বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
যে গল্প বলা হয়নি এতদিন

মাহমুদুর রহমান: মুম্বাইয়ের বিস্তৃত বস্তি অঞ্চল। ছোটছোট ঘর টিনের চালের। সেখানে বসত একসঙ্গে বহু লোকের। না আছে জীবনের মৌলিক অধিকার, না আছে নতুন করে কিছু করার উদ্যম। এ জায়গা যে মুম্বাই হতে হবে এমনটা জরুরী নয়। হতে পারে দিল্লী কিংবা ঢাকাও। কিন্তু মূল বিষয় একই। সেটা হলো একই রকম জীবন টেনে নিয়ে যাওয়া পুরুষের পর পুরুষ ধরে। কেননা, এখানে স্বপ্ন দেখার অধিকার নেই। কিন্তু সেই নিষিদ্ধ কাজটিই করতে চায় মুরাদ। বাবা পেশায় ড্রাইভার, সে আন্ডারগ্রাড স্টুডেন্ট। এবং গুলিঘুজির জীবনের মধ্যেও তার কাছে কোনভাবে এসে ধরা দিয়েছে মিউজিক। কিন্তু সে মিউজিকের ধরন একটু আলদা। মুরাদ পছন্দ করে ‘র্যাপ’। অথচ প্রচলিত ধারার মতো কিছু ইংরেজি শব্দ ঢেলে দিয়ে র্যাপ করায় সে ইচ্ছুক না। অর্থবহ র্যাপ গাইতে চায় সে। মুরাদের এই ইচ্ছে জানে কেবল তার কিছু বন্ধু আর প্রেমিকা সাফীনা। সাফীনা এমন এক মেয়ে যাকে তার মা পাহারা দিয়ে কলেজে নিয়ে যায় নিয়ে আসে। এরই মাঝে কোনভাবে সে মুরাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ধরে রাখে শক্ত হাতে। শুধু তা-ই নয়, মুরাদকে জুগিয়ে যায় সাহস।
মুরাদ শব্দের অর্থ ‘অভিলাষ’, অর্থাৎ লালিত কোন স্বপ্ন সফল করার ইচ্ছা। ‘সাফীনা’ অর্থ ‘তরণী’। জয়া আখতার তার ‘গালি বয়’ সিনেমার গল্পের সঙ্গে চমৎকার ভাবে নামকরণ করেছেন দুই প্রধান চরিত্রের। স্বপ্ন নিয়ে তো বাঁচে কতো মানুষ, কিন্তু বাঁধার সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার মতো তরণী সকলের থাকে না যা পেয়েছিল মুরাদ। মূলত জয়া আখতারের ‘গালি বয়’, কেবল সিনেমার গল্পের জন্য কিংবা রানভীর-আলিয়ার অভিনয়ের জন্যই অনবদ্য হয়নি, বরং এই সিনেমায় ব্যবহৃত এমন নানা উপমা, তার সঙ্গে শহরের বা জীবনের এমন একটা চিত্র ফুটে উঠেছে যা আগে বলিউডের মূলধারার সিনেমায় এসেছে খুব কম। এই সিনেমায় মুরাদের স্বপ্নের পাশাপাশি আমরা দেখি তার বাবার দ্বিতীয় বিয়ে করা এবং সেখানে মুরাদ সহ তার পরিবারের অসহায়তা। নিচুতলার মুসলিম একটি পরিবারের চিত্র চমৎকার ফুটে উঠেছে যেখানে মুরাদ র্যাপ গাইতে চায় কিন্তু সে নামাজ পরে এবং মদ থেকে দূরে থাকে। আমরা দেখি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সাফীনাকেও। পড়াশোনার সুযোগ থাকলেও পর্দা এবং কঠিন নজরদারি তার উপর।
এসবের মধ্য দিয়েও কেবল তীব্র সহ্যক্ষমতা এবং স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছে নিয়ে এগিয়ে যায় মুরাদ। সেজন্য কখনও তার ঘর ছাড়তে হয়, কখনও টাকার জন্য গাড়ি চুরি করতে হয়। নিচুতলার গল্পগুলো এমনই। সিনেমায় যেমন বলা হয়েছে একটি গানে, “খুব কাছে আমরা তবু খুব দূরে, এ কেমন অসহায়তা?”
অর্থাৎ আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা এমন অনেক স্বপ্ন আছে যা আমরা জানি না কিংবা জানতেও পারি না। তীব্র জ্বালা নিয়ে চলা মানুষগুলো প্রতি মুহূর্তে নতুন কিছু করতে চায়। কিন্তু তাদের সব গল্পগুলো সব সময় জানা হয় না।
মুরাদের গল্প হয়ত তুলে এনেছেন জয়া। সে গল্পে নিজের অন্যতম সেরা অভিনয় করেছেন রানভীর সিং। এমন সিনেমাগুলোকে আজকাল সাধারণত নায়িকা কেবল শো-পিস হিসেবে থাকে, কিন্তু এ গল্পে আলিয়ার সাফীনা চরিত্রটি অনেক অর্থবহ। আলিয়াও করেছেন দারুণ। সেই সঙ্গে বারবার হেরে যাওয়া মানুষদের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ের ‘টু দ্য পয়েন্ট’ চিত্রায়ন, সিনেমাটিকে দিয়েছে অনন্য এক মাত্রা। তাই সিনেমা দেখে সবারই মনে হবে, ‘আমাদেরও সময় আসবে’।