জাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
বিদায়! হে আলোর পথযাত্রী

মিজানুর রহমান টিপু : তিনি ছিলেন একজন ফেরিওয়ালা! ফেরিওয়ালা শব্দটি শুনলেই মাথায় আসে, কেউ একজন রকমারি পণ্য ফেরি করে বিক্রি করছেন! গ্রামে সাধারণত ফেরিওয়ালা দেখা যায়! তিনিও গ্রামেই ফেরি করতেন! তবে তিনি ফেরি করতেন বই! বিনিময় মূল্য ছিলো মানুষের ভালোবাসা। মানুষ ভালোবেসে তাকে ডাকতেন আলোর ফেরিওয়ালা। ফেরিওয়ালার নাম পলান সরকার! ১৯২১ সালে জন্ম নেওয়া পলান সরকারের আসল নাম হারেজ উদ্দিন। তবে পলান সরকার কিংবা আলোর ফেরিওয়ালা নামে তাকে চেনে সারা দেশের মানুষ!
জন্মের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় পলান সরকারের বাবা মারা যান। টাকাপয়সার টানাটানির কারণে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় তাঁকে। তিনি ছিলেন বই পাগল মানুষ। প্রতিবছর স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা ১ থেকে ১০-এর মধ্যে মেধা তালিকায় স্থান পাবে, তাদের তিনি একটি করে বই উপহার দিতেন। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর বই বিলির অভিযান।
এরপরে তিনি সবাইকে বই দিতেন। ডাক্তারি পরীক্ষায় ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর নিজেই হেঁটে হেঁটে বই বিলি করতেন। একটানা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে করেছেন এই কাজ। রাজশাহী অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামজুড়ে তিনি গড়ে তুলেন বই পড়ার এক অভিনব আন্দোলন। তিনি স্কুলকেন্দ্রিক বই বিতরণের প্রথা ভেঙে বাড়িতে বাড়িতে বই পৌঁছে দেয়া এবং ফেরত নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি তিনি বইও উপহার দিতেন। তার কর্মকাণ্ড সমাজে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। এলাকার চায়ের দোকানি পর্যন্ত হয়ে ওঠে বইপাগল!
বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদের অশিক্ষার অন্ধকার দূর করার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ভূষিত করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদকে। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষ্যে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার দৈনিকে তার ওপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিনামূল্যে বই বিতরণ করে সবার মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টির করার জন্য ইউনিলিভার বাংলাদেশ পলান সরকারকে ‘সাদা মনের মানুষ’ খেতাবে ভূষিত করে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ৯৮ বছর বয়সে মহাকালে পাড়ি জমান এই আলোর পথযাত্রী।