
মনজুরুল হক: বিদায় ক্যাপ্টেন কুল! মিঃ মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিদায়। আপনি ভারতের সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন কী-না তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তবে বিশ্বের সর্বকালের সেরা উইকেট কিপার-ব্যাটসম্যান-ক্যাপ্টেন তা নিয়ে বিতর্ক নেই। আপনার ফ্যাক্টফাইল হাজির করলে অনেক কিছু চকচক করে উঠবে। ডাটা লেখা শুরু করলে কলেবর বাড়তেই থাকবে।ওপথে হাঁটবই না। আপনি ভারতকে টেস্ট র্যাংকিংয়ে, ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে, টি-২০ র্যাংকিংয়ে ১ নম্বরে তুলেছিলেন।
সেসব অনকে বড় ব্যাপার। কিন্তু তার চেয়েও বড় ব্যাপার এই ভারত শুধু নয়, পুরো উপমহাদেশে আপনার মাপের আর একটা ‘গ্রেট ফিনিশার’ পেতে কত বছর লাগবে কে জানে? এই পড়ন্ত বয়সে, মানে দেড়-দু বছর আগেও আপনি রানিং বিটুইন দ্য উইকেট-এ বিশ্ব সেরা! টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্বকাপ, টি-২০ বিশ্বকাপ সবই তো দিয়েছিলেন দেশকে। আর সকল প্রাপ্তিতে আপনার অবদানও জ্বলজ্বল করে, শুধু টেস্টে সেঞ্চুরির সংখ্যা এবং গড়টুকু বাদে। ৭/৮ নম্বরে নেমে কে-ই বা আপনার চেয়ে ভালো করে গেছে? তার সাথে যোগ করা যায় তিন ৩ বার আইপিএল-এ নিজের দলকে চ্যাম্পিয়ন বানানো।
আজকেও ওয়াসিম আক্রাম, নাসের হুসেন, আর্থারটন, শ্যেন ওয়ার্নরা স্বীকার করল ট্রায়ো স্পিন এ্যাটাকের পেছনে আপনিই সেরা কিপার! হয়ত জেফরি ড্যুজন থাকলে বা ফারুক ইঞ্জিনিয়র কিংবা গিলি থাকলেও তাই বলতেন। ভারতের স্পিনিং পিচে কাজটা খুব সহজ ছিলো না। ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে আপনার অবসর নিয়ে তেমন শূণ্যতা প্রকাশ পায়নি কোনো কোনো মহলে। কারণ সেই দাদার বিরোধীতা করা! অনেকেই মনে করেন দাদার ক্যারিয়ার আপনার জন্য খানিকটা খাটো হয়েছিল। আদপে তা নয়। দাদার কফিনে পেরেক ঠুকেছিলেন শ্রীমান রাহুল দ্রাবিড় এন্ড গ্রেগ চ্যাপেল গং। আর কেকেআর থেকে দাদাকে হঠিয়েছে স্বয়ং কেকেআর মালিক শাহরুখ।
আমি ঠিক সেই জায়গা থেকে ভাবতে চাইছি না। আমি ভাবতে চাইছি মাহীকে নিয়ে। যে দরিদ্র ঘরের ছেলে মাহী রেলওয়েতে একটা ছোট বদলি চাকরি দিয়ে জীবন শুরু করেছিল। যার অসম্ভব শখ ছিল দামি বাইক চড়ার। টাকার জন্য পারত না। বন্ধুদের বাইকের পেছনে বসে বসে স্বপ্ন বুনত! ঝাড়খণ্ডের মাহী সম্মানজনক অনারারী লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পদ পেয়েছে। দেশের ক্রিকেট ক্যপ্টেন হয়েছে। বাড়ির গ্যারেজে হার্লি ডেভিডসনের মত বাইক দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি-বাড়ি-জাঁক-জৌলুস সবই তার পায়ে এসে পড়েছে। কিন্তু মধ্যবিত্ত বাবার কলোনীর বাড়িটাকেই যেমন শচীন টেন্ডুলকার ‘র্স্বর্গ’ ভেবেছেন, বারে বারে বান্দ্রায় ছুঁটে গেছেন, তেমনি মাহীও বারে বারে ঝাড়খণ্ডে ফিরে এসেছেন।
অলি-গলিতে বাইক দাবড়ে বেড়িয়েছেন। সম্মানের রংটুকু ফিকে হওয়ার আগেই সব ধরণের ক্রিকেট থেকে নিজেকে আলগোছে সরিয়ে নিয়েছেন। একেবারে এই সেদিনও শ্রীলংকায় একটা গোষ্ঠি চেষ্টা করেছিল ২০১১ বিশ্বকাপে আপনার সেই ‘দ্য গ্রেট ফিনিশিং ফাইনাল এভার’-কে কালিমা লিপ্ত করতে। পারেনি। তাই সেই স্নায়ূক্ষয়ী ফাইনালের বিখ্যাত হেলিকপ্টার শটের সিক্সারটি মানসপটে ভাবতে ভাবতে লেখা শেষ করি। বিদায় মাহী!বিদায়!