ক্রিকেটখেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
ম্যাচ ফিনিশিং ও মাইন্ড গেম

ইসমাইল উদ্দিন রাকিব: বাংলাদেশ ক্লোজ ম্যাচ হেরেছে বহুবার। শেষ মূহুর্তে খুঁটিনাটি কিছু ভুলের কারণে জয়ের প্রান্ত থেকে ম্যাচ হারতে হয়েছে। এর পেছনে সাইকোলজিটা কি? ক্রিকেট যে একটা স্নায়ুর খেলা জানা সত্ত্বেও সে ব্যাপারে আমাদের ক্রিকেট বোর্ড এবং ক্রিকেটাররা কতটা মনযোগী। আদৌ কি মানসিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেন।
জাতিগত ভাবেই আমাদের এই সমস্যা রয়েছে। একটু বিশ্লেষণ করা যাক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের সাথে ম্যাচ এবং বাংলাদেশ মহিলা দলের ২০১৮ সালের ভারত মহিলা দলের সাথে খেলা এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচ তুলনা করা যাক। ১৪৭ রানের টার্গেটের বিপরীতে শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ৬ বলে ১১ রান।
এমন মূহুর্তে বড় শর্ট খেলে ম্যাচ জেতাতে মন চায়। হাফ পিচে বল দিলে মুশফিকে ছক্কা হাকাতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। শিক্ষা নেন নি মাহমুদুল্লাহ। পরের বলে মাহমুদুল্লাহ লো ফুলটসে ঠিক একই জায়গায় ছক্কা হাকাতে গিয়ে ক্যাচ দেন। সমীকরণ তখন ১ বলে ২ রান। শুভাগত হোম ব্যাটে লাগাতে ব্যার্থ হলে রান আউট হয় মুস্তাফিজ। বাংলাদেশ ম্যাচ হারে।
২০১৮ সালে মহিলা দল এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১১৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামেন। শেষ ওভারে দরকার ৬ বলে ৯ রান। রুমানা ৩ বলে ৬ রান তুলেন। দরকার ৩ বলে ৩ রান। পুরষ দলের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি তারা।সানজিদা বড় শট খেলে ম্যাচ শেষ করতে চাইলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন। পরবর্তী বলে রুমানা ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হন। সমীকরণ ১ বলে ২ রান। তবে জাহানারা আলম এবার ভুল করেন নি। তিনি লেগ সাইডে দুইজন ফিল্ডারে মাঝে বল পাঠিয়ে খুব সহজেই দুই রান নেন। বাংলাদেশ মহিলা দল ম্যাচ জেতে। মহিলা ও পুরুষ উভয়ই এখানে বড় শট খেলে ম্যাচ জেতানোর প্রবণতা দেখিয়েছেন। বিপরীত দলের সাইকোলজি ধরতে পারেন নি।
অন্যান্য দল কি এমন সমীকরণে পড়ে নি? আসুন দেখে নেই এমন বিষয়গুলো তারা কিভাবে সামলেছেন। ২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে মেসবাহকেও ফাদে ফেলেন ধোনি। এটি ছিল পাকিস্তানের শেষ উইকেট। ৪ বলে ৬ রানের সমীকরণে তিনি স্কোপ করতে গিয়ে তিনি ক্যাচ দেন ।সেই বলের আগে ধনী ওখানে ফিল্ডার এনে মেসবাহকে টোপ দেন। ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের শেষ ওভারে বেন স্টোকস ও একই সমীকরণে ছিলেন। ১ বলে ২ রান। তিনি ১ বলে একটি সিঙ্গেল নিয়ে ম্যাচটি টাই করেন। একটা ব্যাপার স্পষ্ট এখানে, আমাদের উপমহাদেশর ক্রিকেটে একমাত্র ভারত ছাড়া বাকি সব দল এমন সাইকোলজিকাল বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয় না। তাই ভারত ছাড়া এশিয়ার বাকি দলগুলো এতটা পিছিয়ে। যতদিন মানসিক বিষয়গুলোকে জোড় দেওয়া না হবে ততদিন ভাল ফিনিশার আসবে না।
প্রতিপক্ষের মন বুঝতে পারা একজন ফিনিশারের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এবি ডিভিলিয়ার্স, ধোনি এখানে জ্বলন্ত উদাহরণ। ২০১৫ সালে এবি ৪৪ বলে ১৪৯ রানের দ্রুততম ইনিংস যেমন খেলেছেন ঠিক তেমনই ২৯৭ বলে ৪৩ রানের সর্বনিম্ন স্ট্রাইক রেটেও তিনি ব্যাট করেছেন। ব্যাপারটা হল ম্যাচের অবস্থা বুঝে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা। আমাদের দেশীয় বেশিরভাগ ক্রিকেটাররা টেস্ট খেলেন সম্পূর্ণ ওয়ানডে মেজাজে।
আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করা হয়। কিছুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়ান গ্রেন মেক্সওয়েল মানসিক স্বাস্থ্য ভাল না থাকায় সাময়িক বিরতি নেন। বিরাট কোহলি তাকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন ২০১৪ আর ২০১৯ এর বিরাট কোহলির মধ্যে পার্থক্য হয়েছে মানসিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণে। বিসিবি ও ক্রিকেটারদের এই “মাইন্ড গেম” বিষয়টা গুরত্ব দেওয়া উচিত। তবেই আরো ভালো ক্রিকেটার তৈরি সম্ভব।