ঢাকার বাইরে
মারমা দুই বোনকে নিয়ে হাইকোর্টের আদেশটি নৈতিকতা বিরোধী: চাকমা নেতৃবৃন্দ

রাঙামাটি: বিলাইছড়ির দুই কিশোরীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার হাসপাতালের উদ্ভুত ঘটনা ও চাকমা রানী অর্ন্তধ্যান এর বিষয়টি খোলাসা করতে সাংবাদিক সম্মেলন করলো পাহাড়ের ৬টি সংগঠন। শুক্রবার বিকেলে রাঙামাটি শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে রাঙামাটির জেনারেল হাসপাতালে গত ২৩শে জানুয়ারী বিকেল থেকে ভর্তি থাকা দুইবোনকে পিতা-মাতার জিম্মায় দিতে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সিভিল সার্জনের প্রতি উচ্চ আদালতের প্রদত্ত আদেশটি নৈতিকতা বিরোধী। উচ্চ আদালত সম্পূর্ন নৈতিকতা বিরোধীভাবে উক্ত আদেশ প্রদান করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন পাহাড়ের নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার বিকেলে রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ীস্থ সাবারাং রেষ্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উক্ত মন্তব্য করেছেন পাহাড়ি নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চাকমা সার্কেলের রানী য়েন য়েনসহ ভলান্টিয়ারদের ওপর বর্বরোচিত হামলায় রাঙামাটির নাগরিক সমাজের গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি, হিমাওয়ান্তি, উইমেন্স রিসোর্স নেটওয়ার্ক, পার্বত্য চট্টগ্রাম হেডম্যান নেটওয়ার্ক, কার্বারী নেটওয়ার্ক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এর উদ্যোগে উক্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাইকোর্টের এক আদেশ মোতাবেক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইউনিফর্মধারী পুলিশ ও সাদাপোশাকধারী নিরাপত্তা বাহিনীর পুরুষ ও নারী সদস্যরা ভূক্তভোগী দুই বোনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের বাবা-মায়ের হেফাজতে দেওয়ার কথা বলে হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক তুলে অজ্ঞাতস্থানের দিকে নিয়ে যায়। এই ঘটনার সময় ওয়ার্ডে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর নারী ওপুরুষ সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এদের মধ্যে নারী সদস্যরা ওড়নাদিয়ে তাদের মুখ বেধে রাখে এবং পুরুষরা মাক্স পড়া অবস্থায় ছিলো। এহেন জরবদস্তিমূলক আচরণ ও রানী য়েন য়েনসহ ভলান্টিয়ারদের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং একই সাথে এই ঘটনার তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নাগরিক সমাজ মনে করে চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা রানী য়েন য়েন এর ওপর হামলা পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহি প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলার সামিল। তদুপরি এই হামলা পার্বত্য চুক্তির অভিপ্রায়ের সাথেও সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে পাঁচদফা দাবি জানানো হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো-উক্ত হামলার তদন্তে একটি কমিটি গঠন, হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া দুই বোনের বর্তমান অবস্থান নিশ্চিত করে একটি সুষ্পষ্ট প্রতিবেদন আদালতে দাখিল, হামলার ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁেজ বের করে বিচার ও শাস্তির আওতায় আনা, দুই মারমা তরুনীর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ চাকমা রাজ পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট্য সকল শুভাকাঙ্খিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ বলেন, উক্ত দুই মারমা কিশোরী তাদের পিতা-মাতার হেফাজতে নাগিয়ে চাকমা সার্কেল চীফের হেফাজতে যেতে চায়। এই লক্ষ্যেই বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করে নির্দেশনা চাওয়া হয়। সেটি এখনো পর্যন্ত সমাধানে অপেক্ষমান থাকাবস্থায় মেয়েগুলোর পিতার আরেকটি আবেদন আমলে নিয়ে অন্য বেঞ্চ একটি আদেশ প্রদান করেছেন। নৈতিকতার বিরুদ্ধেই উক্ত আদেশ প্রদান করেছে উচ্চ আদালতের উক্ত ব্র্যাঞ্চ।
সংবাদ সম্মেলনে হামলার শিকার হওয়া কারোই উপস্থিতি না থাকার বিষয়টি সম্পর্কে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, নিরাপত্তার ব্যাপারটি মাথায় রেখে এবং মানসিক অবস্থা বিবেচনায় তাদেরকে এখানে উপস্থিত রাখা হয়নি।
নতুন বার্তা/এমআর