বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
শুধু নারীদের নিয়ে যেসব ব্যান্ড

মৃন্ময়ী মোহনা: বাংলা ভাষার সৌন্দর্যের কথা সর্বজন বিদিত। বাংলা ভাষার গানগুলোর মধ্যে তাই পাওয়া যায় আলাদা এক মাদকতা। রবীন্দ্র, নজরুল, লোকগীতি, জারি,সারি, ভাটিয়ালি….আরো কতোরকম গান সারাজীবন ধরে আমাদের মানসিক শান্তির খোরাক হয়ে আসছে, তা বলাই বাহুল্য। এসবের সাথে সাথে ব্যান্ড সঙ্গীতেও বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে বহুদূর।
রক, পপ, লোক,মৌলিক প্রভৃতি দিয়ে ব্যান্ডগুলো বাংলার শিল্প -সংস্কৃতিকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে অনেক সুপরিচিত, জনপ্রিয় নারী কণ্ঠশিল্পী থাকলেও ব্যান্ড সঙ্গীতের জগতে ততোটা নয়। নারীপ্রধান ব্যান্ড ( লালন, বর্ণমালা, চিরকুট, বাংলা ব্যান্ড, রেশমি ও মাটি প্রভৃতি) কিছু থাকলেও সকল নারী সদস্য বিশিষ্ট ব্যান্ডের অপ্রতুলতা চোখে পড়ার মতো। দেশের পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, সমাজব্যবস্থা – যেকোনো কারণেই হোক ব্যান্ড সঙ্গীতের জগতে নারী ব্যান্ডের আনাগোনা খুবই কম। আসুন জেনে আসি শুধু নারীদের নিয়ে চারটি ব্যান্ড সম্পর্কে।
ব্লুবার্ডস: ইতিহাস বলে, এই ব্যান্ড সঙ্গীতের জগতে প্রথম আলোর মশাল হয়ে আসে নারী ব্যান্ড ‘ব্লুবার্ডস।’ এর আগে বাংলাদেশে প্রথম কোনো ব্যান্ডে ‘নারী ড্রামার’ হিসেবে আবির্ভুত হন জর্জিনা হক। মুক্তিযুদ্ধের পর ‘স্পন্দন’ ব্যান্ডের ড্রামার হয়ে বাজিয়েছেন তিনি। তবে, পুরোদস্তুর ‘নারী ব্যান্ড’ এর যাত্রা আরো অনেক পরে- ‘ব্লু বার্ডসের’ মাধ্যমেই। বিশিষ্ট সঙ্গীতানুরাগী জ্যাকব ডায়াসের একান্ত উৎসাহ আর অনুপ্রেরণায় গড়ে ওঠে এই ব্যান্ড। ভোকাল থেকে শুরু করে কী-বোর্ড, ড্রাম, বেইজ গিটার, লিড গিটার বাজানো-সবই নারী। নব্বইয়ের দশকে চট্টগ্রামে গড়ে ওঠে ব্যান্ডটি। ৯ নারী সদস্য বিশিষ্ট এই ব্যান্ডটির প্রথম অ্যালবাম বাজারে আসে ১৯৯৫ সালে। যার নাম ছিলো, ‘সৈকতে একদিন।’ বাংলাদেশের প্রথম নারীদের ব্যান্ড হিসেবে তাদের অনেক পরিচিতি হয়। তবে এখন এই দলের কার্যকারিতা তেমন চোখে পড়েনা।সর্বশেষ ২০১৭ সালে ‘আবার’ নামের একটি মিক্সড অ্যালবামে তাদের একটি গান পাওয়া যায়।
টুইঙ্কেল: ব্যান্ড সঙ্গীতের রাজ্যে নারী সদস্যের ব্যান্ড হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে, ‘টুইঙ্কেল’ নামটি। ২০০৮ সালে যার আবির্ভাব।মৌলভিবাজারের পাঁচজন স্কুল পড়ুয়া স্বপ্ন সারথী গড়ে তোলে এই ব্যান্ড। তবে পড়াশোনার চাপ, বয়স ইত্যাদি কারণে অচিরেই বন্ধ হয়ে যায় এর প্রবাহ।
আঁচল: ২০১৫ সালে একই সঙ্গীত গুরুর কাছে অণুপ্রেরণা পেয়ে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করে ‘টুইঙ্কেল’ ব্যান্ডটি। নতুন ব্যান্ডের নামটি ছিলো ‘আঁচল।’ এই ব্যান্ডের কার্যক্রম এখনো চলমান।
এফ মাইনর: সকল নারী সদস্য বিশিষ্ট প্রথম আদিবাসী ব্যান্ডের নাম এফ মাইনর। মূলত মান্দি সম্প্রদায়ের কয়েকজন সঙ্গীতপ্রেমীদের পরিশ্রম আর ভালোবাসার ফসল এই ব্যান্ডটি। ব্যান্ডের মোট সদস্য ৫ জন। অচিরেই তাদের একটি অ্যালবামও বাজারে আসবে। ‘সঙ্গীত’- শিল্পজগতের সবচেয়ে প্রচলিত ধারার একটি। নানা রূপের নানা গান আমাদের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হওয়ার পাশাপাশি মনের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। বৈচিত্র্যময় এ সঙ্গীতজগতে নারী ব্যান্ডের সংখ্যাও এখন অনেক। খুব দূরে যেতে হবেনা, পশ্চিমবঙ্গেও এখন অনেক নারীদের ব্যান্ডেগুলোর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তবে, আমাদের দেশের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি বড্ড হতাশাজনক। ব্যান্ড সঙ্গীতের আরো প্রসার ও প্রচারে তাই নারী শিল্পীদের এগিয়ে আসা সময়ের দাবি!