বাক্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
বাংলাদেশে যেভাবে চা এলো

চীনা পানীয় হলেও চা এ দেশে চীনারা আনেনি, এনেছে ব্রিটিশরা। এ কথা অবশ্য কারোরই অজ্ঞাত নয়। বাঙালীকে ব্রিটিশদের ‘চা খাওয়া শেখানো’ এই গল্প তো মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। প্রথমে এ দেশীয় স্থানীয় মানুষদেরকে ডেকে এনে ফ্রি চা পান করানো হতো এবং এভাবে একপর্যায়ে বাঙালি চা পানে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এরপর ব্রিটিশ সাহেবরা বললেন, “চা খেতে চাও? বেশ তো, কিনে খাও না!”
১৮৩৯ সালে ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের সাথে এ দেশীয় কিছু ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘অসম টি কোম্পানী’, যাদের মধ্যে ছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রপিতামহ), বাবু মতিলাল শীল, হাজী হাশেম ইস্পাহানী (এদেশের ইস্পাহানী গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা) প্রমুখ। মজার ব্যাপার হলো, আমরা যে চা পান করি তা চীন থেকে আগত চা নয়, সেটা মূলত এ দেশীয় চা, যেটা কিনা চীনা চায়ের থেকেও অনেক উৎকৃষ্ট মানের বলে প্রমাণিত। উনিশ শতকের ষাটের দশকের পর থেকে চা শিল্প দারুণভাবে বিকশিত হতে শুরু করে। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে চা শিল্পে বিনিয়োগ ক্যালিফোর্নিয়ার গোল্ডরাশের সাথে তুলনীয় হতে থাকে।
চায়ের বিপণন ব্যবস্থা অন্য পণ্যের থেকে আলাদা। সাধারণত অন্য কোনো কৃষি পণ্য সরাসরি বাগান বা ক্ষেত থেকে নিয়ে বাজারে বিক্রি করা হয়। চায়ের ক্ষেত্রে সমস্ত চা বাগানের মালিকগণ তাদের উৎপাদিত চা নিয়ে আসেন চট্টগ্রামের ‘চা নিলাম কেন্দ্র’তে।চায়ের সাথে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি মজার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে মুসলিম দেশগুলো মিসরে বিভিন্ন সহায়তা পাঠাচ্ছিলো। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সমর্থক বাংলাদেশেরও উচিত কিছু পাঠানো। কিন্তু সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ কী আর পাঠাবে? সে সামর্থ্যই বা কোথায়? বঙ্গবন্ধু নিলেন এক চমৎকার উদ্যোগ। তিনি মিসরের সামরিক বাহিনীর জন্য এক লাখ পাউন্ড উৎকৃষ্ট মানের বাংলাদেশি চা পাঠিয়ে দিলেন সহায়তা হিসেবে।
যুদ্ধক্ষেত্রে একজন সৈনিকের কাছে এক কাপ চা যে কত দরকারী তা সদ্য যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থাকা বাঙালীর চেয়ে ভাল কে বুঝবে! মিসর সাদরে গ্রহণ করে এ সহায়তা এবং যুদ্ধ শেষ হলে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বাংলাদেশকে ৩২টি ‘টি-৫৪’ ট্যাংক আর ৪০০ রাউন্ড ট্যাংকের গোলা উপহার দেয়, যা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী গঠনে অনেক কাজে এসেছিলো।বাংলাদেশ একসময় প্রথম সারির চা রপ্তানীকারক দেশ ছিলো, যা ছিলো পাটের পরে সবথেকে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পণ্য।
মজার ব্যাপার হলো, রপ্তানি কমার কারণ উৎপাদন কম হওয়া নয়। চা উৎপাদন বেড়েছে আগের থেকে অনেক, কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়াই রপ্তানি কমার কারণ। তবে চা বাগান মালিক-ব্যবসায়ী সবাই চেষ্টা করে চলেছেন রপ্তানি পণ্য হিসেবে চায়ের অবস্থান ফিরে পেতে।