খেলা
বিশ্বসেরা পাঁচজন ফুটবল কোচ

মঞ্জুর দেওয়ান: একজন ফুটবল কোচ মূলত আলোর দিশারি। একজন কর্তা। পথপ্রদর্শক। যার দিক নির্দেশনায় এগিয়ে যায় ঢাল-তলোয়ার বিহীন এক স্নায়ুক্ষয়ী যুদ্ধ। যে যুদ্ধে কোন রক্তপাত হয়না। হয় কেবল মানসিক উত্তেজনা। যে উত্তেজনায় পারদের পরিমাণ বেশি হলে হার মানতে রাজি মানুষের তৈরি আগ্নেয়াস্ত্রের যুদ্ধ। বলছি সবুজ গালিচার যুদ্ধের কথা। যে যুদ্ধে ১১ জন সেনা কে দিকনির্দেশনা দিয়ে যান। ফুটবল মাঠে যিনি অঘোষিত জেনারেলের ভূমিকা রাখেন। যার নির্দেশনায় ১১ জন ফুটবলার কখনো হয়ে উঠেন চীনের প্রাচীর। যে প্রাচীর ভেদ করে জাল খুঁজে পায়না প্রতিপক্ষ। আবার কখনো হয়ে উঠেন স্নাইপার তুল্য স্প্রিন্টার! যার পা থেকে বের হওয়া শট রুখে দেওয়া দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। ১১ জন ফুটবলার তথা পুরো টিমকে নিজের মতো করে সাজিয়ে সফলতার মুকুট পরেছেন অনেক কোচ। একদিকে পুরো পৃথিবীকে যেমন অবাক করেছেন, অন্যদিকে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। এমনই কিছু সফল ফুটবল ম্যানেজারের গল্প থাকছে এই আয়োজনে।
ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার: জার্মান কিংবদন্তিকে মানুষ চিরকাল মনে রাখবে বিশ্বকাপের বিশ্বরেকর্ডের জন্য! খেলোয়াড় হিসেবে যতটা সফল হয়েছিলেন, কোচিং ক্যারিয়ারেও ঠিক ততোটাই সফল হয়েছেন। পেশাদার ফুটবলারের সফলতা নিয়ে কোচিং জীবন শুরু করেছিলেন। না হলে কেউ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ জিতে, কোচ হিসেবেও বিশ্বকাপ জিতে নাকি! খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৭৪ এ বিশ্বকাপ জিতেন বেকেনবাওয়ার। এরপর ম্যানেজার হিসেবে জিতেন ১৯৯০ এর বিশ্বকাপে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে বেকেনবাওয়ারের নামের পাশে আরোও তিনটি বিশ্বকাপের নাম লেখা থাকতো। কেননা, খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৬৬ তে রানার আপ, পরের বিশ্বকাপে তিন নম্বর! ম্যানেজার হিসেবেও যার ‘রিপিটেশন’ দেখেছেন বেকেনবাওয়ার। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে রানার আপ হওয়ার পর ৯০ তে দেখেছেন সফলতার দেখা।
পেপ গার্দিওলা: পুরো নাম জোসেপ গার্দিওলা সালা। কোচিং ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন বার্সেলোনায়। ২০০৭ সালে ‘বার্সেলোনা বি’ দল দিয়ে টিম ম্যানেজারের দায়িত্বে নাম লেখান গার্দিওলা। এক বছর কাটতে না কাটতেই মূল দলের দায়িত্ব পান ৪৭ বছর বয়সী এই স্প্যানিয়ার্ড! ধুঁকতে থাকা এক দলকে জাদুর কাঠি বলে বদলে দেন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে ‘ট্রেবল’ জয়ের স্বাদ দেন। লা লিগা, কোপা দেল রে ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে বার্সাকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। শুধু কি বার্সা? স্পেন ছেড়ে জার্মানিতে গিয়েও সফলতা পেয়েছেন। হ্যাট্রিক বুন্দেসলিগা জিতে জার্মানি পর্বের ইতি টেনেছেন। ব্রিটিশ মুলুকেও রেখেছেন দক্ষতার প্রমাণ। প্রিমিয়ার লিগ আর লিগ কাপ জিতে সফল কোচদের কাতারে একধাপ এগিয়ে ৫ ফুট ১১ ইঞ্চির গার্দিওলা। ৩ টি করে ইউয়েফা সুপার কাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপ, জার্মান সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জেতা গার্দিওলার ট্রফি সংখ্যা এখন ২৬!
হোসে মরিনহো: সবচেয়ে বেশি ক্লাবের দায়িত্ব সামলানো কোচদের মধ্যে তিনি একজন। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে নিজেকে চেনাতে সমর্থ হননি মরিনহো। নামজাদা কোন ক্লাবে খেলার সুযোগও মেলেনি। বিশ্বের বুকে পরিচিতি মিলেছে সফল কোচ হিসেবে। এখন পর্যন্ত ৮ টি ক্লাবের দায়িত্ব সামলেছেন ‘দ্য স্পেশাল ওয়ান’। সেই ২০০০ সালে বেনফিকার কোচ হিসেবে পেশাদার ফুটবল কোচিংয়ের দায়িত্ব শুরু করেন। এরপর উনাই দ্য লিয়েরা, পোর্তো, চেলসি, ইন্টার মিলানসহ রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো জায়ান্ট টিমের দায়িত্ব সামলেছেন। প্রিমিয়ার লিগ, সিরিয়া, লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সহ ২৫ টি ট্রফি জিতেছেন জোসে মারিও দস সান্তোস মরিনহো ফেলিক্স!
জিনেদিন জিদান: এলেন, দেখলেন, জয় করলেন বলতে যে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, সেটি জিনেদিন জিদানের সাথে একটু বেশিই যায়। নাহলে ওভাবে একটা দলকে কি বদলে দেয়া যায়! ২০১৬ তে পথ হারানো রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কোচিং ক্যারিয়ার খুব বেশি সমৃদ্ধ ছিলোনা। রিয়াল মাদ্রিদের রিজার্ভ টিমের দায়িত্বই ছিলো মূল অভিজ্ঞতা। তারপরও জিজুতেই আস্থা রেখেছিলেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। মাত্র দুই বছরের রিয়াল ক্যারিয়ারে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লিগ শিরোপা, সুপারকোপা, ইউয়েফা সুপারকাপ, ক্লাব বিশ্বকাপ সহ সম্ভাব্য সব শিরোপা জিতেছিলেন জিদান। যার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ক্লাব বিশ্বকাপের ছিলো জোড়া শিরোপা। জিদান মাঠে নামলে মাঠের বাকিরাও ভালো খেলেন, এমন তকমা খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই। এখন নতুন করে বলা যেতে পারে, জিদান যে দলের দায়িত্ব নেন সেই দলও বদলে যায়। নিয়মিত বিরতিতে শিরোপা উৎসবে মাতে!
দিদিয়ের দেশম: অবসরের ঠিক পরপরই টিম ম্যানেজিং এর গুরু দায়িত্বে নাম লেখান দিদিয়ের দেশম। মোনাকো, জুভেন্টাস, মার্শেই ঘুরে এখন ফ্রান্স জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করছেন। খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা ফুটবলারদের মধ্যে দেশম একজন। ফ্রান্স বেকেনবাওয়ার এর পর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে এই বিরল কীর্তি গড়েছেন সাবেক ফরাসি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। তারুণ্য নির্ভর এক দল নিয়ে রাশিয়ার বুকে ফরাসি সৌরভ ছড়িয়েছিলেন দেশম। কোচিং ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপ ছাড়াও ৪ টি ফ্রেঞ্চ লিগ কাপ, ১ টি ফ্রেঞ্চ চ্যাম্পিয়ন ও ২ টি ফ্রেঞ্চ সুপার কাপ জিতেছেন সাবেক ফরাসি অধিনায়ক।