বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
যাত্রাপালার শিশু শিল্পী থেকে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা

এনামুল সাদিক: আড়িয়াল খাঁ পাড়ের পিঙ্গলকাটী গ্রাম, এই গ্রামের আব্দুল করিম নামের এক ব্যক্তি স্বপ্ন দেখতেন দেশ বিখ্যাত অভিনেতা হবেন। নিয়মিত যাত্রাপালা করতেন আব্দুল করিম। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অনটন যাত্রাপালার উপার্জনে চলছেনা। তাই বাধ্য হয়ে অভিনয় জীবন ইস্তফা দিয়ে পরিবার নিয়ে ঢাকা চলে আসেন এবং ব্যবসায় শুরু করেন। আব্দুল করিম ঢাকায় অবস্থান কালে তার অষ্টম সন্তান মোশাররফ জন্ম গ্রহণ করেন। মোশাররফ যখন ডানপিটে তখন তাকে গ্রামের বাড়ী বরিশালে লেখাপড়া করার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু লেখাপড়ায় তেমন মনোযোগ ছিলনা তার। গ্রামে গিয়ে সাই সাই করে সাইকেল দৌড়াতে পারছেনা, বিদুৎ নাই,অপরিচিত বন্ধুমহল এসবের কারণে মোশাররফ আনমনে হয়ে যায়। কিন্তু মেজো ভাইয়ের ভয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতে হতো। একটা সময় হয়ে উঠেন মনোযোগী ছাত্র।
কবিতা আবৃত্তি করে অনেক পুরস্কার অর্জন করেন। শিশু শিল্পী হিসেবে যাত্রাদলে যোগ দেন। এ বিষয়টা পরিবারের মানুষজন ভালভাবে নিতে পারছিলোনা। কারণ তার বাবা জানে যাত্রাদলে অভিনয় করে কিচ্ছু নাই। তবু মনে মনে ছেলেকে উৎসাহ দিতেন। মোশাররফ করিম অভিনেতা হিসেবে আত্ম প্রকাশ করার পূর্বে তার খুবই দুর্দিন অতিবাহিত করতে হয়েছিল। একটি টি-শার্ট আর কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে বেড়িয়েছেন কাজের সন্ধানে। তারপর একটি মঞ্চনাটক গ্রুপের সাথে জড়িয়ে যান আর টিউশনি করেন। এভাবেই চলছিল জীবন। পাসিং শট দিয়ে টিভি নাটকে তার অভিনয় জীবন শুরু। পাসিং শট মানে শুধুই হেটে যাওয়া,বা বসে থাকা। সংলাপ তো দূরের বিষয়। লাইট ম্যানদের সাথে মাইক্রোর শেষ সিটে বসে সেটে আসতে হতো। তাতে তার কোন আক্ষেপ ছিল না। কারন সে নায়ক হতে আসেনি, সে এসেছিল অভিনেতা হতে।
এরপর ধীরে ধীরে সংলাপ সহ অভিনয় করার সুযোগ হয়ত মিলল, তাও কোন চাকরের চরিত্রে বা নায়কের বন্ধুর চরিত্র। এগুলো খুব বেশী দিন আগের কথা না। তার ভিতরের সুপ্ত প্রতিভা দিন দিন প্রকাশ পেতে থাকল। সেই প্রতিভার আলো সম্পূর্ণ ধপ করে জ্বালিয়ে দিলেন যে পরিচালক, তার নাম মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ‘ক্যারাম’ টেলিফিল্ম তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এরপর আর তাকে কোনদিনও পিছনে তাকাতে হয়নি। এখন তার শিডিউল নিতে হলে তিন মাস তার পিছনে পিছনে ঘুরতে হয়। জীবন এমনই। ঘূর্নায়মান! প্রতিভা থাকলে আর তার জন্য একনিষ্ঠ পরিশ্রম করার মন মানসিকতা থাকলে তাকে কেউই আটকিয়ে রাখতে পারে না। মোশাররফ করিম তেমনই একজন প্রতিভাবান, পরিশ্রমী অভিনেতা। না সে এখনো নায়ক নন, তিনি নায়কেরও অনেক উর্দ্ধে! তিনি একজন অভিনেতা। যে অভিনেতার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে একাধিক চরিত্র!
একুশ শতাব্দীর প্রথম দশকে টেলিভিশনের পর্দায় ব্যতিক্রমী ও শক্তিশালী অভিনয়শিল্পী হিসাবে আবির্ভূত হন। তার অভিনীত প্রথম নাটক অতিথি। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তার প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র জয়যাত্রা। পরবর্তীতে তিনি রূপকথার গল্প (২০০৬), দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭), থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার (২০০৯), প্রজাপতি (২০১১), টেলিভিশন (২০১৩), জালালের গল্প (২০১৫), এবং অজ্ঞাতনামা (২০১৬) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৮ সালে তিনি দেয়াল আলমারি নাটকে অভিনয় করেন। এই নাটকের জন্য তিনি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার -এ সমালোচক শাখায় সেরা টিভি অভিনয়শিল্পী (পুরুষ) বিভাগে পদক অর্জন করেন।
এরপর ২০১২ সালে জর্দ্দা জামাল ও ২০১৩ সালে সেই রকম চা খোর নাটকের জন্য মেরিল প্রথম আলো শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও মেরিল প্রথম তারকা জরিপ অনেক পু্রস্কার অর্জন করেন। ২০১৫ সালে আভাঙ্কা চলচ্চিত্র উৎসবে জালালের গল্প চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি অভিনয় করেন অসংখ্য নাটক,টেলিফিল্ম ও চলচ্চিত্রে। আজো তিনি সোনালী অভিনয় জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন।