বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
বোহেমিয়ান র্যাপসোডি কিংবা এগিয়ে চলার গল্প

মাহমুদুর রহমান: বৈশ্বিক সঙ্গীত ও সঙ্গীত দুনিয়ার খোঁজ যারা রাখেন তাদের কাছে ‘বোহেমিয়ান র্যাপসোডি’ কথাটা পরিচিত। আরেকটু খবর যারা রাখেন তারা জানেন এটি একটি ব্যান্ডের গান, নাম ‘কুইন’। যার মূল আকর্ষণ ছিলেন ফ্রেডি মার্কারি। ফারুক বুলসারা, এক ইন্দো-পার্সি পরিবারের সন্তান।। সঙ্গীতের প্রতি তার তীব্র আগ্রহ। প্রচলিত নিয়মের মধ্যে চলার মানুষ সে নয়। এমনকি বাবার দেওয়া ফারুক নামও তার অপছন্দ। নিজেই নিজের নাম দিয়েছে সে, ফ্রেডি। এ নামেই সে পরিচয় দেয়। ‘Smile’ নামে একটি ব্যান্ডের গান শুনে ভক্ত হয়ে যায় ফ্রেডি। পরিচিত হয় অন্য দুই সদস্যের সাথেও। এমন সময় একদিন ব্যান্ডের লিড ভোকাল ব্যান্ড ছেড়ে দিলে ব্যান্ডের দুই সদস্য ব্রায়ান মে আর রজার টেইলরের সাথে মিলে এক নতুন ব্যান্ড গঠন করে তারা, নাম ‘কুইন’! সেদিন হয়ত তারা জানতো না এই নামেই তারা হবে পৃথিবী বিখ্যাত। জন্ম দেবে এমন সব গান যা মানুষের মুখে মুখে ফিরবে।
ব্যান্ড হিসেবে ‘কুইন’-এর সূচনা, যাত্রা থেকে শুরু করে তাদের অমর রচনা ‘বোহেমিয়ান র্যাপসোডি’ তৈরির গল্প নিয়ে এই নামেই তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র। কিন্তু একটা ব্যান্ড তো কেবল একটা প্রতিষ্ঠান না। তার সঙ্গে জড়িত থাকে কিছু মানুষ। তাদের গল্পও বলতে হয়। এই সিনেমাতেও তাই হয়েছে। তবে যেহেতু ফ্রেডি মার্কারিই সবচেয়ে জনপ্রিয়, তাই তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে সেসব গল্প। ফ্রেডির মনস্তত্ত্ব। তার প্রেম-ভালবাসা, বন্ধুত্ব পরিবারের গল্প দেখা যায় এই সিনেমায়। সেই সঙ্গে আছে ব্যান্ড নিয়ে তার পরিকল্পনা আর এক সাধারণ মানুষ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার যাত্রা।
একটু একটু করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিল ‘কুইন’। কিন্তু আর সব বাস্তবতার মতো ‘কুইন’ ব্যান্ডের ভাগ্যেও লেখা ছিল অনেক বাঁধা বিপত্তি। কখনও অন্তর্দ্বন্দ্ব, কখনও বাহ্যিক সমস্যা, সব মিলিয়ে নানা বাঁধা। আর সেই সব বাঁধা পেরিয়ে আর স্মরণকালের অন্যতম বৃহৎ কনসার্টে ‘কুইন’ এর পারফর্ম করার গল্প নিয়ে এই সিনেমা।
সিনেমার স্ক্রিন টাইম ১৩৫ মিনিট। কিন্তু দেখতে শুরু করলে সময়ের কথা মনেই থাকে না। যাকে বলে চমৎকার নির্মাণ। একটা ব্যান্ডের গল্প নিয়ে সিনেমা হলে সেখানে তাদের গান এবং প্রতিটি সদস্যকে ফুটিয়ে তুলতে হয়, যা এই সিনেমা পেরেছে। ফ্রেডি মার্কারির চরিত্রে অভিনয় করেছেন রামি মালিক। অনবদ্য অভিনয় করেছেন তিনি। দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় সত্যি যেন ফ্রেডি নিজেই অভিনয় করছেন। পেয়েছেন একাডেমী অ্যাওয়ার্ড। সঙ্গে ব্যান্ড সদস্য হিসেবে গুইলিম লি, বেন হার্ডি আর জোসেফও বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। ফ্রেডির প্রেমিকা চরিত্রে লুসি বোয়িনটনের অভিনয়ও ভালো।
ব্রায়ান সিঙ্গারের পরিচালনা নিয়ে বলতে হলে বলতে হয়, চমৎকার কাজ করেছেন তিনি। চরিত্রদের ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি নানা অ্যাঙ্গেল থেকে কনসার্ট দেখানোর বিষয়টি সিনেমায় এনেছে নতুন মাত্রা। আলাদা একটা আবেদন এনে দিয়েছে এই ধারণা।
ফ্রেডি মার্কারিকে নিয়ে বিতর্ক আছে অনেক। কিন্তু কথা হলো তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। আজও তরুণ যুবারা ‘বোহেমিয়ান র্যাপসোডি’ শুনে তন্ময় হয়ে নতুন করে কিছু ভাবতে চেষ্টা করে। বৃহৎ কনসার্ট নয়, এটিই সফলতা। আর সেই সফল মানুষ, সফল দলটিকে নিয়ে তৈরি এই সিনেমাও সমান সফল।