বই Talkহোমপেজ স্লাইড ছবি
বইয়ের স্বর্গ নীলক্ষেতের গল্প

২০০১ সালের কথা কলেজের একটা প্রজেক্টের জন্য বাংলা টাইপ করা দরকার। এই কাজ নাকি নীলক্ষেতে কম খরচে আর স্বল্প সময়ে করা যায়। ছাত্র জীবনের প্রথম নীলক্ষেত অভিজ্ঞতা। উনিশ বছর আগের কথা কিন্তু আজও মনে হয়ে সেইদিনের ঘটনা।
বৃটিশরা এদেশে আসার পর থেকেই ইউরোপিয়ানরা বিভিন্ন এলাকায় নীল চাষ শুরু করে। সেই সময় ঢাকার নীলক্ষেত এলাকার বিরাট প্রান্তরজুড়ে নীল চাষ করা হতো। আগে নীলক্ষেত এলাকায় কোন বসতি ছিল না। শুধুই নীল চাষ হতো। ব্রিটিশদের প্রত্যাবর্তনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বুয়েট, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজকে ঘিরে এসব প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যবই বিক্রি শুরু হয় ১৯৬৬ সালে।
নীলক্ষেতের এই শিক্ষা সামগ্রীর বাণিজ্যের সার্বিক প্রসার ঘটে আসলে আশির দশকে। বর্তমানে এই এলাকাটি ঢাকা শহরের পুরাতন বই বেচা কেনার কেন্দ্রস্থল। এখানে শতাধিক বই এর দোকান রয়েছে, যা বই কেনা-বেচার ব্যবসায় জড়িত। তাছাড়া এখানে প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিভিন্ন পাঠ্য পুস্তকের দোকানগুলিও অবস্থিত। ফটোকপি, টাইপিং ও প্রকাশনা ব্যবসায়-সংক্রান্ত অধিকাংশ দোকান নীলক্ষেতে অবস্থিত।
এখানে পাওয়া যায় সব ধরনের পাঠ্যবই এবং স্বল্প মূল্য আর বিশাল সংগ্রহ নীলক্ষেতের মুল বৈশিষ্ট বলা যেতে পারে। নীলক্ষেত শুধুমাত্র পাঠ্যবইতেই সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্বসাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, গল্প, উপন্যাস, কবিতাসহ বিভিন্ন ভাষার সব ধরনের বইয়ের কেন্দ্রস্থল এই মার্কেট। নীলক্ষেত যেমন বিখ্যাত নতুন বইয়ের জন্য, তেমন পুরনো বইয়ের জন্যও। বই কেনার পাশাপাশি পুরনো বই বিক্রি করতেও আসেন অনেকে। নীলক্ষেতের ফুটপাতের পুরোটাই ঘিরে আছে পুরনো বইয়ের দোকান।
শুধুমাত্র শিক্ষা সামগ্রীতেই সীমাবদ্ধতা নয়! আছে লোভনীয় খাবারের সমাহার। এর সাথে ডাকাডাকিতেও বেশ জমজমাট থাকে ফুটপাত ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই দোকানগুলো। অনেক খাবারের মাঝে তেহারি আর কাচ্চির জন্য বিখ্যাত এই দোকানগুলো। ওই এলাকা দিয়ে হাঁটতে গেলে কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না খাবারের ঘ্রাণকে।
স্বল্প মূল্য আর ব্যাপক সংগ্রহের শিক্ষা সামগ্রী নিয়ে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য নীলক্ষেত একটি বিরাট আশীর্বাদ । নীলক্ষেতের সকল সংগ্রহ, গুণগত মান, পণ্যমূল্য আর এর সার্বিক অভিজ্ঞতা দিয়ে এ ধরনের যে কোন আন্তর্জাতিক মার্কেট কে পিছিয়ে দেয়া সম্ভব!