বাক্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ জয় করেছিল কিভাবে?

আরিফুল আলম জুয়েল: ডিভাইড এন্ড রুল নীতিতে একজন ব্যক্তির একক কৌশলে ভারতবর্ষ জয় করে নেয় ব্রিটিশরা। দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল একটি অংশ অর্থাৎ বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তান অঞ্চল অধিকার করবার জন্য তাকেই কৃতিত্ব দেয় ব্রিটিশরা।
অধিকার করার বয়স কিন্তু ১-২ বছর নয় কিংবা ৫০-১০০ বছর ও নয়, প্রায় ২০০ বছর মানে দু’শতাব্দী!
তখনকার বাংলা কিন্তু ভারতবর্ষের সবচেয়ে ধনী রাজ্য ছিল; যে বাংলা তখন ব্রিটেনের চেয়েও ধনী। দাবার ঘুঁটির মত একের পর এক চাল দিয়ে ভারতবর্ষের ধনীতম রাজ্যটি দখল করে নিয়েছিল একজন মাত্র ব্যক্তি- নাম তার রবার্ট ক্লাইভ।
মনে আছে নিশ্চয়, ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের কথা, যে যুদ্ধে এ উপমহাদেশের স্বাধীনতার সূর্য প্রায় দু’শতাব্দীর জন্য হরণ করে নিয়েছিল যে ব্যক্তি, জ্বি, সেই লর্ড ক্লাইভের কথা বলছি এবার !
মুদ্রার দুটো পিঠ থাকে; একটি পিঠ- নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার দৃষ্টিকোন থেকে তো কাহিনীটা আমরা সকলেই জানি; কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠ মানে ক্লাইভের দৃষ্টিকোন থেকে ঘটনাটা কেমন ছিল- সেটাই জানার চেষ্টা করবো আজ!
এক দেশের নায়ক যেমন অন্য দেশের খলনায়ক, এখানে সন্ত্রাসী তো ওখানে বীর- ঠিক তেমনি রবার্ট ক্লাইভ এই কাজের জন্য ব্রিটেনে হয়েছিলেন সমাদৃত।
শিকারী বেড়াল নাকি গোঁফে চেনা যায়। শিশু ক্লাইভের প্রিয় একটি কাজ ছিল কি জানেন- মারামারি করা। আর যে স্কুলে পড়ুক না কেন গন্ডগোল তাকে বাধাতেই হবে। বড় হয়ে এলাকায় মাস্তান গ্যাং গঠন করেন- একে ধরেন, ওকে মারেন, একে ছাড়েন!
বাজে ব্যবহারের কারনে তাকে প্রায়ই স্কুল পরিবর্তন করতে হতো, অবশ্য অনেক সময় আভিজাত্যের কারনে ও স্কুল পরিবর্তিত হতো।
সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করা ছেলেটির বাবা ছিলেন একজন পার্লামেন্টের উকিল।
১৩ জন ভাই-বোনের মধ্যে ক্লাইভ ছিল সবার বড়; ছোট ছয় ভাই-বোন মারা গিয়েছিল শিশু অবস্থাতেই। শিশুকাল থেকে রগচটা ক্লাইভ থাকতেন খালার সাথে!
পাঠক, সরি বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম, রবার্ট ক্লাইভের জন্ম ১৭২৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারে।
১৭৪৪ সালের কিছু আগে, যখন ক্লাইভের বয়স ১৮, তখন তার বাবা তার জন্য চাকরি যোগাড় করে দিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে একজন এজেন্ট হিসেবে, মানে কেরানী টাইপের চাকুরি; তার পোস্টিং হলো বোম্বেতে, অর্থাৎ বর্তমান মুম্বাইতে।
জাহাজে করে ব্রাজিল হয়ে আসবার সময় নয় মাস জাহাজ থামিয়ে রাখতে হয়েছিল মেরামতের জন্য, তখন তিনি হালকা পাতলা পর্তুগিজ ভাষা শিখে নেন।
এটা তার জন্য বেশ কাজে দিয়েছিল, কারণ ভারতের গোয়াতে তখন পর্তুগিজদের ঘাঁটি ছিল।
আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ঘাঁটি ছিল মাদ্রাজ (চেন্নাই), বোম্বে, কলকাতা ইত্যাদি জায়গায়। 
মাদ্রাসপাটনাম গ্রাম অর্থাৎ মাদ্রাজের সেইন্ট জর্জ দুর্গঘাঁটিতে ক্লাইভ ১৭৪৪ সালের জুনে পৌঁছালেন।
পরের দু’বছর তিনি এক দোকানদারের সহকারীর কাজ ছাড়া আর কিছু করবার সুযোগ পাননি।
এরপর ১৭৪৫ সালে প্রথম কর্ণাটক যুদ্ধ, কোম্পানীর আর্মিতে নাম লেখানো, লেফট্যানেন্ট পদে পদোন্নতি, তারপর ক্যাপ্টেন পদে, ফরাসিদের আক্রমনে অবদান সব মিলিয়ে ক্লাইভ ব্রিটিশ সরকারের সুনজরে চলে আসেন।
এর মধ্যে আবার দ্বিতীয় কর্ণাটক যুদ্ধে অসীম বীরত্ব দেখিয়ে দিলেন, বিশেষ করে আর্কট অভিযানে তিনি তার বাহিনীর একজনেরও প্রাণ হারানো ব্যতীত জয় ছিনিয়ে আনেন।
১৭৫৩ সালে তিনি যখন লন্ডনে ফেরত গেলেন তখন তাকে বীরের সংবর্ধনা দেয়া হয়!
প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বর্গ থেকে আসা এক জেনারেল হিসেবে অভিহিত করলেন, যদিও তার কোনোই ট্রেনিং ছিল না। ৭০০ পাউন্ড অর্থমূল্যের জহরতের তরবারি তাকে উপহার দেয়া হয়।
১৭৫৫ সালে ক্লাইভ ভারতে চলে আসলেন আবার। এবার তার দায়িত্ব সেইন্ট ডেভিড দুর্গের ডেপুটি গভর্নর। তিনি জাহাজে আসার সময় তেত্রিশ হাজার পাউন্ড মূল্যের সোনার মুদ্রা হারান সমুদ্রগর্ভে।
আড়াইশ বছর বাদে ১৯৯৮ সালে সে মুদ্রাগুলো উদ্ধার করে বিক্রি করা হয়।
ব্রিটিশ আর্মির লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নীত হন ক্লাইভ।
ঘেরিয়া দুর্গ জয়ের সময় খুব কম ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়েই জিতে যান ক্লাইভ। তবে তিনি যুদ্ধ জয়ের পর অধিকৃত সম্পদের ভাগাভাগিতে অংশ নিতেনই না একদম।
এরপর ক্লাইভ ফিরে এলেন আবার তার ডেপুটি গভর্নরের কাজে, সেইন্ট ডেভিড দুর্গে।
এখানে এসে দুটো খারাপ খবর শুনলেন। প্রথমত জানতে পারলেন, আলীবর্দি খানের পর তার নাতি সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার নবাব হয়েছেন ১৭৫৬ সালে।
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের হুগলি নদীর তীরের কাশিমবাজারে ইংরেজদের আক্রমণ করেছেন সিরাজ-উদ-দৌলা, আর কিছুদিন বাদে ২০ জুন তারিখে কলকাতার দুর্গও দখল করে নিয়েছেন।
আর দ্বিতীয়ত আর্থিক ক্ষতি, কলকাতার পতনে ২০ লাখ পাউন্ড ক্ষতি হয়েছে ইংরেজদের।
শুনতে পেলেন, বন্দি ব্রিটিশদের নাকি রাখা হয়েছে কলকাতার কুখ্যাত কৃষ্ণগহ্বরে। বলা হয়, অতি গরমে ১৪৬ বন্দির মাঝে ১২৩ জনই মারা যান।
তবে এই ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বরের কাহিনী নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা আদৌ জানতেন কি না সন্দেহ আছে।
এবার আসি ১৭৫৭ সালে, পুরো গ্রীষ্ম জুড়ে ক্লাইভ আলাপ আলোচনা করলেন, ষড়যন্ত্রের ছক আঁকলেন মীরজাফর, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, রাজবল্লভ প্রমুখ বিশ্বাস ঘাতকদের সাথে।
অবশেষে ২১ জুন তারিখে বর্ষার প্রথম বর্ষণে পলাশীর আম্রকাননে হাজির হলেন ক্লাইভ।
তার বাহিনীতে ১১০০ ইউরোপীয় আর ২১০০ স্থানীয় সিপাহী। আর নবাবের বাহিনীতে ১৮০০০ অশ্বারোহী, ৫০০০০ পদাতিক আর আরো অনেক কিছু।
জীবনে প্রথমবারের মতো ইতস্তত করলেন ক্লাইভ। ১৬ জন অফিসারের মিটিং ডাকলেন তিনি।
প্রস্তাব দিলেন, যদি কোনো মিত্র এসে যোগদান না করে, বা স্থানীয় বাড়তি সাহায্য না আসে তবে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে আক্রমণের ফলাফল ভালো হবে না।
নিশ্চিত হার।
ক্লাইভসহ নয় জন বিলম্ব করার পক্ষে ভোট দিলেন। কথিত আছে, তিনি গাছের ছায়ায় এক ঘণ্টা একাকি দাঁড়িয়ে ভেবেছিলেন কী করবেন, তখনো তিনি জানতেন না পলাশীর যুদ্ধ ইতিহাসবিখ্যাত এক যুদ্ধ হতে চলেছে। কিন্তু কোনো এক কারণে, কিংবা হয়ত মীর জাফরের কাছ থেকে পত্র পাবার পরপর, তিনি মতামত পরিবর্তন করলেন, এবং সাথে সাথে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন।
ভারী বর্ষণে নবাবের সেনাবাহিনীর বারুদ ভালোভাবে রক্ষিত হয়নি।
ফলে ব্রিটিশ গোলাবারুদের কাছে নস্যি হয়ে পড়ল প্রায় বারুদবিহীন নবাব সেনাবাহিনী, ৫০০ সেনা হারায় তারা। ২৩ জুন যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হলো সারা দিন।
কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, সত্যিকারের ‘সম্মুখ’ কোনো যুদ্ধ বলতে গেলে হয়ইনি, হলেও খুব কম।
ক্লাইভ ইতোমধ্যে জগতশেঠ আর মীর জাফরের সাথে গোপন চুক্তি করে ফেলেছিলেন।
নবাবের সেনাবাহিনীর বিশাল অংশ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে ফেললেন মীর জাফর, যেন নবাব হেরে যান।
ক্লাইভের পক্ষে মাত্র ২২ জন সিপাহী মারা যায়, আর ৫০ জন আহত হয়। এতই কম ছিল তার ক্ষয়ক্ষতি। এটা সত্যি যে, এ যুদ্ধের ফলে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তার আধিপত্য বিস্তার করে ভারতবর্ষে।
সিরাজ-উদ-দৌলা উটের পিঠে করে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেন। তবে মীর জাফরের অধীনস্থরা শীঘ্রই তাকে ধরে ফেলে এবং পরে গুপ্তঘাতক মোহাম্মদী বেগ তাকে হত্যা করে।
ক্লাইভ মুর্শিদাবাদে গিয়ে যেমনটা কথা দিয়েছিলেন মীর জাফরকে নবাব বানিয়ে দিলেন।
ক্লাইভকে নিয়ে যাওয়া হলো কোষাগারে।
সেখানে লাখ লাখ সোনা রুপার পাত্র, জহরত ছিল। ক্লাইভকে জিজ্ঞেস করা হলো তিনি কী নিতে চান।
তিনি তৎকালীন সময়ের এক লাখ ষাট হাজার পাউন্ডের জিনিস নিলেন।
পাঁচ লাখ পাউন্ড সেনাবাহিনীর আর ইস্ট ইন্ডিয়া নেভির মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়।
কোম্পানির কমিটির প্রত্যেককে ২৪ হাজার পাউন্ড করে উপহার দেয়া হয়।
কোম্পানির বাৎসরিক আয় এক লাখ পাউন্ডে দাঁড়ায়।
পলাশীর যুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় অতঃপর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েও তিনি ক্ষান্ত হননি। নবাবের মৃত্যুর পর মীর জাফরের সঙ্গে মিলে ক্লাইভ বংলা ও ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে কব্জা করেন তিনি।
চালু করেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য।
১৭৬০ সালে অবসর নিয়ে ক্লাইভ ফিরে এলেন ব্রিটেনে। অশেষ সম্পদের অধিকারী তিনি তখন। তিনি বাবা-মা আর বোনদের আর্থিক সহায়তা করতে থাকলেন। তাকে নেপোলিয়নের সাথেও তুলনা করা হয়।
ব্রিটেনে তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হবার চেষ্টা করলেন। তাকে পলাশীর ব্যারন ক্লাইভ বানানো হয়।
১৭৬১ সাল থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন।
১৭৬২ সালে দু’বছরের জন্য মেয়রও হয়েছিলেন তিনি। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি তাকে সম্মানসূচক সিভিল ল’য়ের ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে ১৭৬০ সালেই।
১৭৬৪ সালে তাকে একজন ‘নাইট অফ দ্য বাথ’ করা হয়।
সুখের সময় তার বেশিদিন থাকল না।
ব্রিটেনে বসে তিনি শুনতে লাগলেন সব খবর, মীর জাফরের পতন, তার জামাতার ক্ষমতা লাভ, আর এরপর যা যা হলো। ক্লাইভের কীর্তির কারণে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে পুরো কোম্পানি।
তাই কোম্পানির নীতিনির্ধারকরা তাকে জোর করে আবার বঙ্গে পাঠালেন, সব ঠিকঠাক করতে, এবার তার দায়িত্ব একইসাথে গভর্নর ও সেনাপতি।
১৭৬৫ সালে কলকাতায় এসেই ক্লাইভ শুনলেন মীর জাফর মারা গেছেন, তবে তার জন্য ৭০০০০ পাউন্ড উপহার রেখে গেছেন।
জানতে পারলেন, বঙ্গের সেনাবাহিনীতে হালকা বিদ্রোহ হয়েছে। ক্লাইভের সামনে তখন এক সুবর্ণ সুযোগ, বাংলায় তিনি যা করে যেতে পেরেছেন সেই একই জিনিস তিনি উত্তর প্রদেশেও করতে পারেন।
উত্তর প্রদেশ তার হাতের মুঠোয় চলে আসতে পারে। তিনি করবেন কি সেটা?
না, করেননি।
তিনি বরং মনোযোগ দিলেন কিভাবে বাংলা থেকেই আয় বাড়ানো যায়।
ভারতবর্ষে সরকারি চাকরি যারা করতেন তাদের বেতন বৃদ্ধি করলেন ক্লাইভ।
ভারতীয়দের থেকে ‘উপহার’ গ্রহণ নিষিদ্ধ করলেন। তিনি সেনাবাহিনীতে যা করে গিয়েছিলেন সেটা ছিল আরো কার্যকরী।
তবে তার পূর্ব কীর্তি এতটাই সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখেছিল যে, বাংলা থেকে আয় ২০% বেশি আশা করা হত এরপর থেকে।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে এবার। এতে আয় বৃদ্ধি হয়েছিল ঠিকই তবে এর প্রভাবে ১৭৭০ সালের মহাদুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়।
১৭৬৭ সালে ক্লাইভ ভারত ত্যাগ করেন, আর কোনো দিন ফেরত আসেননি। পরের বছর তাকে রয়াল সোসাইটির ফেলো করা হয়।
১৭৭২ সালে পার্লামেন্টে ভারতবর্ষে কোম্পানির অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, আর সেখানে ক্লাইভকে তুলোধুনো করা হয়। ক্লাইভ অবশ্য নিজের পক্ষে সাফাই গান। এরপরও তার নানা উপাধি পাওয়া থেমে থাকেনি।
ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে বাংলার জনসংখ্যার ৬৬% মারা যায়। কোম্পানির অতি লোভই এই দুর্ভিক্ষের কারণ ছিল বলে ধারণা করা হয়।
আর এর মানে পরোক্ষ দোষ আসলে ক্লাইভেরই। ফলে, ক্লাইভের প্রভাব ইংল্যান্ডে কমে যায়।
দুর্ভিক্ষ শেষে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন আইন পাশ হয় পার্লামেন্টে।
ক্লাইভ এমনটাও বলেছিলেন, “আমার ধন সম্পদ নিয়ে যাও, তবুও আমার সম্মান কেড়ে নিও না।”
এবার ক্লাইভের শেষ জীবন—
১৭৭৪ সালের ২২ নভেম্বর ক্লাইভ মাত্র ৪৯ বছর বয়সে লন্ডনে নিজের বাসায় প্রাণ হারান।
কিন্তু কীভাবে?
কথিত আছে, তিনি নিজেই নিজেকে ছোড়া মারেন, কিংবা ছুরি দিয়ে নিজের গলা কেটে ফেলেন। কেউ বলেন, তিনি ব্রেন স্ট্রোকে মারা যান।
আবার এটাও বলা হয়েছে, তিনি আসলে হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছিলেন, যা হয়েছিল বেশি ড্রাগ নেবার কারণে। তিনি আফিমখোর ছিলেন।
জানেন- স্কুলে তাণ্ডব সৃষ্টিকারী ক্লাইভের ডেস্কখানা এখনো সংরক্ষণ করা আছে।
তখনকার সময়ের তার একটি পোষা কচ্ছপ নাম যার ‘অদ্বৈত’র বয়স ১৫০-২৫০ বছর ছিল, যেটি ২০০৬ সালে কলকাতা চিড়িয়াখানায় মারা যায়!
জানেন- পলাশীর যুদ্ধের সময় ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া রবার্ট ক্লাইভের বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর। ত্রিশের দরজায় পা রাখা মানুষটি ১৯০ বছরের জন্য স্বাধীনতার সূর্য হরণ করে নিয়েছিল বাংলার তথা ভারতবর্ষের।
পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ী ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ ভারত এসেছিলেন কপর্দকহীন অবস্থায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কেরানি হয়ে, হাতে ছিল ছোট্ট একটা হ্যান্ডলাগেজ।
কিন্তু ফিরে যাওয়ার সময় তাঁর মাল বহন করতে লেগেছিল পাঁচখানা জাহাজ!
কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো, বাংলা থেকে লুট করা এত ধনসম্পদ ক্লাইভকে শান্তি দিতে পারেনি।
তাঁর মৃত্যুতে আধুনিক ইংলিশ ডিকশনারির জনক বলে খ্যাত স্যামুয়েল জনসন লিখেছিলেন, ‘তাঁর অবৈধ সম্পদ এমন নিষ্ঠুর এবং অসৎ উপায়ে করেছিলেন যে তাঁর নিজের চৈতন্যই তাঁকে শেষ পর্যন্ত নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।’
ব্রিটিশ সরকারের প্রশাসনিক কেন্দ্র হোয়াইট হল, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের সামনে ছাড়াও কয়েকটি জায়গায় রবার্ট ক্লাইভের মূর্তি আছে।
বর্তমানে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনকারীরা তার মূর্তি অপসারণের দাবি তুলেছেন।
এমনকি ইতিহাসবিদরাও তার মূর্তি সরিয়ে নেয়ার পক্ষপাতি।
হয়ত একেই বলে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারকারী ব্যক্তির স্মৃতিস্তম্ভ স্বরূপ থাকা মূর্তি তার দেশের জনগণই অপসারণের জন্য দাবি তুলেছে।
তবে তার মূর্তির যাইহোক স্বাধীনতার সূর্য হরণকারী রবার্ট ক্লাইভ ভারত উপমহাদেশের জনগণের কাছে ঘৃণ্য ব্যক্তি হিসেবেই থাকবেন।
তবে মরেও বেঁচে আছে লর্ড ক্লাইভ, এক ঘৃণিত বিদেশি প্রভুর আদলে !!!
সত্যি-ই, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না !!!