বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
লাইফ ইজ বিউটিফুল?

আফনান আবদুল্লাহ: কেকের দোকানে লিখা ‘‘ইহুদি আর কুকুরের প্রবেশ নিষেধ।’’ ছেলে জানতে চায় –‘বাবা কেন ইহুদি আর কুকুরে রা ওদের দোকানে ঢুকতে পারবে না!” বাবার উত্তর-‘এটা যার যার পছন্দ বাবা।’ ছেলে বললো-‘ আমাদের দোকানে তো সবাই ঢুকতে পারে’ বাবা বললো-‘বলতো বাবা, তুমি কি কাউকে অপছন্দ করো?’ -আমি আরশোলা একে বারেই পছন্দ করিনা বাবা।’ বাবা বললো –“ ঠিক আছে। আমি খারাপ লোক অপছন্দ করি। কালই আমাদের দোকানে লিখে দিবো ‘খারাপ লোক আর আরশোলাদের প্রবেশ নিষেধ। ঠিকাছে!’ এভাবেই ছেলের জীবনটাকে সামাজিক কুলুষ থেকে দূরে বিশুদ্ধ, বিউটিফুল রাখতে চায় বাবা। কত টুকু পারে সে!
ঐ বছর অস্কারে টাইটানিকের জয়জয়কার ছিলো। তবে সেরা অভিনেতার পুরষ্কারটি নিয়ে নেন রবার্টো বেনিগিনি গুইডো চরিত্রের জন্যে। তিনিই পরিচালক।সাদামাটা হাস্যরসে ভরপুর নিম্নবিত্ত ইহুদি গুইডো আর উচ্চবিত্ত ডোরার ঘরে আসে ছেলে যশোয়া।এর মাঝে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ। যশোয়ার চতুর্থ জন্মদিনে বাপ বেটাকে আর্মি ধরে নিয়ে যায় জার্মান কন্সেন্ট্রেসন ক্যাম্পে। ইহুদি না হয়েও মা ডোরা স্বেচ্ছায় উঠে পড়ে সেই নারকীয় ট্রেনে। ছেলেকে শুধু বাঁচিয়েই রাখা নয়, তার মনের উপরও ক্যাম্পের কর্কশ কদাকার, ভয়ঙ্কর পরিবেশের কোন চাপ যেন না পড়ে সেই পথ খুঁজতে থাকে গুইডো।
জার্মান আর্মির কাটখোট্টা নির্দেশ গুলো ভুয়া দোভাষী হয়ে গুইডো ছেলে ভুলানো কথায় ইতালিয়ান ভাষায় অনুবাদ করে দেয়। যশোয়াকে বুজায় এখানে যা চলছে সবই একটি কঠিন খেলার অংশ। প্রত্যেকটা কাজে সেরা জন পয়েন্ট পাবে। ১০০০ পয়েন্ট হলে চ্যাম্পিয়ন! তখন একটা সত্যিকারের ট্যাঙ্ক পুরস্কার পাবে তারা। ছেলের আবার ট্যাঙ্ক খুবই পছন্দের। যশোয়ার জন্যে যুদ্ধ হয়ে যায় খেলা। কন্সেন্ট্রেসন ক্যাম্প বনে যায় যেন তার সামার ক্যাম্প!
তাই পুরো ক্যাম্পে দুটো মাত্র হাসি মুখ দেখা যাচ্ছিলো, গুইডো আর যশোয়ার কাছে। মুভির প্রথমাংশে গুইডোর হাসিতে আপনিও হাসবেন।দ্বিতীয়াংশে তার হাসি বুকের কোথায় যেন চিন চিনে ব্যাথা তৈরী করবে। প্রচন্ড পরিশ্রমের পর রুমে ফিরলে লুকিয়ে থাকা যশোয়া ঝাঁপিয়ে পড়ে বাবার কোলে। দু পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে গুইডোর। তবু সে খাবার লুকিয়ে আনে, কৌশলে যশোয়াকে ভিড়িয়ে দেয় সুবিধা প্রাপ্ত ছেলে-মেয়েদের মাঝে। যখন যেই বিপদ আর সুবিধা আদায় প্রয়োজন তখন সেই অনুযায়ী খেলার নিয়ম বদলে দেয় গুইডো। ছেলের মনে সন্দেহ হলেই আবার কিছু বলে তা দূর করতে থাকে।
শেষ পর্যন্ত এই ছেলে ভুলানো খেলা গুইডোকে কত দূর টিকিয়ে রাখে, ডোরা আর যশোয়াকে সে কত টুকু রক্ষা করতে পারে জানার জন্যে দেখতে হবে লাইফ ইজ বিউটিফুল। বাবা গুইডো যশোয়াকে যেমনটা দেখাতে চেয়েছিলো সে কি লাইফটাকে তেমনটাই বিউটিফুল দেখে?