ছুটিহোমপেজ স্লাইড ছবি
ফুলের রাজধানীতে একদিন

শামিম ইমতিয়াজ: ফসল অনেক রকমের হয়। ফুলও হতে পারে ফসল। মানুষের ব্যবসার হাতিয়ার। এমনকি স্বাবলম্বী হওয়া যায় ফুল চাষ করে। অবাক করা কথা হলেও সত্য যে দেশে ফুলের একটা ভালো বাজার আছে। একথা বিশ্বাস করতাম না, গদখালী না দেখলে।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী গিয়েছিলাম কিছুদিন আগে। বেনাপোলের দিকে যাওয়ার সময় শুনলাম এখানে নাকি ফুলের রাজ্য আছে। সে জায়গার নাম গদখালী। যে ইজিবাইকে চড়েছিলাম, তাতে ছিলেন এক মুরব্বী মানুষ। তাঁর কাছে শুনলাম একটা গল্প। গদখালী নামের গল্প বলেছিলেন তিনি।
এক পর্তুগীজ ডাকাত নাকি একবার ঐ অঞ্চলে ডাকাতি করতে আসে। যে বাড়িতে ডাকাতি করতে যায়, সে বাড়ির মেয়েটির রূপে মুগ্ধ হয়ে সে পণ করে আর কখনো ডাকাতি করবে না। রড্রিক নামে সে ডাকাত ঐ অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। শুধু তা-ই নয়, একটা কালী মন্দিরও তৈরি করেছিল সে। সেই ‘গড কালী’ থেকেই নাকি আজকের গদখালী নামের উৎপত্তি। এ গল্প শোনার পর আর সেখানে না গিয়ে পারা গেলো না।
শীত শীত সকালে যশোর-বেনাপোল রোড ছেড়ে ডানে, বায়ের গ্রামগুলোর পথ ধরে এগিয়ে গেলেই দেখা মিলেছিল দিগন্তজোড়া ফুলের ক্ষেত। নানা রঙের ফুলে রঙিন চরাচর। এসব জমিতে জমিতে ফুল চাষ করেন ওখানকারই চাষীরা। সে চাষ, বাড়ির পাশে শৌখিন ফুলের বাগান নয়। রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, গোলাপ আর গাঁদা ফুল চাষ হয় এখানে। ফুলই এখানে ফসল। এ কারণে অনেকেই ফুলের রাজধানী বলে এ গদখালীকে।
বাজারের মতো জায়গাটা পায়ে হেঁটে দেখেছিলাম বেশ অনেকক্ষণ ধরে। দুই পাশে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, গাঁদা, জারবেরা আরও কি সব ফুলে ভরা জায়গাটা। বাতাসে ফুলের সৌরভ। অনেক ফুলেরই নাম জানি না তবু ভালো লাগছিলো। ফুল থেকে মনোযোগ সরিয়ে কৃষকদের ব্যস্ততা দেখছিলাম। কেউ ফুল কেটে গাড়িতে বাজারে নিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে বান্ডিল করে চালান হয়ে যাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। পুরুষদের পাশে নারী ও শিশুরাও কাজ করছিল ফুলের ক্ষেতে। কেউ ফুল কাটেছে, কেউ নিড়ানি দিচ্ছে।
পড়ে খোঁজ করে জেনেছিলাম দেশের মোট ফুলের ৭০ ভাগই নাকি আসে এখান থেকে। এখানেই বাংলাদেশের সবেচেয়ে বড় ফুলের পাইকারি বাজার বসে। প্রায় পনেরো বছরেরও বেশি সময় ধরে গদখালীর কৃষকেরা ফুল দিয়ে আসছে আমাদের।
যশোর গেলে অবশ্যই এ জায়গাটি দেখে আসা উচিত যে কোন দর্শনার্থীর। ফুল পছন্দ করেন বা না করেন, রঙ এবং মানুষ দেখতে এখানে যাওয়া উচিত। বাস, ট্রেন নানা উপায়েই যশোর যাওয়া যায়। যশোর বাস স্ট্যান্ড থেকে গদখালী যাওয়ার জন্য ভ্যান পাওয়া যায়। দরদাম করে নিতে হবে।
যশোরে গেলে অবশ্যই জামতলার মিষ্টি, খেজুরের গুরের প্যারা, খেয়ে আসবেন। প্রায় সব খাবার দোকানেই টাটকা সবজি আর লুচি পাওয়া যায়। অসাধারণ স্বাদ। সেই সঙ্গে ধর্মতলার মালাই চা। চুকনগরের চুই ঝালের কথাও মনে রাখবেন। ঠকবেন না।