ছুটিহোমপেজ স্লাইড ছবি
যে দেশে সুখ দেখা যায়

ভুটানে একজন মানুষও করোনায় আক্রান্ত হয়নি। কোনো ধরনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের প্রশ্ন নাই। ভাবা যায়? এই ছোট্ট দেশটির রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ও গণসচেতনতা দেখে আমি মুগ্ধ। এদের কর্মতৎপরতা, কল্যাণকামিতা, সাধুতা ও সৌন্দর্য অবাক করার মতো। তাদের জিডিপি নিয়ে মাথাব্যথা নাই, উন্নয়ন ও প্রগতি পরিমাপ করা হয় সুখ দিয়ে।
আমাদের ভুটানভ্রমণের গাইড ছিলেন ইয়েশে সাইদী। তার কাছে এখন জানতে চাইলাম, তোমার দেশের করোনা পরিস্থিতি কী? ট্যুরিজম সেক্টর তো লকড, এর সাথে জড়িত লোকদের কী খবর? অন্য স্বল্প আয়ের মানুষদের কী অবস্থা?
ইয়েশে জানালো, ট্যুরিজম বিভাগের ক্ষতিগ্রস্তদের রাজা প্রতিমাসে ১২০০০ গুলট্রাম দিচ্ছেন। কেউ লোন নিলে তিন মাস কোনো ইন্টারেস্ট দেওয়া লাগবে না। স্বল্প আয়ের মানুষদের ৮০০০/- করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
দেশটিতে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৬ মার্চ। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত মাত্র ৪৮ জন, তারা সবাই বিদেশফেরত। করোনাকালে প্রায় ১০ হাজার নাগরিক দেশে ফিরেছে। দেশে ফিরলেই তাদের ২১ দিন (হু নির্ধারিত ১৪ দিনের পরেও অতিরিক্ত এক সপ্তাহ) সরকারি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। আক্রান্ত অনেকেই সুস্থ হয়ে গেছে। করোনায় এখনো মৃত্যু হয়নি কারো। অধিক সতর্কতায় কিছু স্থানে কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়েছে। সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খোলা। এত বিচ্ছিন্নতার পরেও ২০ হাজার মানুষকে টেস্ট করা হয়েছে। তাতে স্থানীয় কারো কোভিড ধরা পড়েনি।
সাতদিন তাদের দেশে ঘুরে কেবল পথঘাট পাহাড়ী সৌন্দর্যে মুগ্ধ হইনি, মোহিত হয়েছি ট্রাফিক শৃঙ্খলা ও সার্বিক সংস্থাপনা দেখে। রাজধানীর ব্যস্ত সড়কেও জেব্রাক্রসিংয়ে পা দিলে দুই পাশের সমস্ত গাড়ি থেমে যাওয়া দেখে শিহরিত হয়েছি। যতক্ষণ নাগরিক রাস্তা পার না হবে, প্রধানমন্ত্রীর গাড়িও অপেক্ষা করবে জেনে আপ্লুত হয়েছি। ভুটানিজ তো বটেই, ট্যুরিস্টদের জন্যও ফ্রি চিকিৎসা শুনে প্রফুল্লতা পেয়েছি।
আমরা জেনেছি, ভুটানে কোনো ভূমিহীন মানুষ নেই। রাজার কাছে আবেদন করলে ঘর দেওয়া হয়। খুব দুর্গম এলাকায় একটি ঘর থাকলেও সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছে যায়। একজন মানুষের জন্যও পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো হয়। ইয়েশের কথায়, Our King is for our people, and down to earth.
তানিম ইশতিয়াক, লেখক ও শিক্ষক