খেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডব

মাহমুদুর রহমান: যুদ্ধ, লড়াই কিংবা বন্ধুত্বের গল্পে মাঝে মাঝেই পাঁচজন বন্ধুর দেখা পাওয়া যায়। পাঁচজন মিলে এমন একটা দল যা অপ্রতিরোধ্য। মহাভারতে পাঁচ ভাইকে একত্রে পঞ্চপাণ্ডব বলা হতো। পরবর্তীতে পাঁচজনের এমন জোটকে উপমহাদেশে পঞ্চপাণ্ডব হিসেবে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটেও আছেন এমন পঞ্চপাণ্ডব। তারা হলেন, মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং সাকিব আল হাসান।
মাশরাফি বিন মর্তুজা: পাঁচ জনের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো যোদ্ধা মাশরাফি। ১৯৮৩ সালে নড়াইলে জন্ম। এই ছেলেটি বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের কাছে একচ্ছত্র ভালোবাসার অধিকারী। নড়াইল এক্সপ্রেস নামে পরিচিত ডানহাতি ফাস্ট বোলার মাশরাফির অভিষেক হয় ৮ নভেম্বর ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে। সেই থেকে এখনও খেলে যাচ্ছেন মাশরাফি নানা ইনজুরিকে সাথে নিয়ে। নেতৃত্ব দেয়ার অসামান্য গুণ রয়েছে তার মধ্যে। নেতাসুলভ সেই গুণ এবং লড়াই করার মানসিকতা তাকে বাংলাদেশের আইকনে পরিণত করেছে। পঞ্চপাণ্ডবের প্রথম পাণ্ডব মাশরাফির ক্যারিয়ার বর্তমানে আঠারো বছরের। ৩৬ টেস্ট, ২০৩ ওয়ান ডে এবং ৫৪ টি-২০ খেলা মাশরাফি বাংলাদেশের অন্যতম অভিজ্ঞ খেলোয়াড়।
তামিম ইকবাল: চট্টগ্রামের ছেলে তামিম ইকবাল ‘হার্ড হিটার’ হিসেবে কেবল দেশে নয়, দেশের বাইরেও জনপ্রিয়। বামহাতি ব্যাটসম্যান তামিমের জন্ম ১৯৮৯ সালে। ৪ জানুয়ারি ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের খেলায় তার অভিষেক হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত খেলছেন। নানা জটিলতা, সমালোচনা কাটিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে। ৫৫ টেস্ট, ১৮১ ওয়ান ডে আর ৬৯ টি-২০ খেলা তামিমের সেঞ্চুরি এবং হাফ সেঞ্চুরি যথাক্রমে ৮/২৫, ৭/৪৩ এবং ১/৪ টি।
মুশফিকুর রহিম: ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে তিনি হতে যাচ্ছেন সবচেয়ে খর্বকায় খেলোয়াড়। কিন্তু মুশফিক বারবার প্রমাণ করেছেন ‘Size doesn’t matter’. ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সাউথ আফ্রিকা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার অনেক লম্বা লম্বা পাঁঠা পাঁঠা বোলারকে নাস্তানাবুদ করেছেন রহিম। ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি যেমন ভালো তেমনি ভালো উইকেট কিপার। বাংলাদেশের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন কয়েকবার। মহেন্দ্র সিং ধোনির পরে মুশফিক আরেকজন ক্যাপ্টেন কুল। ১৯৮৭ সালে জন্ম নেওয়া মুশফিকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক হয় ২৬ মে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে। ৫৮ টেস্ট ১৯০ ওয়ান ডে, ৬৫ টি-২০ খেলার অভিজ্ঞতা তার ঝুলিতে।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ: মুশফিকের সঙ্গে বাস্তব জীবনে যেমন আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তেমনি মাঠেও মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ্র রসায়নটা অন্যরকম। বেশকিছু ম্যাচে বাংলাদেশকে খেলায় ফিরিয়ে এনেছে এই জুটি। চুপচাপ লাজুক স্বভাবের মাহমুদউল্লাহ মাঠেও খুব নরম মানুষ। মাঝে মাঝেই অল্প রান করে আউট হয়ে যান কিন্তু দলের প্রয়োজনের সময় দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন এই খেলোয়াড়। ১৯৮৬ সালে ময়মনসিংহে জন্ম নেওয়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বয়স এখন ৩৩. তার অভিষেক হয়েছিল ৯ জুলাই ২০০৯ সালে। এ পর্যন্ত খেলেছেন ৪৫ টেস্ট, ১৭১ ওয়ান ডে, এবং ৭৬ টি-২০।
সাকিব আল হাসান: সাকিব আল হাসান কে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়, যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটার কিংবা কোন খেলোয়াড় পারেনি। অসাধারণ ব্যাটিং এবং বোলিং নৈপুণ্যে তিনি নিজেকে প্রমাণ করার পাশাপাশি দেশকে অনেক ম্যাচে উপস্থাপন করেছেন। জিতিয়েছেন অনেক ম্যাচ। দেশের বাইরে কাউন্টি ক্রিকেট, আইপিএল প্রভৃতিতে তার পারফরম্যান্স অনেকের জন্যই ঈর্ষার কারণ। সাকিবের জন্ম ১৯৮৭ সালে। পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে একমাত্র তারই অভিষেক হয় ওয়ান ডে ক্রিকেটে। ৬ আগস্ট ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে মাঠে নামার পর থেকে এখনও মাঠে আছেন।
মূলত বাংলাদেশের ক্রিকেটের ঘুরে দাঁড়ানো এবং বিগত বছরগুলোর নানা সাফল্যের পেছনে কারিগর হিসেবে কাজ করেছে এই পাঁচজন খেলোয়াড়ের প্রতিভা এবং তাদের অধ্যবসায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এক রকম কাঁধে করে বয়ে নিয়ে চলেছেন এই পাঁচজন, গত প্রায় দশ বছর ধরে। আসছে ২০১৯ বিশ্বকাপ। পঞ্চপাণ্ডবকে এরপর কোন বিশ্বকাপে একসঙ্গে দেখা যাবে না।