জাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
বিশ্বের দীর্ঘতম ও আলোচিত কিছু সেতু

বাশার আল আসাদ: বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু গুলোকে নিয়ে মানুষের জানার খুব আগ্রহ থাকে। এই সেতুগুলো কোথায়, কখন, কিভাবে তৈরি হয়েছে সেই সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে চায় মানুষ। আজ আমরা বিশ্বের বেশ কিছু দীর্ঘতম সেতু সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সেতু
চীনে তৈরি হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সেতু। ৩৪মাইল(৫৫কিলোমিটার) দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি গড়ার পেছনে রয়েছে একটি অভিনব কারণ। শি জিনপিং-এর ইচ্ছা অনুযায়ী, এই সেতু নির্মাণের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বা জাপানের টোকিওর কাছাকাছি চলে আসবে চীনের এই অঞ্চলের অর্থনীতি। উন্নততর যোগাযোগের ফলে হংকং-দক্ষিণ অঞ্চলে এই সেতু গড়ে তুলবে। হংকং-চুহাই-ম্যাকাও সেতুটি বর্তমান বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সেতু। এই সেতু গড়তে খরচ হয়েছে আনুমানিক ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অভিনব এই সেতুটিতে স্বাভাবিক চলাচলের সাথে রয়েছে জলের নীচ দিয়ে যাতায়াতের জন্য সুড়ঙ্গ। ৩৪ মাইল দীর্ঘ সেতুটির অন্তত ৪ মাইল লম্বা অংশে সুড়ঙ্গপথ বানানো হয়েছে, যাতে জাহাজ চলাচলে কোনো বিঘ্ন না ঘটে। বিভিন্ন চীনা সংবাদমাধ্যমের মতে, এই সেতুতে গাড়ি চালকদের জন্য রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যার সাহায্যে গাড়ি চালাতে গিয়ে হাই তুললে তা সেতুর গায়ে লাগানো অসংখ্য ক্যামেরার একটিতে ধরা পড়তে বাধ্য। তিনবারের বেশি হাই তুললেই বাজবে সতর্ক করার অ্যালার্ম! ঝকমকে শহর ম্যাকাও, হংকং-এর লানটাও দ্বীপ হয়ে দক্ষিণ চীনের পার্ল রিভার ডেল্টা অঞ্চলের সাথে সংযোগ স্থাপন করবে এই সেতুটি।
বিশ্বের বৃহত্তম স্টিলের সেতু
ফের আরও একবার সেতু নির্মাণ করে শিরোনামে এসেছে চীন। রীতিমত ৬০ টি আইফেল টাওয়ারের সমান স্টিল ব্যবহার করে বিশ্বের সবথেকে বড় সেতু বানিয়ে চমকে দিয়েছে বেইজিং। হংকং, মাকাও, এবং চীনের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে চীনের তৈরি এই ব্রিজ। পার্ল নদীর মোহনার ওপর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ব্রিজটি তৈরির কাজ ৯ বছর আগে শুরু হলেও অবশেষে চীনের সরকার নির্মাণ কাজ শেষ করে বিশ্বে এক নতুন ইতিহাস রচনা করল। ব্রিজটি আগামী ১২০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করলেও কোনও কিছুই এটিকে আঘাত করতে পারবে না। শুধুমাত্র তাই নয়, ব্রিজটি তৈরি হওয়ার ফলে যাতায়াতে যে সুবিধা হবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। যাতায়াতের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ সময় সাশ্রয় হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনীতি যে অনেকাংশে এগিয়ে যাবে এরকমই আশা রাখছে চীনের অর্থনীতিবিদেরা। জানা গেছে, এই সেতুটি তৈরির জন্য ৪২০,০০০ টন স্টিল ব্যবহার হয়েছে । যা আইফেল টাওয়ারের পরিমানের ৬০ গুণ বেশী বলে হিসেব থেকে জানা গেছে। এই প্রজেক্টের জন্য ১০০ বিলিয়ন চীনা মুদ্রা ব্যায় হয়েছে। এতো গেল সেতুবন্ধনের কথা। এখন দেখার বিষয় ভবিষ্যৎ এই ব্রিজ আরও কিভাবে চীনকে সমৃদ্ধ করবে।
গোল্ডেন গেট ব্রিজ
গোল্ডেন গেট ব্রিজ যা সোনালি দুয়ার হিসেবে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের স্যানফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় ব্রিজ। এই ব্রিজকে
সানফ্রান্সিস্কোতে একতা আইকন প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। এটা তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত লোকজন বিশ্বাস করত না যে এরকম ব্রিজ হবে। স্যানফ্রান্সিসকোর সঙ্গে মেরিন কান্ট্রির যোগাযোগব্যবস্থার আশ্চর্য নিদর্শন এই সেতুটি। ১৮ শতকের পরবর্তী সময়েও গোল্ডেন গেট পার হওয়ার একমাত্র উপায় ছিল ফেরি বা নিজস্ব নৌযোগাযোগ-ব্যবস্থা।
ভিত্তিপ্রস্তর ও নির্মাণ: ১৯১৬ সালে ব্রিজটির ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে এই সেতুটির প্রতি মনোযোগ দিতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সেতুটি নির্মাণের অনুমতি দেয়। নকশায় সেতুটির প্রধান স্তম্ভটি ৪০০২ ফুট করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ৫ জানুয়ারি ১৯৩৩ সালে। নানারকম সমস্যা কাটিয়ে প্রায় বাইশ বছর ধরে এর নির্মাণ কাজ চলে। সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল ২৭ থেকে ৩৫ মিলিয়ন ডলার। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৩৭ সালে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভল্টে উদ্বোধন করেন। ২৭ মে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
আকার: সেতুটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার আর প্রস্থ ২৭ দশমিক ৪০ মিটার (৯০ ফুট)। ছয় লেন-বিশষ্টি এই সেতুটি দিয়ে দৈনিক এক লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে।
বাংলাদেশের পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে লৌহজং, মুন্সিগঞ্জের সাথে শরিয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে, ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে এর ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট ষ্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর আববাহিকায় ১৫০টি স্পান, ৬,১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে দেশটির সবচে বড় সেতু।
পদ্মা বহুমুখী সেতু: প্রকল্পটি তিনটি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করবে- মুন্সীগঞ্জ (মাওয়া পয়েন্ট / উত্তর পাড়), শরীয়তপুর এবং মাদারীপুর (জঞ্জিরা / দক্ষিণ পাড়)। এটির জন্য প্রয়োজনীয় এবং অধিগ্রহণকৃত মোট জমির পরিমাণ ৯১৮ হেক্টর। নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি ভাড়ার ভিত্তিতে আগামী ছয় বছরে অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সম্পদ থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। মূল প্রকল্পের পরিকল্পনা করেন সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্প পাস করেছিলো। পরে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। এই সেতুটি নির্মিত হলে দেশের জিডিপি ১.২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।