জাতীয়হোমপেজ স্লাইড ছবি
সঞ্জীব আমাদের হৃদয়ে চিরঞ্জীব

ইলিয়াস কামাল রিসাত: আমার এক মামা প্রতিবার ছুটি শেষে কক্সবাজার থেকে ড্রাইভ করে চট্টগ্রাম পৌঁছে দিয়ে আসতেন আমাকে। তিনি গান শুনতেন শ্রীকান্তের, আমি দলছুটের। দলছুট মানে বাপ্পা-সঞ্জীব। বাপ্পার মেলোডিয়াস কন্ঠ, সাথে সঞ্জীবের প্রবাদপ্রতীম গানের কথা, দরাজ গলা আর অনন্য ব্যক্তিত্ব।
‘আগুনের কথা বন্ধুকে বলি
দুহাতে আগুন তারও
কার মালা হতে খসে পড়া ফুল
রক্তের চেয়েও গাঢ়!’
প্রিয় কামরুজ্জামান কামুর এই কথাগুলো সঞ্জীবের কন্ঠের জন্যই যেন অক্ষরস্রষ্টার বাণী হিসেবে নাজিল করেছিলেন। গান শেষ হতেই মামা টিটকারি দিয়ে বলতেন ‘এই গানের কি অর্থ? কোন অর্থ আছে?’
১৪-১৫ বছরের ফটিকের বয়সী আমি জগতে অগ্রহণযোগ্যের মতই কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে ভাবতাম কি হতে পারে এর অর্থ!
এস এস সি পরীক্ষার আগে এক ছুটিতে ঢাকায় গেলাম কোচিং করতে। ঢাকার আনাচে কানাচে ঘুরে ফিরে শুধুই দলছুট-সঞ্জীবের সিডি কালেক্ট করতাম। তখনই বের হল সঞ্জীবের একক এলবাম ‘স্বপ্নবাজি’।
‘কথা বলব না আগের মত
কিছু নেই’
২০০৭ এর ১৯ নভেম্বরের কথা আগে থেকেই সঞ্জীব এই গানে বলে রাখলেন যেন। বাপ্পা সঞ্জীবের একসুরে ‘আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছিল চাঁদ’ গান দিয়ে কত অধম প্রেমহীন কিংবা অজস্র প্রেমের চিঠি লিখত তা তখনকার মৃতপ্রায় ডাকপিয়ন বলে দিতে পারে চাইলে।
সঞ্জীব এনালগ ও ডিজিটালের মাঝামাঝি সময়ের ডাকপিয়ন। তার গানের কথা কিংবা ঢং এর যে নিজস্বতা তা ডিজিটাল সিনথেসাইজারে আঁটা যাবেনা বোধ হয়।
‘যাই পেরিয়ে এই যে সবুজ বন
যাই পেরিয়ে ব্যস্ত নদী অশ্রু আয়োজন’
গানের সাথে কবিতার জম্পেশ প্রেম সঞ্জীবেই হয়তো সবচেয়ে ভালভাবে ধরা গিয়েছিল। যেটা শিরোনামহীন কিছুটা পেয়ে থাকতে পারে।
‘এই নষ্ট শহরে নাম না জানা
যে কোন মাস্তান’
হারিয়ে যাওয়া এই সামগ্রিকতা, আমরা সবাই পাড়ার মাস্তান সঞ্জীব দা’র সাথে- এই আমরা ঐ গানের সাথেই বিদায় নিয়েছিল।
সঞ্জীব আমাদের অনেক কিছুরই শেষ চিহ্ন এঁকে দিয়ে গেছেন গানের কথায় কিংবা সুরে। সেজন্যই ১৯ নভেম্বর কেউ ভুলতে পারেনা। তাকে ছাড়া রাত্রিগুলো বড্ড দীর্ঘতর হতে থাকে।
‘আমি তোমাকেই বলে দেব
কি যে একা দীর্ঘ রাত
আমি হেঁটে গেছি বিরান পথে’
আমাদের উন্নাসিক প্রিয় হিমুও কি ফিরে আসেনা সঞ্জীবের ডাকে? কান্নার রঙ খোঁজার মত অর্থহীন সৃষ্টিশীলতায় মেতে উঠে বারবার।