো ভাবেই পৌছে দিতে পেরেছিলেন বেকেনবাওয়ার।১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ইংল্যান্ড হারিয়ে আগের বিশ্বকাপের প্রতিশোধ নেয় জার্মানি, যেখানে অগ্রণী ভূমিকা রাখে বেকেনবাওয়ারের গোল।এর পরে ইতালি বনাম জার্মানির ম্যাচ, যেটি পরিচিত ‘গেইম অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামে।সেই ম্যাচে প্রচন্ড আঘাত পান বেকেনবাওয়ার।কাধের জয়েন্ট থেকে খুলে যায় হাত, তবুও বীরোচিত ভাবে খেলে যান বেকেনবাওয়ার।কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকায় ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে হেরে গিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় জার্মানি।১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ, এইবারে আগের দুইবারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী টিম নিয়ে মাঠে নামে জার্মানি।জার্ড মুলার-ব্রেইটানল-বেকেনবাওয়ারদের নিয়ে গড়া জার্মানিকে নিয়ে আশাবাদী ছিলো সেই দেশের জনগণ।স্বাগতিক দেশ হওয়ার প্রত্যাশাও ছিলো প্রচুর।তবে প্রত্যাশার ভারে নুয়ে গিয়ে নয়, বরং আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে দূর্দান্তভাবে বিশ্বকাপের শিরোপা ছিনিয়ে জার্মানি।ফাইনালে হল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে আগের দুই বিশ্বকাপের কষ্ট ভোলে জার্মানি।অধিনায়ক হিসেবে দলকে দারুণ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বেকেনবাওয়ার সেইবার।১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ, এইবারেও জার্মান দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ বেকেনবাওয়ার।তবে এইবারের ভূমিকা অন্য, এইবারে তিনি রয়েছেন কোচের দায়িত্বে।দায়িত্ব বদলালেও তার ফুটবল প্রতিভার যে কোনো কমতি হয়নি তার প্রমাণ দেন তিনি জার্মান দলকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে।ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ১৯৯০ এর বিশ্বকাপ জেতে জার্মানি।সেই সাথে ফুটবল বিশ্বে নিজের সাম্রাজ্যটিকেও চিরস্থায়ী রূপ দিয়ে যান বেকেনবাওয়ার।বনে যান ‘ফুটবলের সম্রাট’।