বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
মেরিলিন মনরো ও আর্থার মিলারের প্রেম

অভিনয়ে সেরা অভিনেত্রীর জন্য কোন অস্কার বা বড় পুরস্কার না পেলেও হলিউড সিনেইতিহাসে অমর হয়ে আছেন মেরিলিন মনরো। ষাটের দশকে মনরো প্রমাণ করলেন রূপালী পর্দায় গ্ল্যামার ও ক্যারিশমা’র কোন বিকল্প নেই। একই সময় মার্কিন নাট্যকার আর্থার মিলার তাঁর ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ দিয়ে পুলিৎজার পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। জনপ্রিয় সাহিত্যিক হিসেবে ততদিনে মিলার দারুণ সেলিব্রেটি, আটলান্টিকের দুই পাড়ে।
১৯৫৬ সালের জুন মাসে সবাইকে অবাক করে হলিউডের গ্ল্যামার রাজকন্যার হাতে বিয়ের আংটি পরিয়ে দিলেন আর্থার মিলার। মিলারের জন্য এটা ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। তার দুই বছর আগে কিংবদন্তী বেসবল সেন্টার ফিল্ড প্লেয়ার জো ডিম্যাজিও’র সাথেও দ্বিতীয় বিয়েটি ভেঙ্গে যায় মনরো’র। দুইশো চুয়াত্তর দিন টিকেছিলো তাঁদের বিয়ে। সাহিত্যের ছাত্ররা জানেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে তাঁর ‘ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি’ উপন্যাসে বুড়ো সান্তিয়াগো’র অনুপ্রেরণা ছিলেন এই ডিম্যাজিও। সে যাই হোক, বিচ্ছেদের তিন দিনের মাথায় সর্বংসহা ডিম্যাজিও অনুভব করলেন মনরো’ নামের গোলাপ ফুলটি ছাড়া তিনি অচল।
তাঁর মতো শক্ত মানুষ কোমল ফুলের কাঁটার আঘাত সহ্য করতে পারলেন না। কিন্তু সেটা বোঝানোর সুযোগও পেলেন না। সময় গড়াতেই মনরো’র জীবনে ততদিনে চলে এসেছেন আরেক বুদ্ধিদীপ্ত মৌমাছি আর্থার মিলার। সর্বপ্রথম ফক্স স্টুডিও’তে খুব কাছ থেকে মনরো’কে দেখার সুযোগ পান মিলার। দেরী না করে লম্বা চিঠি লেখা শুরু করেন। মোট দুইশো’র বেশী চিঠি লিখেন তিনি মনরো’কে। সামান্য অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্য কাঙ্গাল ত্রিশ বছর বয়সী মেরিলিন মনরো দেরী না করে সাড়া দিলেন মিলারের সম্মোহনী ভাষা-মাধুর্যে। ৩০ এপ্রিল ১৯৫৬’তে মিলার লিখলেন মনরো’কে, “আমি যখন তোমাকে চুমু খাবো ও গভীরভাবে জড়িয়ে ধরবো, বিশ্বাস করো অন্যরম কিছু একটা তখন ঘটবে।
সব ধরনের গড়াগড়ি, জড়াজড়ি, ছোঁয়াছুঁয়ি ইত্যাদি যাবতীয় উচ্ছ্বাসে আমরা ভেসে যাবো। এরপর ক্লান্ত হয়ে যখন আমার কাঁধে মাথা রেখে তুমি বিশ্রাম নেবে, ধীরে ধীরে আবার ক্ষুধার্ত কামনা জেগে উঠবে।” মিলার আরো লিখলেন, “আমি আবার চুপিচুপি তোমার রান্নাঘরে ফিরে আসবো ও ভাব করবো যেন তোমাকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছি। তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সকালের নাস্তা বানাবে আর আমি তোমার ঘাড়-পিঠ-মেরুদণ্ড বেয়ে হাঁটুর পেছনে সব জায়গা ছুঁয়ে ঘুরে দাঁড়াবো তোমার মুখোমুখি।
১৯৬১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর সুখে-দুখে এই জুটির সংসার টিকেছিল। বিয়ের পর লন্ডনে তাঁরা এক সাথে হানিমুনে যান। সেই সফরে মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজ ছিলো মোট সাতাশটা সুটকেস নিয়ে তাঁদের লন্ডন ভ্রমণের ছবি। পরবর্তীতে মিলার তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, ‘মনরো’র সাথে তিনি জীবনের সেরা সময় ও কঠিন সময় দুই অভিজ্ঞতাময় জীবনই কাটিয়েছিলেন।’ মনরো ছিলেন সিজোফ্রেনিয়া’তে আক্রান্ত এবং সম্ভবত মিলার তাঁকে সবচেয়ে ভালো বুঝতেন। অনেকের ধারণা , মিলারের সাথে বিচ্ছেদের এগারো মাস পর মনরো অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
যদিও প্রেসিডেন্ট কেনেডি’র সাথে তাঁর আন্তরিকতার জের ধরে এই অকাল মৃত্যু অনেকে সন্দেহের চোখে দেখে আসছেন। তবে ঘটনা যাই হোক মনরো মৃত্যুর আগে প্রাক্তন স্বামী ডিম্যাজিও’র কিছু আবেগঘন চিঠি পাচ্ছিলেন। মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আবার তাঁর কাছে ফিরে যেতে। মিলারের মতো সাহিত্য বোদ্ধা না হলেও ডিম্যাজিও’র সরল স্বীকারোক্তিগুলো ছিল অসাধারণ। জো ডিম্যাজিও লিখেছিলেন, “মেরিলিন, আমি খবরে দেখলাম তুমি অনেক অসুস্থ ও তোমার এই অবস্থা তোমার প্রেমিক হিসেবে আমাকে অনেক উদ্বিগ্ন করে তুলছে। আমি জানি কোন কিছুই আমার প্রতি তোমার হারানো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে না কিন্তু আমি আন্তরিকভাবে চাই তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো।
আমার হৃদয় টুকরো টুকরো হয়ে যায় যখন দেখি জনসমক্ষে তোমাকে চোখের পানি ফেলতে। তুমি যদি আমার চিঠিটা পাও দয়া করে আজ রাতেই দেখা করো। আমি তোমাকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি।” বলা বাহুল্য, মেরিলিন মনরো’র যাবতীয় অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া ডিম্যাজিও একাই সামলেছিলেন। মেরিলিন যে বছর মারা যান সেই বছর আর্থার মিলার বিয়ে করলেন তাঁর পরিচিত বান্ধবী ও ফটোগ্রাফার ইঙ্গ মোরাত’কে। ২০০২ সালে মোরাতের মৃত্যু পর্যন্ত মিলার সাথে ছিলেন। আর্থার মিলার পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন ২০০৫ সালে। ততদিনে মনরো ‘মিথ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন সারা বিশ্বে।