বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
লাইভ ফ্রম ঢাকা: অস্থির সময়ের গল্প

সাইদূর বিপু: এই মার্ভেল সিনেম্যাটিক ভিভিএক্স, সিজিআই এর যুগে পঞ্চাশ দশকের সাদাকালো ফরম্যাটে বানানো সিনেমা কেন দেখতে যাবো? নিদেনপক্ষে অন্তত একটা স্টারকাস্ট তো থাকবে! তার উপর আবার ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম মেকারের সিনেমা। এই রিলেটেড আরেকটু বলি তাহলে! সিনেমায় কোন অতিরিক্ত লাইট পাবেন না, না পাবেন কোন ওয়াইড লেন্সে কিংবা ড্রোনের শট। মাত্র একটা পঞ্চাশ এমএম লেন্স আর একটা ডিএসএলআর দিয়ে বানানো হয়েছে এই সিনেমা। সিনেমায় যে গান নেই সে তো ট্রেলার দেখেই বুঝেছিলেন কিন্তু জেনে অবাক হবেন, সিনেমায় নেই কোন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও!
সিনেমার শ্যুটিং এর সময় আশেপাশে যে সাউন্ড ছিলো তাই দিয়েই বানানো এই সিনেমার শব্দশৈলী। তবে এতো দুর্দান্ত ভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে মাঝে মাঝে আপনার মনে হবে এডিটিং করে বসানো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও বোধহয় এতো ভালো হতে পারতো না। আপনি যখন কোন গল্প বলতে যাবেন তখন আপনার মধ্যে পরিমিত বোধ থাকাটা খুবই জরুরী। একটা কথা তো আপনি মানবেন তা হলো, সবাই গল্প বলতে পারে না কিংবা সবার গল্প শুনতেও ভালো লাগে না। কারন, গল্প বলতে গেলে কোথায় থামতে হবে, কোথায় সামান্য বিরতি দিতে হবে কিংবা কোথায় ঝড়ের গতিতে চলতে হবে এইসবই জানা লোক খুব কম পাওয়া যায়। পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ খুব সম্ভবত এই পরিমিত বোধের সংজ্ঞা টা নিজের মধ্যে ধারণ করেছিলেন বেশ ভাবেই।
কারন তিনি যে গল্প বলতে চেয়েছেন কিংবা দেখাতে চেয়েছেন তাতে কিন্তু তিনি সফল। তিনি তার গল্প কে দর্শকের মাঝে পৌছে দিয়েছেন। কারন অন্তত দুই তিন জায়গায় আপনার দুই হাত অটো চলে আসবে হাততালি দেয়ার জন্য। একটা সিকোয়েন্স এর কথা বলি! ১. রাস্তায় ছাত্র নামধারী কিছু বিপথে যাওয়া যুবক সমাজ মশাল মিছিল করতেছে। রাস্তায় যে গাড়ি পাচ্ছে সেটাই পুড়িয়ে দিচ্ছে। এমন সময়ে একজন মানুষ তার প্রিয়জনের সাথে দেখা করার জন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলো কিন্তু পথিমধ্যে ছাত্র রাজনীতির শিকার হয়ে তার গাড়ি। গাড়ি টা পুড়িয়ে ফেলে। মানুষটা কোনমতে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে এবং ফিরে যাওয়ার সময় দেখে খানিক দুরেই দুজন পুলিশ তাদের গাড়ি থামিয়ে সারা মুখে মাফলার পেচিয়ে গল্প করছে যেনো তারা কিছুই দেখে না শোনেনি অথচ তাদের যে দায়িত্ব, অরাজকতা থামানোর কোন চেস্টাই করছে না! আরেকটা মজার ব্যাপার হলো নেতৃত্ব দিয়ে গাড়ি পোড়ানোর দলে যে ছেলে ছিলো সে ঐ গাড়ির মানুষের ছোট ভাই! এই সিকোয়েন্স টা শেষ হতে ১ থেকে ১.৫ মিনিট সময় লাগে খুব বড়জোর। যদি এক দেড় মিনিটের মধ্যে একটা দেশের ছাত্র রাজনীতি কেমন, এই দেশের পুলিশের ভুমিকা কি, তাদের নীরবতা এবং দিনশেষে অন্যায়কারী শুধু যে অন্যের ঘরের ছেলে মেয়ে করে তা কিন্তু না। এইসব ব্যাপার গুলো একদম চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার কাজটা এতো সুচারু ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় যা দেখে আপনার মধ্যে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যেতে বাধ্য।
আমাদের দেশে সিনেমার পরিচালকদের ভালো সিনেমা বানানোর কথা বললেই সবার আগে বলে উঠে বাজেট নাই। বাজেট ছাড়া কাজ তো এমনই অখাদ্য হবে। আমি তাদের আবারো বলতে চাই এই যে লাইভ ফ্রম ঢাকা সিনেমার বাজেট কত জানেন? সর্ব সাকল্যে ১৬ লাখ টাকা। মাত্র এই কয়েকটা টাকা দিয়ে যদি একটা দুর্দান্ত সিনেমা বানিয়ে বাইরের বিভিন্ন প্রতিথযশা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল গুলো তে হালি হালি পুরস্কার বাগিয়ে নিতে পারে তাহলে আপনাদের তো এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বাজেট ধরিয়ে দেয়া হয়, স্টারকাস্ট নিয়ে কেন একটা ভালো কিছু উপহার দিতে পারতেছেন না? তাহলে সমস্যাটা নিশ্চয়ই বাজেটে না সেটা তো পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ দেখিয়েই দিলো।
সমস্যা অন্য জায়গায়- সেটা নিয়ে না হয় আরকদিন বলবো। এতো সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এতো দুর্দান্ত সিনেমা, এতো পুরস্কার তবে এই দেশে এই সিনেমা মাত্র একটা সিনেমা হলের প্রতিদিন তিনটি করে শো পায় সেটাও মাত্র দুই দিনের জন্য। তার মানে আজকেই শেষ সুযোগ এই সিনেমা দেখার জন্য!!! মাটির প্রজার দেশের সময়ও এমনই হয়েছিলো কিন্তু আমরা আপনার চাইলে এই সিনেমা সবার দেখার সুযোগ করে দিতে পারি যদি সবাই মিলে এই সিনেমা দেখতে যাই। তখন বাধ্য হয়েই হল মালিক শো বাড়াতে বাধ্য হবে। অনেকেই আফসোস করেন এখনো মাটির প্রজার দেশে দেখতে পারেননি বলে। নিজের আফসোসের খাতায় আরেকটা সিনেমা ঢোকার আগেই দেখে আসুন লাইভ ফ্রম ঢাকা।