জাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
ফোনে ছোট ছোট মিথ্যা বলা প্রসঙ্গে কিছু কথা

মঞ্জুর দেওয়ান: অনেকদিন হলো চিঠি তার আবেদন হারিয়েছে। চিঠির প্রস্থানে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। চিঠির সরল স্বীকারোক্তির দিনকে ’ঘুণপোঁকায়’ খেয়েছে বলে অভিহিত করেন কেউ কেউ। কাগজ-কলমের ব্যবহারকে মানুষ এখন আর আধুনিকতার বহিঃপ্রকাশ মনে করেন না। মনের ভাব প্রকাশে কিংবা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে যন্ত্রের সাহায্য নেওয়াকে আধুনিকতা মনে করা হয়। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার যাতাকলে যেমন পিষ্ঠ হয়েছে চিঠি; সাথে মানুষ তার আবেগকেও করেছে নিয়ন্ত্রণ। তবে আবেগের নিয়ন্ত্রণ এতোটাই হয়েছে যে, মানুষ এখন মিথ্যা কথা বলাকে আধুনিকতার অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করছেন। বিশেষ করে মোবাইল ফোনে মিথ্যা বলাকে। এ এমন এক মিথ্যা, যাকে মিথ্যার সংজ্ঞায় ফেলতে নারাজ বেশিরভাগ মানুষ। মুঠোফোনের মিথ্যাকে ’ট্রেন্ড’ বলেও গণ্য করা হয়! আর এই ট্রেন্ডের সাথে মানিয়ে নিয়েছেন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া মানুষ।
কালের পরিক্রমায় আধুনিক বনে যাওয়া মানুষের কাছে মুঠোফোনে দু চারটা মিথ্যে বলা এখন স্বাভাবিক। মিথ্যাকে আমরা সর্বাঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে নিয়েছি যে, মিথ্যা কথা বলা আমাদের কাছে ডাল-ভাত মনে হয়। অথচ মিথ্যা বলার প্রবণতা মানুষের বিবেককে ’মোডিফাই’ করে পাশবিকতার দিকে ঠেলে দেয়! যা আমরা নির্দ্বিধায় ভুলতে বসেছি।
বর্তমানে টেকনাফ-তেতুলিয়ার দূরত্ব এখন একটি ফোন কল! কয়েক কিলোমিটারের দূরত্ব কয়েক গজ হয়ে যাচ্ছে একটি মাত্র ফোন কলের মাধ্যমে! দরজার ওপাশে কি আছে বা কি হচ্ছে সেটা দেখা যায়না বলে এর শতভাগ ফায়দা নিচ্ছেন অন্য প্রান্তে থাকা মানুষটি। অথচ এই অপচর্চার ফলে সমাজে নৈতিকতার হার কমছে ঝুকিপূর্ণভাবে। দিনশেষে যার বিরূপ প্রভাব আমাদের উপরই পড়ছে।
যন্ত্রের সহজলভ্যতায় মানুষের দূরত্ব কমেছে সত্য; দূরত্ব বেড়েছে সম্পর্কে। মোবাইলের অপব্যবহারের ফলে কিভাবে তারা মিথ্যা কথা বলছেন কিংবা অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছেন তা অনুধাবনই করতে পারছেন না। মিথ্যা বলার এসব অনুশীলনের ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে। সাংসারিক জীবন তো বটেই ; পেশাগত জীবনেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। অফিসগামী চাকুরিজীবি তার স্থানের মিথ্যা বর্ণনা দিতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন। মুঠোফোনের অপর প্রান্তে থাকা লোকটি দেখতে পাচ্ছেনা ভেবে অনর্গল মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়ার চিত্র এখন রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ে। কাজের কাজ না করে কথার ফুলঝুরি ছাড়ার মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়!
নিজের অজান্তেই আমরা আমাদের পরিবারের ছোট সন্তানদের মিথ্যে বলা শিখাচ্ছি। নিজের অবস্থান গোপন করতে কিংবা অপর প্রান্তে থাকা লোকটির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে না হলে, আমরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছি আমাদের সন্তানদের। এবং কি মিথ্যে বলানোর পর তাকে বাহবা দিতেও কৃপণতা করছি না। উৎসাহ যোগাচ্ছি উৎসাহ নিয়ে!
কোমলমতি শিশুদের দিয়ে নিজের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার এক নোংরা উৎসবে মেতেছি আমরা। অথচ একবারও ভেবে দেখছি না, এই ঘটনা থেকে শিশুরা কি শিখলো! মিথ্যে বলার এই অনুশীলন তাড়া কোন জায়গায় প্রয়োগ করবে সেটাও ভেবে দেখছি না। মুঠোফোনে মিথ্যে বলার চর্চা থেকে শিশুদের সঠিক মানসিক বিকাশ হচ্ছে কি না সেটাও আমলে নিচ্ছিনা।
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, যোগাযোগ মাধ্যমে মোবাইল ফোন বিপ্লব ঘটিয়েছে, সময়কে সহজ করেছে। তবে এর অপব্যবহারের ফলে যা হচ্ছে তা মেনে নেয়ার নয়। সামাজিক অবক্ষয়ের নেপথ্য ভূমিকা পালন করছে মোবাইল ফোন। এ থেকে উত্তোরণের উপায় খুঁজে বের করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের জীবনে আরোও বড় দূর্ভোগ নেমে আসবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।