খেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
সব হারানোর টেষ্টেও আছে ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা

মঞ্জুর দেওয়ান: এক টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যানের শতক। তামিম ইকবালের ১২৬, সৌম্য সরকারের ১৪৯ আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১৪৬; তারপরও বাংলাদেশের হার। শুধু কি হার; ইনিংস ও ৫২ রানে হারার লজ্জাজনক হার! যার শুরুটা হয়েছিলো নিউজিল্যান্ডের দেয়া ৭১৫ রানের পাহাড়সম ইনিংস ঘোষণার পর। পাহাড়সম রানের কাছে বাংলাদেশ যে কাকতালীয় কিছু করতে পারবে না সেটা অনুমিত ছিলো আগেই। তাই লক্ষ্য ছিলো ইনিংস ব্যাবধানে হার এড়ানোর। কিন্তু সে আশার গুড়েও বালি দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। কিউই বোলিং তোপে ইনিংস ব্যাবধানে হারার লজ্জা এড়াতে পারেনি টিম বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে কাগজে কলমে বাংলাদেশ হয়তো ইনিংস এবং রান ব্যাবধানে হারার লজ্জা নিয়ে মাঠ ছেড়েছে; কিন্তু প্রাপ্তির জায়গাটাও কিন্তু কম নয়। ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশের যে চিরাচরিত অভিযোগ সেটা অনেক খানিই হয়তো ঘুচবে এই ইনিংসের বিবেচনা করলে।
প্রথম ইনিংসে তামিম ইকবালের ব্যাট হেসেছে। ১২৮ বলে ১২৬ রানের ইনিংস দেখে কে বলবে, তামিম টেস্ট ম্যাচ খেলছে! সাদা পোশাক না দেখলে বুঝার উপায়ই ছিলোনা তামিমের ফরম্যাট! ২১ চার আর এক ছক্কায় তামিমের ১২৬ রানের ইনিংস ছিলো চোখে লেগে থাকার মতো। তামিমের সঙ্গী হিসেবে সাদমান ইসলামকে পাঠানো হলেও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। হতাশ করেছে মুমিনুলও। ধরে খেলার ইঙ্গিত দিয়ে ৪৬ বলে ১২ করে ফিরেছেন তিনি। মিডল অর্ডারের অবস্থা ছিলো আরও তথৈবচ! এক তামিম বাদে ৩০ এর কোঠায় পৌছাতে পারেনি কেউই। ২৩৪ এ অল আউট হবার পর কেবলই হতাশা! কিউইদের একক আধিপত্যে বাংলাদেশের পজিটিভ কিছু খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। অনেকটা সাগরের বুকে সুঁই খোঁজার সামিল! ৭১৫ রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে টাইগাররা। মেহেদি মিরাজের ওপর ভরসা রেখে স্পিন আক্রমণ চালানো ছিলো ব্যর্থতার আরেক নাম। ৪৯ ওভার বল করে ২৪৬ রানের কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছেন মিরাজ। নামের পাশে মাত্র দুই উইকেট! বোলিং-ফিল্ডিংয়ে সফলতার লেশমাত্র নেই । কিউইদের হয়ে প্রথম তিন ব্যাটসম্যান করেছেন ৪৯৩ রান ! যার মধ্যে ছিলো কেন উইলিয়াসনের অপরাজিত জোড়া শতক। টেস্ট ক্রিকেটে ডি গ্র্যান্ডহামের ৫৩ বলে ৭৬ রানের ঝড়ো ইনিংসও ’গলদঃকরণ’ করেছে মাহমুদুল্লাহর দল। গতকাল থেকে ইনিংস ব্যবধানের যে লজ্জা চোখ রাঙ্গানি দিচ্ছিলো তার বাস্তবায়ন হয়েছে আজ সকালে।
যদিও অনেকে ভেবেছিলেন, প্রথম সেশনেই ব্ল্যাক ক্যাপ মোড়কে প্যাকেট হবে টাইগাররা। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ আর সৌম্য সরকার তা হতে দেননি। ২৩৫ রানের দুর্দান্ত জুটির কল্যাণে বাংলাদেশকে শেষ সেশন পর্যন্ত টানতে সক্ষম হয়েছিলো এই দুই ব্যাটসম্যান। সকালের ঘুম মাটি করে খেলা দেখতে বসা দর্শকদের যে উষা জাগরণ সার্থক হয়েছে সে কথা অবলীলায় বলা যায়। চার উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করেছিলো বাংলাদেশ। খাদের কিনারা থেকে এমন প্রত্যাবর্তন নিঃসন্দেহে প্রশংসা পাবার দাবীদার। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩০৭ রানে পিছিয়ে থেকে চতুর্থ দিন শুরু। হাতে ৬ উইকেট। সাথে আবার প্রথম সেশনে উইকেট হারানোর ’জুজু’। এমন অবস্থায় দিন শুরু করা বাংলাদেশের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জিং তা হয়তো ভেঙ্গে বলার অবকাশ রাখেনা। তারপরও বাংলাদেশের হয়ে প্রতিরোধ গড়েছেন রিয়াদ-সৌম্য। প্রথম সেশনে এই দুই জুটির ব্যাটিং দৃঢ়তায় কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। বরং ওভারপ্রতি গড়ে ৪.৬৯ করে রান তুলেছেন!
ব্যর্থ বাংলাদেশের দুই প্রান্ত আগলে রিয়াদ-সৌম্যের ব্যাটিং নৈপু্ণ্য দেখে মনে হচ্ছিলো নিউজিল্যান্ডকে আবারও ব্যাটিংয়ে পাঠাবে বাংলাদেশ! কিন্তু সে সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নেয়নি। দলীয় ৩৬১ রানের মাথায় সৌম্য সরকার আউট হলে, আসা যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন লিটন দাশ, মেহেদী মিরাজ, আবু জায়েদ, ইবাদতরা। ৪২৯ রানে মাহমুদুল্লাহ আউট হলে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস ব্যবধানে না হারার মিশন! তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয়টি শুরু হবে ৮ই মার্চ। হ্যামিল্টন ছেড়ে বাংলাদেশ যাবে ওয়েলিংটনে। বেসিন রিজার্ভের ভেন্যুতে বাংলাদেশ কেমন করবে সেটা সময়ের হাতে তুলে দেয়া ছাড়া বিশেষ কিছু করার নেই। তবে হারকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ যে ভালো শুরু করবে এমনটা আশা করাই যায়। সাকিব-মুশফিক ছাড়া প্রথম টেস্ট প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। তবে হ্যামিলটনে তামিমের ব্যাটের হাসি আশা জাগাচ্ছে বাংলাদেশকে মাহমুদুল্লাহ-সৌম্যের নির্ভার জুটি ওয়েলিংটনে গেলে বাংলাদেশ পেতে পারে অনন্য কিছু। দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশে ব্যাটিং স্তম্ভ মুশফিককে পাচ্ছে টাইগাররা। তাই কিউই নামক ‘চোরাবালি’তে বাংলাদেশ পেতে পারে এক টুকরো মাটির আশ্রয়! যে মাটিতে লিখতে পারে নতুন ইতিহাস। আর যে ইতিহাসের সাক্ষী হতে প্রভাতের নিদ্রা ভাঙ্গতে কার্পণ্যতা করবে না কোটি ভক্ত!