খেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
বিশ্বসেরা তিনজন আম্পায়ার

মঞ্জুর দেওয়ান: টেলিভিশন সেটের সামনে বসেই খেলা দেখেন কিংবা মাঠে বসে; আমরা কি কি বিষয়ে লক্ষ্য করি একবার ভেবে দেখেন তো ! খানিক মাথা চুলকে হয়তো, ওয়াইড, নো বল, বাউন্ডারি, আউটসহ আরও দু একটা জিনিসের নাম মাথায় আসবে। কারণ এতো হিসেব কষতে আমরা খেলা দেখতে বসিনা। একসাথে এতো কিছু মনে রাখার সুযোগও হয়তো আমাদের হয়না। কিন্তু একজন ক্রিকেট আম্পায়ারকে সবদিকে নজর রাখতে হয়! শুধু ক্রিকেট না, যেকোন খেলার বিচারক হওয়াই কঠিন কাজ। কারণ উভয় দলের খেলোয়াড়ই চেয়ে থাকে, উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো বিচারকের দিকে। বল ঠিক মতো হচ্ছে কি না, কোন খেলোয়াড় অশোভন আচরণ করছে কিনা সব কিছু নজরে রাখেন উইকেটের পেছনে কিংবা উইকেটের লেগ সাইটে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ দুটি। স্লো ওভার রেট, বৃষ্টি হবার পর মাঠের অবস্থা খেলার উপযুক্ত আছে কি না; সব কিছু বিবেচনায় রাখেন আম্পায়াররা। ক্রিকেট মাঠের সব ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তারা। যদিও ‘থার্ড আম্পায়ার’ আসাতে মাঠের আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেতে পারেন ক্রিকেটাররা। তারপরও ক্রিকেট মাঠের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সমালোচনার শিকার হন। আবার নিরপেক্ষ আম্পায়ারিং করে সুনাম কুড়ান অনেকে। চলুন জেনে নিই এমনই কয়েকজন আম্পায়ারের সম্পর্কে।
সাইমন টফেল: তর্কসাপেক্ষে সাইমন টফেলকে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা আম্পায়ার মনে করা হয়। ফাস্ট বোলার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা টফেল জীবদ্দশায় অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে পিঠের ইনজুরি খেলোয়াড়ি জীবন দীর্ঘায়িত হতে দেয়নি। ইনজুরি বাঁধার কারণে আম্পায়ারিংয়ে আসেন টফেল। মাত্র ২৪ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করেন তিনি। আর ২৭ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় টফেলের। সিডনিতে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে কেবল সফলতাই কুড়িয়েছেন বিশ্বসেরা এই আম্পায়ার। বন্ধুসুলভ আচরণের জন্য টফেলের বেশ খ্যাতি ছিলো। খেলার মাঠে একজন নীতি নির্ধারক হয়েও টফেলের ব্যবহার ছিল মনোমুগ্ধকর। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও টফেল ছিলেন অনন্য। আধুনিক যন্ত্র সংযোজনের আগেও টফেলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক করতেন না ক্রিকেটাররা। সম্মানের সাথে মেনে নিতেন। অনেকের মতে, আধুনিক ক্রিকেটে ব্যবহার হওয়া যন্ত্রের চেয়েও নিখুত ছিল টফেলের চোখ। যার সুবাদে ২০০৪ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর সেরা আম্পায়ারের পুরষ্কারে ভূষিত হন টফেল। অনন্য এই মানুষটিকে বেশি দিন পায়নি ক্রিকেট বিশ্ব। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র ৪২ বছর বছর বয়সে টপ লেভেলের আম্পায়ারিং থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন টফেল। বর্তমানে আইসিসির আম্পায়ার পারফর্মেন্স ও ট্রেনিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন এই গুণী আম্পায়ার
স্টিভ বাকনার: ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আম্পায়ারদের মধ্যে স্টিভ বাকনার একজন। সম্ভবত বাকনারই একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল ও ক্রিকেটের দায়িত্ব সামলেছেন। ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করা বাকনার প্রথমে ছিলেন ফুটবল রেফারি। ৪৫ বছর বয়সে ক্রিকেট আম্পারিংয়ে আসেন এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান। ১৯৮৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ভারত টেস্ট ম্যাচ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন বাকনার। একই বছরে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পারিংয়ের সুযোগ পান তিনি। এখন পর্যন্ত ১৮১টি ওডিআই ম্যাচের দায়িত্ব সামলেছেন। পাঁচটি বিশ্বকাপ ফাইনালের দায়িত্ব সামলেছেন বাকনার। যা আধুনিক ক্রিকেটে আর কোন আম্পায়ার করার সুযোগ পাননি। একজন আম্পায়ারের কতটা গ্রহণযোগ্যতা থাকলে পাঁচটি বিশ্বকাপের দায়িত্ব দেয়া যায় অনুধাবন করতে পারছেন। প্রথম আম্পায়ার হিসেবে ১০০টি টেস্ট ম্যাচের দায়িত্ব পালন করারও গৌরব অর্জন করেন তিনি। সিডনি টেস্ট ব্যতিত বাকনারকে নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। ২০০৯ সালে অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত ক্রিকেটার থেকে শুরু করে পুরো ক্রিকেট বিশ্বেরই প্রশংসা পেয়েছে খ্যাতিমান এই আম্পায়ার।
ডেভিড শেফার্ড: কাউন্টি ক্রিকেটের নিয়মিত খেলোয়াড় হয়ে আম্পায়ারিং জীবন শুরু করেন ডেভিড শেফার্ড। ১৪ বছর বয়সে গ্লকেস্টারশায়ারের মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। তার সময়ে সে ছিলেন সবচেয়ে বিনয়ী ও ভদ্র আম্পায়ার। তবে বিনয়ী আর ভদ্রতার চেয়েও শেফার্ডকে সবাই চিনে থাকেন তার পায়ের অঙ্গভঙ্গীর জন্য। বিশেষ করে যখন কোন দল তিন অংকের একই সংখ্যায় পৌঁছায়। যেমন ‘১১১’ ! ১৯৮৫ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে অ্যাসেজ টেস্ট দিয়ে আম্পায়ারিংয়ে আসেন শেফার্ড। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে আম্পায়ার প্যানেলের গর্বিত সদস্য ছিলেন তিনি। খেলোয়াড়দের সম্মান দেয়া শেফার্ড ২০০২ সালে আইসিসির এলিট প্যানেলেও জায়গা করে নেন। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া মানুষটি ১৭২টি ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ৯২টি ম্যাচের দায়িত্ব সামলেছেন ডেভিড শেফার্ড।