বাক্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
যেভাবে মোনালিসার হাসি এঁকেছিলেন ভিঞ্চি

বিজ্ঞান গবেষণা বলছে মানুষের সাধারণ দৃষ্টিশক্তি এক সেকেন্ডের দশ বা বারো ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে কোনো পরিবর্তন হলে তা লক্ষ্য করতে পারে। অর্থাৎ চলমান কোনো ঘটনাকে কিছু ফ্রেমে ভেঙে নেয় মানুষের চোখ, মস্তিষ্ক। তারপর তাদের আলাদা আলাদা করে চিহ্নিত করে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক সেকেন্ড ৪০টি ফ্রেমকেও চিহ্নিত করার মতো বিরল ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাল লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অতিমানবিক ‘কুইক আই’-এর কাছে এই ক্ষমতাও নিতান্তই তুচ্ছ ছিল।
সুইজারল্যান্ডের বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডেভিড এস থ্যালারের সাম্প্রতিক গবেষণা এমনটাই তথ্য উপস্থাপন করল পৃথিবীর সামনে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই গবেষণাপত্র মূলত ভিঞ্চির আঁকা ছবিগুলোরই এক প্রকার ফ্রেমভিত্তিক বিশ্লেষণ। আর সেখান থেকেই উঠে আসছে ষষ্ঠাদশ শতকের অন্যতম চিত্রশিল্পীর অতিমানবিক ক্ষমতার উদাহরণ। যে দৃষ্টিশক্তি তাঁকে সাহায্য করেছিল মোনালিসার হাসির মুহূর্তকে তাঁর স্মৃতিতে বন্দি করতে। ভিঞ্চির দৃষ্টিশক্তি এতটাই প্রখর ছিল যে গঙ্গাফড়িং কিংবা ছোট্ট কোনো পাখির ডানা ঝাপটানোর মুহূর্তগুলোকেও আলাদা আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারতেন তিনি। স্মৃতিতে সংরক্ষণ করতে পারতেন মানুষের ক্ষণস্থায়ী অভিব্যক্তি।
লিওনার্দোর আঁকা একটি গঙ্গাফড়িংয়ের ছবি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে প্রথম গবেষক থ্যালারে চোখে পড়ে একটি বৈসাদৃশ্য। তিনি লক্ষ্য করেন গঙ্গাফড়িংটির সামনের এবং পিছনের ডানা সম্পূর্ণ সমন্বয়হীন। যা দেখেই সন্দেহ হয় থ্যালারের। যা প্রথমে লিওনার্দোর ভুল বলেই মনে হয়েছিল তাঁর। তবে এই ছবি আঁকার চারশো বছর পরের প্রযুক্তির সাহায্য নিতেই স্পষ্ট হয়ে আসে আসল বিষয়। হাই রেসোলিউশন ক্যামেরায় তোলা গঙ্গাফড়িংয়ের ভিডিও-কে ফ্রেম হিসাবে ভাঙতেই চমকে ওঠেন থ্যালার। না কিছুই মন গড়া বানানো নয়, ভুলও নয় লিওনার্দোর। বাস্তবে এমন ভাবেই ওড়ে গঙ্গাফড়িং। তার সামনের ডানা এবং পিছনের ডানার মধ্যে থাকে অতিক্ষুদ্র সময়ের ব্যবধান। অ্যানাটমির বইয়ের থেকেও নিখুঁত দা ভিঞ্চির আঁকা হৃৎপিণ্ড, জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা।
তবে এখানেই অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিস্ময়ের আরও বাকি ছিল থ্যালারের। এরপর নতুন উদ্যম নিয়েই থ্যালার শুরু করেন ভিঞ্চি-তদন্ত। আর তাতেই উদ্ঘাটিত হয় মোনালিসার হাসির রহস্য। লিওনার্দো এমনই একটা মুহূর্তকে বন্দি করেছিলেন ক্যানভাসে যা মোনালিসার হাসির উপক্রম। অর্থাৎ স্বাভাবিক কোনো মুহূর্ত থেকে আকস্মিক হাসতে শুরু করার প্রারম্ভিক মুহূর্ত। কাজেই সেখানে অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ, আবেগ থাকলেও নেই হাসির তুমুল ভেঙে পড়া। যা অনন্য করে তুলেছে মোনালিসাকে তবে ভিঞ্চি ছাড়াও এমন প্রতিভার থ্যালার লক্ষ্য করেছেন জাপানি চিত্রকর হোকুশাইয়ের ছবির বিশ্লেষণ করতে গিয়ে। পাশাপাশি আমেরিকান বেসবল খেলোয়াড় টেড ইউলিয়ামসের মধ্যেও রয়েছে এই ক্ষমতা। নিজেকে এমনভাবেই প্রশিক্ষণ দিয়েছেন টেড যে বেসবল সেকেন্ড ৩০ থেকে পঞ্চাশবার ঘুরলেও তার সিম দেখতে অসুবিধা হয় না টেডের, কিন্তু আগ্রহ থেকেই যায় লিওনার্দো কত সূক্ষ্ম সময়ের অন্তরে বন্দি করতে পারতেন মুহূর্তদের?
থ্যালার প্রযুক্তির সাহায্যেই জানান সেকেন্ডে ৫০ থেকে ১০০টির মতো ফ্রেমকে আলাদা আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারতেন ভিঞ্চি। তবে এই ক্ষমতা তাঁর জন্মগত, নাকি নিজেই আয়ত্ত করেছিলেন লিওনার্দো তা বলা কঠিন। সেই রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক দশক কিংবা শতকও!
তথ্য সূত্র: প্রহর ওয়েব ম্যাগাজিন