বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
সংগীতের ইতিহাসে কালজয়ী চার গীতিকার

মাহমুদুর রহমান: গান ভালোবাসে না কে? এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই কঠিন। কিন্তু আমরা গানের ক্ষেত্রে সামনে দেখা গায়ক গায়িকাকেই মনে রাখি। অথচ একটা গান তৈরি হয় অনেক মানুষের পরিশ্রমে। আর সে তালিকায় প্রথমেই থাকেন গীতিকার। আজ আমরা সেই গীতিকারদের সম্পর্কেই জানবো।
সলিল চৌধুরী: সলিল চৌধুরী কেবল একজন গীতিকার নন। তিনি কবি, সুরকার। কাজের মাধ্যমে পৌঁছেছেন কিংবদন্তীর কাতারে। বাংলা, হিন্দি, মালায়লাম, তেলেগু, তামিল সব ভাষার গানের সঙ্গে তার কাজ করা হয়েছে। সলিল চৌধুরীর জন্ম ১৯২৫ সালের ১৫ নভেম্বর দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায়। ১৯৪৪ সালে কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রভাবে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনে যোগ দেন। এবং গণসংগীত লেখার মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু। পরবর্তীতে বনে গেছেন ভারতীয় গানের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৫৩ সালে ‘দুই বিঘা জমি’ সিনেমা থেকে তার জয়রথ শুরু হয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, মুকেশ, মান্না দে সকলেই কোন না কোন সময় সলিল চৌধুরীর লেখা গান কিংবা সুরে গেয়েছেন। ‘আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা’, ‘না যেয়ো না, রজনী এখনও বাকি’, ‘ম্যায়নে তেরে লিয়ে’ এমন কতো গানের স্রষ্টা তিনি, লিখে শেষ করা যাবে না।
পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়: সলিল চৌধুরীর কাছাকাছি সময়ের আরেক চমৎকার গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৩৪ সালে হাওড়ায় জন্ম তার। ভারতীয় বাংলা গানে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। কাজ করেছেন লতা মঙ্গেশকর, মান্না দে, হেমন্ত, সতিনাথ, আরতি মুখোপাধ্যায় প্রমুখের গলায় তাঁর লেখা এবং সুর করা গানে বাঙালি আজও মুগ্ধ হয়। ‘শঙ্খবেলা’ সিনেমায় লতা-মান্না দে-র ডুয়েট ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’, লতার গলায় ‘আজ মন চেয়েছে’ এখনও জনপ্রিয়। ‘আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না’-র মতো গানেরও স্রষ্টা তিনি। মানবতাবাদী গানেও তিনি ছিলেন অগ্রণী। অথচ তাঁর শেষ পরিণতি বর করুণ। ১৯৯৯ সালে একদিন লঞ্চ থেকে হুগলী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার: বাংলা গানের ইতিহাসে তাঁর নাম লেখা থাকবে শেষ পর্যন্ত। কিছু না কেবল ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ লেখার জন্যই তিনি বেঁচে থাকবেন বাঙালীর মনে। বাচ্চু ডাকনামের মানুষটির জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুরে। দেশ বিভাগের কারণে তিনি চলে যান কলকাতায়। বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানীর সন্তান গৌরিপ্রসন্ন হয়ে গেলেন গীতিকার। লিখলেন ‘এই মেঘলা দিনে একলা’, আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘কেন দূরে থাকো’ এর মতো জনপ্রিয় সব গান। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি লিখেছেন ‘মা গো ভাবনা কেন?’, শোন একটি মুজিবরের কণ্ঠে ধ্বনি’-র মতো গান। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেওয়া হয়।
কাওসার আহমেদ চৌধুরী: নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর গলায় ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে’ শুনে অনেকেরই মনে বিরহ বেদনা আসে। আইয়ুব বাচ্চুর ‘এই রুপালী গিটার ফেলে’, কুমার বিশ্বজিতের ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, লাকি আকন্দের ‘আমায় ডেকো না’-র মতো আমাদের প্রিয় সব গানের স্রষ্টা কাওসার আহমেদ চৌধুরী। প্রথম আলোয় রাশিফল লেখা ‘বিখ্যাত’ এই জ্যোতিষী, গীতিকার হিসেবে অসামান্য। ১৯৪৪ সালে জন্ম নেওয়া কাওসার আহমেদ ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের পক্ষে গোয়েন্দা হিসেবেও কাজ করেছেন।